অচিন্ত্য রায়ের গুচ্ছকবিতা
কাঁদকাট
সৎকার করে ফিরতে দেরি হলে
মা-রেকাবিতে সাজিয়ে রাখে
ঘুঁটের ছাই, নিমপাতা।
আমি পুকুরে ডুব দিয়ে উঠি
গামছা, জামাকাপড়ে লেগে থাকে
অশৌচের দাগ।
নিমপাতা খুঁটে, ঘুঁটের আঁচে হাত শেকে
মুছে যায়— দোষ, অশৌচ।
শুধু শরীর জুড়ে লেগে থাকে
মৃত, পোড়া শবদেহের গন্ধ।
***
বানানে ভুল
আগামী যতই এগিয়ে আসছে
মানুষের পায়ে, শিকলের শব্দ ক্রমাগত বাড়ছে।
চারদেওয়ালের ভেতর নরখাদক
জনহীন রাজপথে তাদেরই পদচিহ্ন ।
কোথাও কোলাহল নেই
পৃথিবী ফ্যাকাসে বাসি ফুলের মতো
মৌমাছির বিফল ফিরে যাওয়ায়
কারা যেনও মৃত্যু লিখে গেছে…
যেখানে অজস্র বানান ভুল।
***
আমাদের হারজিত
নিশুতি রাত থেমেছে জোনাক, ব্যাঙ ডাক
চাঁদের আলো রোয়া ধানের জলে খলছে
শিশুর মতো নরম চরণ।
দুলতে দুলতে আমাদের বাঁশবনে
ঘুঘু শাবকের দিকে এগিয়ে চলেছে…
ঘুম আসেনি, ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
জিতবই, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেমেছি।
হঠাৎ কলম ঘুমিয়ে পড়ল, জেগে উঠল বললাম
পুকুরের জলে খয়রা মাছেদের
গেঁথে রাখছে খালুইয়ে।
হেরেই গেলাম, কবে জিতব, দেশ কী জানে?
***
দৃশ্যান্তর
রাতের পেঁচা মৃত তালগাছে জেগে ওঠে
প্রহর আমাকে সংস্কার শেখায়
নাদুদের পোস্তায় কাঁদে বেড়াল
ওসব অশুভ লক্ষণ দাদিআম্মা বলে—
হাজার গোঙানির পরে রাত হেঁটে যায়
কৃষ্ণচূড়া বনের দিকে, বাদুড়ের চোখ খোঁজে গুহা
যেখানে মানুষের বাচ্চারা রক্তে মুখ ঘষে
পচা মাংস নিয়ে চালায় টানা-হ্যাঁচরা।
***
চাষী
পৃথিবী চেনার অনেক বাকি
আসলে আমি যে চাষী…
বিড়াল গলা পাট।
মশা গলা শন।
হাতি গলা তিলের
প্রবাদ নিয়ে মাটির শ্রেণিকক্ষে
নিজেকে অহরহ উর্বর করি।
তবুও জখম চিনতে পারি না
বুকে রোদ্দুরের শাসন নিয়ে—
পোড়া প্রদীপের পলতের মতো ঘর ফিরি, গোধূলির অকালমৃত্যু মেখে।
***
শত্রু বলতে বোঝায়
খোলসের আঁশের মতো ঝুলে আমাদের কোলাহল
বন্য মেঘ তরবারি শানিয়ে গেল
অন্ধকারময় রণকৌশলী চোখে।
ফর্দের পাতা ঝড়ে উড়ে যাওয়ার পর
লম্ফের উলঙ্গ শরীর জ্বলে খরিসরঙে
মেয়েটার নরম দেহে বিষাক্ত অভিনয়
ডটপেনের কালির মতো ঝকঝকে।
তার কাছে অধিকার মানে রাজনীতি
গ্রেফতার কোন ইস্যু নয়।