লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বইমেলার ডায়েরি: সেলিম মণ্ডল

১১/০২/১৯

শেষ রবিবার। ভিড় হবে এমনটা আশাই ছিল। তারপর সরস্বতী পুজো, যাকে বলে বাঙালির ভ্যালেন্টাইন। চারিধার লালা-নীল-হলুদ শাড়ির ভিড়। সকালে কৌস্তভের বাড়ির প্রসাদ খেয়ছি ঠিকই কিন্তু এত সরস্বতী দর্শন হবে ভাবিনি। সবাই পট ছেড়ে ময়দানে? নিজের চোখে কি ঘনঘন ফুঁ দেব?

ক-দিন ধরে অনেকেই অভিযোগ করছেন, সবাই পকোড়া, ফিসফ্রাই খাওয়ার পর একটি ফ্রি বাইবেল নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। গতকাল বেশ লাগছিল। লাল পাঞ্জাবী আর নীল শাড়ির এক কাপল, দু-জনের দু-হাত শক্ত করে ধরা। একহাতে মেয়েটির আইস্ক্রিম ও ছেলেটির অন্যহাতে এক জোড়া বাইবেল। প্যাভিলিয়নের ভিতর দিয়ে হনহন করে সোজা হেঁটে যাচ্ছে। হয়ত, ভুল করে ঢুকে পড়েছে। ভালোবাসার দিনে ভালোবাসার নাগাল না পেলেও যদি তার দর্শন পাওয়া যায় ক্ষতি কী?

পাঠকের ভিড়ও যে ছিল না তা নয়। দিন ঘনিয়ে আসছে। মনখারাপের রিংটোন রিসিভ করতে না চাইলেও রিসিভ হয়ে যাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে শতানীক, ঈশিতাদি, সোহেলদা… আমরাও ফিরে যাব। কিন্তু ফিরে আর যাব কোথায়? ফিরে ফিরেই আসতে হবে বই-ধুলো-মলাটে।

প্রবুদ্ধদা, আমার অন্যতম পছন্দের কবি, প্রথম সাক্ষাৎ হল। এবার পেল উড়ালপুল সম্মাননা। পুরস্কার প্রাপ্তিতে যদিও কিছু যায় আসে না। কবি জানেন। আর আমি এক ফর্মার সিরিজে তাঁর একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে দেখেছি, পাঠক কীভাবে এসে খুঁজে নিয়েছেন বইটি।

ঝুঁকি নিয়ে অনেকগুলো কাজ নামিয়েছি। কতটা কী করতে পেরেছি জানি না। অম্লানদা, সুতপাদির মতো সিনিয়ার বিজ্ঞজনের থেকে প্রশংসা পেলে কার না ভালো লাগে! তবে দুঃখের কি আনন্দের খবর জানি না, বইমেলার দশমদিনের বিকালেই ‘লবণ খেতের জোনাকি’র প্রথম সংস্করণ শেষ। অনেকে না পেয়ে ফিরে গেছে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন আবার কবে পাব… মানুষের ভালোবাসার কাছে তো জয়ী হতে চাইনি কখনো। বারবার হেরে যেতে চাই। এমনভাবে হেরে যেতে চাই যাতে গভীর দাগ থেকে যায়। এমন দাগের সন্ধানে বেরিয়েছি। পথ খুঁজছি। বেশি আলো অন্ধকার লাগে, বেশি অন্ধকার দিশেহারা লাগে। তবু, তবুও হাঁটছি, হাঁটব যতটা পথ মানুষ নিজেই হয়ে যাবে…

Facebook Comments

পছন্দের বই