অমিতাভ মৈত্রের ১০টি কবিতা
সম্পর্ক
খুব ক্লান্ত স্প্যানিশে নৌকাটা তখন বলছিল
গ্লুকোমা আর রক্তচাপে কাহিল সমুদ্রের কথা
যেন লেবু মেশানো কালো চায়ের জীবন ক্রমশ স্বচ্ছ হয়ে উঠছে
অনেকটা পথ দৌড়ে আসার জন্য
ওষুধ কেনার জন্য টাকা চাইছিল কুণ্ঠার সঙ্গে
চোখ নীচু করে
আত্মা ও শরীর
সারাজীবন বেজে যাওয়া ঘণ্টা
আজ নীচু মুখে এসে দাঁড়িয়েছে তার অবসানে
আর তাকে অগ্রাহ্য করে সীমা ছাড়ানো স্পর্দ্ধা নিয়ে
শক্ত ছাই নিজেকে খুলে নিচ্ছে চুরুট থেকে
যাও, বলো
হেনরিরই আছে সেই অনন্য শুদ্ধতা
যার সাথে পেত্রার্কের সনেটের কোনো মিল নেই
রোদ বোকার মতো খড়্গ হস্ত হয়ে উঠেছে ওকে দেখে
এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলো তাকে দুধাপ পিছিয়ে আসতে
আশাবাদী হয়ে লাভ নেই এখানে
এবং অংশীদার হওয়াও যাবে না
জরাথ্রুস্ট বলেছেন
হ্যাঁ, নিকৃষ্ট একজন স্থপতিও ছাড়িয়ে যায়
শ্রেষ্ঠ কোনো মৌমাছিকে
যখন প্রথমে সে বাড়িটা সম্পূর্ণ করে নেয় তার চিন্তায়
তারপর মাটির ওপর তৈরি করে তাকে
কোয়ারেন্টাইন ও হেনরি
যার আবরন নেই হেনরি তাকে নতুন করে
নগ্ন করতে যাবে না
একই সাথে, যে নগ্ন তাকে আবৃত্ত করার চেষ্টাও আর
করবে না সে
দেখা
শেষপর্যন্ত আবার তোমার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হল,
বুড়ো জাহাজ !
মরা কাঠ সাজিয়ে বারো বছর, আমি এজন্যই
তৈরী করেছি নিজেকে
কোন যুগ যুগান্তর ধরে সূর্য
নিজেকে সন্দেহ আর হাওয়াকে অবিশ্বাস করছে
যদি ডুবে যাও জলের অন্ধকারে আমাকেই পাবে
আর তোমাকে দেখতে পাওয়ার চোখ আমার থাকবে
অভিজ্ঞতাবাদ
সাদা আইসক্রিমের সব বুড়োই স্পেন পর্যন্ত গিয়ে ফুরিয়ে যায়
হাত ও হাতকাটা জামা শূন্যে ভাসছে আর চিন্তা করছে পরস্পরের জন্য
এটা অদ্ভুত যে রোদ কোনো বাড়ির বাইরেটাই শুধু
বুঝতে পারে মনে রাখতে পারে
কিন্তু জানে না জলের ওপরের রবিবার আসলে কখনোই কোনো রবিবার নয়
আশ্বাস
বোকার মতো সাদা হয়ে যাচ্ছে তারারা— ওদের বলো, ভয় নেই
আমার মালিক হুস্তো বামব্রিলা এখন চার অক্ষরের মতো ঘুমিয়ে
তারাদের বলো মেঘের গায়ে আর মুখ গুঁজে না থাকলেও চলবে
ব্যাখ্যা নেই— তবু আমার মালিক হুস্তো বামব্রিলা
এখনও চার অক্ষরের মতো ঘুমিয়ে
কুকুর ও ফুটনোট
যখন হঠাৎ একসাথে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ঘোড়াগুলো
তখন ভয় হয়, মায়েস্ত্রোর চিঠি আসবে
মহৎ সেই চিঠির মাথায়
নির্ভুলভাবে জ্বলজ্বল করবে লাল কুকুর
পালা করে ষোলটা পাথর সারাজীবন চুষে যাওয়ার মধ্যে
কোথাও কোনো মহত্ব নেই
কিন্তু ফুটনোট থাকবে, আর তার মাথায় নির্ভুলভাবে
লাল হয়ে জ্বলবে কুকুর
অনুশাসন
যে কোনো ভারী বোমার গায়ে
লম্বা আর হলুদ দাগ দেওয়া থাকে ঈশ্বরের নির্দেশে
আর ঐ দাগের জন্যই সে সবসময়
নিয়ন্ত্রণে থাকে অপেক্ষা করে সীমা ছাড়ায় না