অরিত্র সোমের কবিতা
পিকোসোর মর্গ
শরীর খুঁটে খুঁটে, ইদুরটা চলে গেছে
এইমাত্র
বেলা পড়ে এসেছে— গোটা ঘরটায় এখন
তিন তিনটে
সতেজ, উন্নত ছায়া
উঠোনে— ভাঙা লাঠি
আর একটা উইলচেয়ার
খোলা পড়ে আছে
মাছি উড়ছে
***
সত্যবতী
পাখির ঠোঁটে-পড়া মাছটি
অন্ধকার দেখতে দেখতে
তোমার দিকে চলে যাচ্ছে
তুমি ওর বুক খুলে, তুলে আনো
নাভিমূল— কারা যেন বলে ওঠে
“পিশাচ,
নিজের ঘরকেও ছাড়লি না!”
চোখে জল পেয়ে
মাছটি ছটফটিয়ে ঢুকে গেল তোমার ভেতর
দেখলে, সমস্ত সকাল
আঁশগন্ধে ঢেকে যাচ্ছে
তারপর থেকে, জল পেলেই
তোমার মধ্যে খেলা করে সঙ্গম মাস
***
রক্তবীজ-১
প্রতিটা জানলা বেয়ে, অজস্র পাতা আসে ঘরে
জড়ো হয়
চলেও যায় একসময়— মেনিটির মতো
ঘরে ঘুরে বেড়ায় মর্গের হাওয়া
তার গন্ধ নিতে, নিতে নিতে
দেওয়াল ভরে ওঠে রক্তে
কাশির দমক যেখানে শেষ রাত্রির নিঃশ্বাসের মতো
***
রক্তবীজ-২
তারপর পাগলেরও সাধ হল শেষ হওয়ার—
খানিক ট্রেনে, খানিকটা কাটাকলের পথে ছুঁড়ে দিয়ে
সে দেখে নিতে চাইল পৃথিবীর গন্ধ;
কোনো বৃষ্টি এল না
কোনো শব্দ হল না
শুধু কিছু কুকুর একে অপরের গা শুঁকে
চলে গেল বস্তির জঙ্গলে…
পাগলটা দেখল, তার আশেপাশে
গা বেয়ে উঠে পড়েছে মা-পিঁপড়ে ছেলে-পিঁপড়ে;
ভিতরে ভিতরে চলছে
মাংস খাওয়ার প্রস্তুতি
***
রাত দুটো’র ক্যানভাস
গভীর রাত। মা’র বিছানার তলায় বাঘ ঢুকেছে। মা ফোঁপাচ্ছে। বাঘটাকে দেখব বলে, আমি ঘরে নামলাম। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার— কোথা থেকে একটা লাল আভা সমস্ত প্যাসেজটায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমি শব্দ ধরে ধরে এগোই। পাছে খেই হারিয়ে ফেলি, সেজন্য সাঁকোটার পাশে বেঁধে রেখে আসি রুমাল। আমার বাঘ খোঁজা দেখে, মা নড়ে উঠ। অস্ফুটে কিছু বলল—মধ্যপ্রস্তর গুয়াতেমালায় সেই শব্দ শোনার কেউ নেই। আমাকে এগোতে দেখে বাঘটাও নড়ে উঠল। ফ্যানের আওয়াজ বেড়েই চলেছে— ঘটর ঘটর…
রাতের শেষ কাকটা এতক্ষণে উড়ে গেছে কর্পোরেশনের দিকে। বাঘটাও, হরিণ ধরে, ধীরে ধীরে পার হচ্ছে নদী
মা এখন, রুমাল খুঁজতে বেরিয়েছে
***
সমস্ত বালিয়াড়ির ভেতর
১
অসম্ভব নীলের ভেতর একটা উটপাখি বসে আছে। জামা নেই; জুতো নেই; পালক ছেড়ে রেখে বালিতে নামবে। কালো কালো বালি। কোনও এক অন্ধ মুনির শাপে, উটপাখি চিরপ্রসবা। বালির ওপর হাত পা ছড়িয়ে থাকে ডানাকাটা শিশু। পশ্চিমে বালিয়াড়ি থেকে উঁকি মারে নেকড়ে। হায়না। কালো কালো, শাপগ্রস্ত বালির ভেতর উটপাখি মাথা গোঁজে
পৃথিবীতে শাবক কম পড়ে নাই; কেবল
উটপাখির দৃষ্টিভ্রম হইয়াছিল…
২
সমস্ত বালিয়াড়ির ভেতর একটি নিশ্চিত দুর্গ থাকে। কে এক বুড়ো রোজ ছবি আঁকে; রং করা হাতে পুঁতে দেয় রক্তজবা। কাপালিক মনে করে আমি নগ্ন হই। প্যালেট জড়িয়ে ধরে উচ্চারণ করি জবাকুসুম… ঘনঘোর সেই কথা শুনে সে নীল রং দিয়েছিল। অপরাজিতার বোঁটা থেকে তুলে আনা সদ্য যুবতী। হাতে ধরে তারাদের বুকে বুক মিলিয়ে দিয়েছিলে। ভাঙা বাড়ি, জটিল গাছ… ছেলে মেয়ে দুজনেই আত্মরত। আমাকে ক্ষণিকের জলে চুবিয়ে, তুমি শালা কাপালিক, পর্দা নামিয়েছিলে। রাস্তার মোড়ে, পরের দিন, আমি আলো খেয়েছিলাম। ফোটন কণা, চ্যাপ্টার সাঁইত্রিশ।
তোমার ওভারকোটের পিস্তলে লেগেছিল অপরাজিতার বাসি বোঁটার রং। আমি জানতাম, তুমি কফিনের ছবি আঁকছিলে কাপালিক…