আম্রপালী দে’র গুচ্ছকবিতা
আর্ট
আবেগ নিকানো হয়ে গেলে
ছেলেটি বসে পড়ে কবিতার উপর
আশা করে তারাবাজদের হুজুগ
ঝুলি ভরে দেবে
এক মুঠো সাদাভাত
প্রতিটি চলচিত্র উৎসবে
যেন ফার্স্ট ক্লাস থিম…
সারক্যাজম্
পাখিপড়া করে
ঝোলানো জীবন
আর নলি কাটা দেহ নিয়ে
যে ঘর সৃষ্টি হয়েছে এতদিন
ভোর রাতে
অর্বাচীন ঘুম
সেই ঘরেই স্বপ্ন দেখায়
আমাদের ঘর
একটি ফুৎকারেই
ছাইয়ের মতো
স্বাধীন হওয়ার
অনুশীলনে বসেছে…
মধ্যবিত্ত
আমাদের কোনো মৃত্যু নেই
ঘুমের ভেতরে
এক চিরন্তন
ঘুণপোকা
গুনগুন করে
হুল ফোটায়
মৌমাছির মতো…
মৃত্যু ডুবে গেছে
জানালার পাশে একটু একটু করে
প্রিয় গাছ কেটে নিচ্ছে যারা
তাদের শরীরে লেগে আছে ঘাম
আর ঘামে এঁটে থাকা
মৃত্যু
ডুবে
গেছে
নেশার মতো
মিলিয়ে গিয়েছে
নৃশংস দাগ আঁকা সাদা পোশাকে…
আলো
ঘুম চোখে সারারাত
জেগে থাকি আলোর ভেতর
দেখি, ভেতরে ছটফট করে
এক বীতশ্রদ্ধ কালো দাগ
ছিঁড়ে যেতে চায়—
আলো বাধা দেয়
বুকে পুঁতে দেয়
জ্ঞান-লোহা…
ক্ষুধার পরবর্তী কবিতা কীরকম
গল্পগুলো বিশপের
খাটে শুয়ে আরাম করে
দুঃখিত হয়ে শাসন করতে যাই
দেখি,
কবি উন্মাদের মতো লিখে ফেলেছেন তাঁর
অন্তিম লাইন
দুর্দান্ত চিন্তারা ঘাম প্রসব করে স্বার্থপর হয়ে আসছে
ক্ষুধার পরবর্তী কবিতা আসলে কীরকম?
আমি শুধু খুঁজে পেয়েছি
বুকফাটা আর্তনাদ
শ্যাওলার মতো মিশে যাওয়া
জন্মগত ভয়
খুঁজে পাইনি আবিষ্কার
কিছু স্বপ্নের গাছ
জল খুঁজে না পেয়ে
উঠে আসছে জানালা বেয়ে
শিরার মতো ঢুকে পড়েছে
বুকের ভেতরে…
বনসাই
কিছু লেখা পিঠপোড়া সবজির মতো, খেতে মন্দ নয়, তবুও যেন স্বীকৃতি পেতে চায় না ঠিকঠাক। মাথার ভেতরে শব্দ বলে ওঠে ‘ভগবান উবাচ’। পরবর্তী বিশ্লেষণ জানা নেই, কস্মিনকালে জানবো কিনা ভয়ানক সন্দেহ। আমার কাছে শব্দগুলো পুঁতি দানার মতো, আমি এর সঙ্গে তাকে জুড়ে দেখি একটা মালা। বাজারে শোভা পায় না, বিক্রয় যোগ্য নয় বলে। দূর্গ নির্মাণ হওয়ার আগেই কাচের মতো ভেঙে পড়ে, আঠা লাগিয়ে নিলেই হয়ে ওঠে ঝাপসা। হঠাৎ শুনি, সাড়ে বাইশ টাকার লটারি জিতে গেছি, সঙ্গে কিছু ফ্যাকাসে মুখ, উজ্জ্বল হলুদ রঙের হাসি, একবাটি আঠালো চিনির রস এইসব কিছু। ঠাকুর্দা বিরাশি বছরের প্রাচীন। প্রায়ই বলেন, অনুযোগের উপর মাটি চাপা দিয়ে একটি গাছ গড়াতে, ফুল বাহার দেখাতে এলে সেদিনও চোখের শব্দে হেসো শুধু…