ইন্দ্রনীল ঘোষের কবিতা
খিদে
স্বাধীনতার এত কাছে এসে মনে পড়ল
পকেটে কোনো পতাকাই নেই…
দৃশ্যহীন মানুষের চোখগুলো দখল করছে আমার চোখ—
একটা ছবিতে, আমি ম’রে যাচ্ছি ভরা ধানক্ষেতে
আরেক ছবিতে, ফুটন্ত ভাতের সাথে কথা বলছ তুমি…
***
আচার ও বয়াম
মৃত লেবুর জীবন্ত হয়ে ওঠা দেখি
এ’ আশ্চর্য ম্যাজিক থেকে গড়িয়ে পড়ে নুন…
ডুবতে ডুবতে, দ্রবণেরই টক চাটে দ্রবীভূত
এই শ্লথ, এই দীর্ঘ পতঝর
পতনশীল ঘুম—
যিশুতে পেরেক ঠোকার শব্দ হচ্ছে…
***
উড়োজাহাজ
মিখাইল ব্রাশ করে —
এই আদর গার্গল করা রোদ
দাঁতে আটক গত রাতের মাংস…
যাকে সে প্রত্যহ খায়
সে’ প্রাণীর নামটাই মনে করতে পারছে না মিখাইল
ভোলা মিখাইল
ক্যালেন্ডার ওড়াচ্ছে পৃথিবীর দিকে —
উড়োজাহাজ… উড়োজাহাজ…
দু’ পা ফাঁক ক’রে মুতছে
যুদ্ধ ও শান্তির জটিল ধাঁধায়
ওই মাংস
ওই তার কামড়ের দাগ
সামান্য রোদ পুষেছে তারা নিজস্ব হারেমে —
যেন, ঈশ্বরের জুবান ক’টা বাচ্চা দিয়েছে
ভোরের মিহিন লাগা…
যেন, অনেক উপর দিয়ে পার হচ্ছে উড়োজাহাজ…
***
বুবুন
পৃথিবীর ইতিহাসে একটা গ্লাস
থুতু মুছে তুলে রাখি—
এক পোকা ন’ড়ে ওঠার মতোই এ’ ম্যাজিক
বুবুন খুব ভালোবাসে…
গ্লাসে লেগে থাকা ঠোঁটের ছাপ টুকে
মাছ আঁকে
আমায় নদীর গল্প বলে—
মিছিমিছি জলের এক নদী…
***
আমি, এক গ্যালারি সাজানো লোক
মানুষের পৃথিবীতে আমি শুধু দেখি
কোথাও কোনো ভ্রূণ নেই, বউটা তা-ও কেঁদে চলেছে প্রসব যন্ত্রণা
এই বানানো ও মেকি কবিতার দিকে
কিছু খাবার ছুঁড়ে দিই
ছুঁড়ে দিই খাদ্য ও খাদকের যৌথ ফুলদানি—
ফুলদানি ভেঙে যাওয়ার কষ্টে জল প’ড়ে আছে…
আবদুলের জল ভরতে যাওয়ার পথ,
পথের পাশে বটগাছ
আমি দেখি —
স্বাধীনতার পর পতাকার রং কী হবে
তাই নিয়ে বসেছে আলোচনা…
এমন এক সরোদ বাজলে নেপথ্যে,
মানুষ আমার মন্দ লাগে না—
তার নিঃশ্বাসে বেজুবান আমলকির স্বাদ পাওয়া যায়…