লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অমরশঙ্কর দত্তের কবিতা

লবণ

লবন একটি হ্রদের নাম
লবন একটি সূত্রের নাম
তবু
‘লবণ-রাজত্ব’
মাঝের হাইফেন তুলে নিলে
দু’-ফাঁক হয়ে যায়

সন্ধ্যার ঝুপঝুপে অন্ধকারে
ছন্নছাড়া গ্রামের সড়পে
অনুরূপ এক চিন্তায়

বিব্রত
লবণ
লবণ মাঝি!

***

কৃতজ্ঞতা

কৃতজ্ঞতা তুমি কোন উজ্জ্বল বোধের বস্তু নও
তুমি এক জটিল শৃঙ্খল
দায়ভাগী জানে কি নিষ্ঠুর প্রহসন
তোমাতে সুসিদ্ধ করে গুটিকয় দক্ষ অভিনেতা।

কৃতজ্ঞতা তুমি আমাকে করলে নতজানু
কত-না অলীক স্বপ্নে, আমি মূঢ়মতি
দেখি কৃতজ্ঞতা পাশ চারিদিকে, আমি ক্রীতদাস।

***

আয়োডিন

আমার ঘরের বাতাসে কারা আয়োডিন রেখে গেছে
তারই গন্ধ সর্বত্র এখন, বুকশেলফ ছাইদানি
নির্লিপ্ত বালিশ— পালঙ্কের পা বেয়ে পা বেয়ে
যেন অদৃশ্য মিছিল— গন্ধময়, চরে
যেন লক্ষ্য রাখে এই ঘরের দেওয়াল
পরস্পর সন্দিহান কিনা

মেঝের প্রোথিত সেই পূর্বপুরুষের হাড়
এখনও প্রণম্য ভাবি— নাকি ভালোবাসাময়
হয়ে গেছি
এইসব লক্ষ্য করে শতাব্দীর তীব্র আয়োডিন।

***

একটি দুপুর: কংসাবতী

এখন তুমি যেখান থেকে কথা বলছ অমিয়
অন্যখানে সরে দাঁড়ালে
তুমিই দ্বিতীয় কণ্ঠে কথা বলবে।
আজকের ব্যবহৃত শব্দগুলি সেদিন
কোনো এক
ভাঙাচোরা বিধ্বস্ত বুকের অন্ধকারে
আকস্মিক উত্থিত কঙ্কালের মতো
তোমার সমগ্র সত্তা আচ্ছন্ন করবে;
তুমি দেখবে অমিয়
সজ্জিত শব্দের ভিতরে কোনো শুশ্রুষা ছিল না।

এক অভিজ্ঞতা আশ্রয় দেয় আমাদের
অন্য অভিজ্ঞতায় আশ্রিত ভুমি ত্যাগের নির্দেশ,
তাহলে দুঃখের দূরগামী উৎসের জন্য
আমরা আক্ষেপ করব না আর,
শোকের প্রোথিত শরীর খুঁড়ব না কবরে।

তার চেয়ে এই সব নিমজ্জমান বাড়ি-গ্রাম
পরিত্যক্ত মাঠ, গোচারণভূমি— সাঁওতাল যুবক-যুবতীর
ছিন্নভিন্ন উত্তরাধিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে
এসো অমিয়
আমরা স্ফিতকায় তরঙ্গের মুখোমুখি দাঁড়াই।

***

ঘোড়া ঘাস খায়

শ্রমজীবি মানুষের জীবনের ছটা
কাস্তে ও কোদাল
আঁতেলের নিবের ডগায়
বাল্যকালে পাঠ নিই

ঘোড়া ঘাস খায়
ঘোড়া ঘাস খায়।

ঘোড়ার শখ উবে যায় বলে
আজ কত বিপন্ন মহিষ
হাসপাতালে, রক্ত পুঁজ শোঁকে
মিডিয়াও উপেক্ষা করে তাকে
সেখানে উত্তাল কলস্বর

শবর শবর।

ভারতবর্ষে কত খণ্ড খণ্ড জাতি
উপজাতি
সঠিক জানি না তাদের
পেশা ও জীবিকা
বাল্যকালে পাঠ নিই

চণ্ডালিকা—
চণ্ডালিকা।

***

বিকেলের রোদ

বিষাদ তুমি জাপটে ধরে আছ
চল্লিশ বছর
আর স্বর্ণকমল আর সুপর্ণারা
কেবলই কটাক্ষ করে—
“ওই হাঁটে
পোড়ো জমি
পোড়ো কবি”।

কৃতজ্ঞতা: অনিন্দ্য রায়

কবি পরিচিতি:

(২০/১০/১৯৩৮ — ১৫/০৯/১৯৯৮)

[অমরশঙ্কর দত্ত থাকতেন পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে। সম্পাদনা করেছেন ‘জঙ্গলমহল’ পত্রিকা। প্রকাশিত বই ‘দিনকাল’ (‘তিন ভুবন’ কবিতা সংকলেনের অংশ), ‘ভোটরঙ্গ’ (ছড়া), ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘অন্তরঙ্গ কুঠার’ (গল্প)।

কবিপুত্র সন্দীপ দত্তের সহযোগিতায় কবির কিছু কবিতা এখানে প্রকাশিত হল। ]

Facebook Comments

পছন্দের বই