লেখক নয় , লেখাই মূলধন

ঋক অমৃত’র গুচ্ছকবিতা


নিজের থেকে দূরে যেতে যেতে মনে হয় আয়নার আরও ভিতরে প্রবেশ করছি ক্রমশ। ঠিক যেন সদ্যরচিত গজল;

প্রথম প্রেমের কথা মনে পড়ে, অরুণেশ ঘোষের গল্পের কথা মনে পড়ে, নিজস্ব চাকরির কথা মনে পড়ে…

নিজস্ব চাকরির কথা মনে পড়ে। ব্যস


এই শুকনো সাদা এ ফোর ক্যানভাসে কখনও আমি কাশবন এঁকে ফেলি মনে মনে কখনও বা কাৎলাহার কাঁদরের পার। রোগা বিকেলে খড়ের গাদার পিছনে সূর্যকে লুকিয়ে যেতেও দেখি। শিশিতে মোবিল ঢালার মতন সন্ধে নামে। মাগরিব শেষে মানুষের যন্ত্রণা শোনা যায়। পরদিন ভোরবেলা সায়া ঠিক করতে করতে বউ জাগে। শার্লকের টর্চের মতো সূর্যও জাগে। উপন্যাসের মতন জীবন, এপিসোডের পর এপিসোড, এভাবেই বসন্ত-আক্রান্তের মতন স্রোতে ভেসে আসে…

সাদা একটি পাতার উপর আমি এ’সব দেখি, পড়ি, শুনতেও পাই, কিন্তু লিখে রাখি না। এই আয়োজনহীন আনন্দ, রহস্য অক্রিয়েটিভ পাঠককে জানিয়ে দিতে আমি আগ্রহী নই।


সমস্ত মুখ, সমস্ত নাম বড্ড একঘেয়ে তাই
শহরের প্রাচীন এক গ্যালারি থেকে অন্য মুখ
ভাড়া করে আমাদের নবীন পর্যটক,

তারই অতীতে সুতরাং লিপ্ত হতে থাকে সে।

যত রাস্তা হাঁটে, মুখোশের চোখ দিয়ে আগেভাগে
চিনে যায় মানুষ; কপালে কপাল ছুঁয়ে জেনে ফেলে
ভবিতব্যগুলিকে—

এ’প্যারেড সৈনিকের সুসজ্জিত মৃতদেহ বৈ কিছু নয়,
প্রাক্তন লোককথা, জেনগল্প, জীবনের সটীক পরিচয়

ক্রমশ তারও মৃত্যুদিন ত্বরাণ্বিত হতে থাকে…

প্রাচীন এক গ্যালারি থেকে ভাড়া করা সেই মুখ খোলার জন্য ছটফট করে…


ছোটোবেলায় কুয়োর মধ্যে মাথা ঝোঁকালে যেভাবে ভয় পেয়ে যেত ঠাম্মা; নিজের বয়সের দিকে এখন সেভাবেই মাথা ডুবিয়ে আছি। অজস্র শ্যাওলা ও ফার্ণে ভরে আছে আয়ুর দেয়াল। অতলে প্রতিফলিত কেউ, আমারই মতো, কেঁপে কেঁপে ওঠে। তাঁকে তুলে আনতে চেয়ে বালতি ফেলি; এক বালতি জল উঠে আসে। একা স্নানে কিছুটা অতৃপ্তি থেকে যায়…


কেমন যেন উনিশ বছরেই আটকে আছি— মনে হয়। চারিপাশে অজস্র কেবল সকালবেলার ঝাঁট, বাচ্চাদের মুখস্থ পড়া। মহাকাশ যেন বা আর আকারে বাড়ছে না ক্রমশ… বিকেল বয়ে আসে। গোধূলির নির্জন আর্মেচারে গলা জড়াজড়ি করে খেলছে দুই বালক-বালিকা। দেখি, স্বপ্নের মতো শব্দহীন। এই সম্পর্কের কী নাম— ভাবি। অট্টহাস্যে হেসে ওঠেন মহাশক্তি, মহাকাল

Facebook Comments

পছন্দের বই