লেখক নয় , লেখাই মূলধন

তথাগত’র কবিতা

বেহাগ, নিখিল ব্যানার্জী

এমন মন্দ্র বেহাগ, সখা, কখনো শুনিনি।
মেঘে মেঘে ঐ বিদ্যুৎ বাজে। সুরের মূর্ছনা এই নবীন আষাঢ়কে
দ্যাখো, ভরা শ্রাবণ করেছে। এ কি সত্য? এ কি ভ্রম?
এ কি তোমার বাড়ির হারিয়ে যাওয়া পথ?

চারদিন হলো আজ বর্ষাকাল, চারদিন হলো নিখিল বেহাগময়, ঘুমের ওষুধ খাইনি।

পূর্বরাগ

তোমাকে দেখার মতো সুখ ত্রিভুবনে নেই।
যে চুল হাওয়ায় ওড়ে তাকে শ্রাবনমেঘে উপমিত করা—
আমি অপারগ কবি। আমার অক্ষমতা তুমি জানো।
ওই ক্ষমাসুন্দর বুক, আমি দূর থেকে দেখি। যেন সুজাতার
হাতে ধরা পায়সের বাটি। আমি ক্লান্ত, শীর্ণ, অচল বুদ্ধ।
তুমি মাথে শাখা হও, শাখাবট, তাতে পাখি হয়ে বোসো।

পাখি তুমি। তোমার সতীন হোক গোলা পায়রা, ঈর্ষায়
ধূসরবর্ণ। তুমি শ্যামা, তন্বী, শিখরদশনা। ও পাড়ার
বাগদিদের মেয়ে। আমি ইস্কুল মাস্টার, কাব্য করি, পাখি
দেখি, কলঘরে একা চান করি। দেওয়ালে জলের ধারায়
তোমার নাম লিখেছি শ্যামা, দু-বেলা হাত পুড়িয়ে রাঁধি।

বর্ষা ও শরৎ

এসো হাত ধরো। যে হাত আষাঢ়ের মেঘ, শ্যামা, তাকে তুমি
দূরে কেন রাখো? জীবনসায়াহ্নে যদি ঝড় ওঠে, বৃষ্টি পড়ে,
চিতা নিভে যায়। মৃত উঠে বসে। এসো, এই মৃতের হাত হাতে তুলে নাও।

আকাশে ডমরু বাজে, তোমার সিঁথিতে রাঙা মেঘ।

বিপ্রলম্ভ

এই অঙ্গহীনতা তুমি। হাজার বছর ধরে আমার চোখের জল
পাথরে পাথরে ঝরে রুদ্রাক্ষ হলো— তুমি তার বকপাতি মালা;
আকাশের অনঙ্গ গলায় দুলেছ। তুমি বাতাস পুষ্পময়, নবমালিকায়
জলের ভৃঙ্গ তুমি, রতিকালে জয়দেব শ্লোক।

ভাগবত পাঠ করি, এক প্রহরে তিনশ এক টাকা।
বাসকসজ্জিকা ওগো, শ্রীরাধার অঙ্গরাগে আমি কার কথা ভাবি?
—ভাগবতে রাধা নেই? ন পাড়ার রাধিকা মণ্ডল?

তোমার তুলনা ঐ চন্দ্রশাখা আকাশমণি গাছ, সতের মাস চাকরিহীন বাবা।

শেষ কবিতা

সমুদ্র জেনেছে। তথাগত, তারও বুঝি জানবার কথা ছিল।
বিদেশি বাণিজ্য নিয়ে উৎসাহ ছিল। প্রাচীন বাঙ্গলার নৌবহর
সে স্বপ্নে দেখেছে, বহুবার। সৌভাগ্য যেন সতী-লক্ষ্মী স্ত্রী হয়ে
দুয়ারে রেখেছিল ব্রতের কলস।

আর পদ্মাবতী ছিল। সকল স্বপ্ন-ঘোরে পদ্মাবতী আসে।
জেলেদের মেয়ে। মাছুনি। আঁশগন্ধ যোনি। তার অভিশাপে
এই সাতমহলা নৌকো ফুটো হলো। উঁয়ে খেলো লাইব্রেরি ঘর।
কবিতার পাতা নিল অমঙ্গল হাওয়া।

দূর গাঁয়ে মাস্টারি করি। অনেক দূরের পথ সমুদ্রবন্দর,
তার সূর্য, তার চন্দ্র, জোয়ার আর ভাটা।

Facebook Comments

পছন্দের বই