লেখক নয় , লেখাই মূলধন

তৈমুর খানের গুচ্ছকবিতা

নাটক

বৃষ্টির ভেতর কথা বলছে গাছ
তাদের স্নানের দৃশ্য দেখতে দেখতে
পৃথিবীতে নেমে আসে নরম প্রভাত।
আমাদের বেঁচে থাকাটুকু আলোর কোটেশনে রেখে বেড়াতে বেরোই
অথবা স্থির জানালা থেকে বাড়িয়ে দিই হাত।
পুরোনো নিভৃত কিছু নিরুচ্চার ভাষা
গড়ে ওঠে নিয়তির পরাগমোচনের মতো
রঙে ও রেখায় আঁকা রাতের পিপাসা।

সমস্ত বর্ষাকাল জুড়ে আমরা শুধু মঞ্চ সাজাই
বেঁচে থাকাটুকু তো আমাদের শিখে নেওয়া অভিনয়।

পুতুলের সংসার

নিজেকে বালক বলে চালিয়ে দিই।
সারাদিন এত নাকি ভুল হয় আমার
এবং এত নাকি বোকামি!

—আমার সঙ্গে কেন সংসার করতে এসেছিলে বউ?
—মরণ হয়নি তাই
—এখন তো রোজ তুমি মরো
এবং মরে মরে বাঁচো!
—শুধু ছেলেদের জন্য বাঁচতে হয়।
—আমিতো প্রাচীন মমি তোমার জাদুঘরে !

বউ মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আমি কবিতার কাছে বসি। শব্দ খুঁজে খুঁজে
কোন অপার্থিব আলো পেয়ে যাই
যেখানে পৌঁছাতে পারে না কেউ
আর একা একা হাসি—
বউটি পুতুল হয়ে অদূরে ঘুমায়।

মহালগ্ন

নষ্ট হবার আগে কিছুক্ষণ
আমি জেগে থাকতে চাই

এই ছোটো ঘর আরও ছোটো আমার সীমানা
ভাত খাওয়ার থালা, জল খাওয়ার গ্লাস
স্বাধীনতা দিবসের গান

আমাকে দেখুক সবাই

নেতাজির সন্তান হওয়া যাবে না জেনেও
এই স্যাঁতসেঁতে ভিজে মাটি
সাড়ে তিনহাত
আমার ভারতবর্ষ
মনে মনে আমি ক্ষুদিরাম!

হাঁটা

কতদূর হাঁটলে পরে থামতে হয় মানুষ জানে না
পথিকেরা হেঁটেছিল রাত্রির তুমুল বিশ্রামকেও উপেক্ষা করে
সূর্যোদয় সূর্যাস্তকালের সীমানাহীন স্রোতে—
হাঁটতে হাঁটতে ওরা বৃদ্ধ হয়েছিল
তারপর চুল দাঁত ঝরে গেলে
একবার চাঁদে তার সন্তানের মুখ দেখেছিল।

কতদূর হাঁটলে পরে থামতে হয় মানুষ জানে না—
কোথায় গন্তব্য? কোথায় ঠিকানা? পথিক জানে না—

রাত্রি আসে
রাত্রি যায়
চাঁদে ভাসে শিশুর মুখ।

প্রাকৃতিক

পৃথিবীর সব প্রেম ডুবে গেছে আজ
মানুষের হাহাকার উঠে আসে,
রোদ্দুরের বেশ্যামেয়ে খুলেছে সাজ
তার মাটির স্তন ঢাকে মরা ঘাসে।

Facebook Comments

পছন্দের বই