লেখক নয় , লেখাই মূলধন

পরিতোষ হালদারের কবিতা

অস্মিতি

আরশিজগৎ থেকে হেঁটে আসা আমি, আমারও নির্মাণ আছে— দুই পায়ে তাণ্ডব প্রণালী। দূরে যাব,
তবু অশোকস্তম্ভের তলে রেখে যাব দীর্ঘ-নিঃশ্বাস।
আমাকে রাত্রি দাও…
হারিয়ে যাওয়ার মতো অস্মিতি দাও।

সেই কবে, একজন কিম্পুরুষের কাছে রেখে এসেছি সাতটি আঙরাখা। মৃত্যুর আগে যে ঊনপঞ্চাশবার একেঁছিল তাঁতঘরের ছবি।
আমি সেই পোট্রেট চুরি করে টাঙিয়ে দেয়েছি ব্যক্তিগত সরাইখানায়। যেখানে সময় দেখতে দেখতে প্রতিদিন হয়ে উঠি—
বিষণ রাক্ষস।

চিত্র: ইভস্ ট্যাঙ্গি

সম্পাট্য

কিছু ইন্দ্রস্বামিক, বাকিটা অসুর; তবু যাও— জন্ম ও সর্কাস পাবে তার সাথে একগুচ্ছ অঙ্গারপাতা।
সামনে প্রজাপতি— তিনি দক্ষ; শব্দ ভাঙলেই বিরহী।

ঐ দেখা যায় মেঘগাছ, ঐ আমাদের জল…

একটি গৌরপাখি; চন্দ্রিকায় কেবল নিজের দিকে উড়ে। এখন ডাংগুলি আঁকো— এড়ি-দড়ি-গুড়ণ-চোল-চম্পা-ঢেক-লঙ্কা।
সাতলঙ্কায় ঊনপঞ্চাশবার ঘুরে এসো চম্পু, নিজের লিঙ্গশরীর।

সম্পাট্য শেষে তুমিও হীরকরাজা, তোমার পকেটভর্তি হাওয়ার আকাশ।

সঙ্কর্ষণ

সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো তরলই অপ্সরা। এখন ষড়মন্ত্র করো—
শরীর শরীর কয় ভাই, শরীর কভু গুনতে নাই।

ওই দেখো সয়ম্বর, দেহ বিষয়ক অঙ্কসমগ্র তার। বুকে কৌমুদী থাকলে ভেবো না— বিবাহও একজন ঈভ।
জন্ম নিতে চাও— চলো, ফলমণ্ডল দেখি; পাতায় পাতায় জতু আঁকি তারপর অঞ্চ, তারপর সঙ্কর্ষণ।

এবার ইহ আমার কৌম হোক, তোমার ন-হন্যতে। যদি কাঠামোগত কোনো ক্ষোভ থাকে, তাহলে দেশনা পড়—
যদি শরীর চাও, ধরতে পারলে নাও…

প্রাগমৃত্যুকে চকলেট ভাবো, জিহ্বার তলে যেকোনো স্বাদই ব্রহ্মাণ্ড।

স্বয়ংসন্ধ্যা

এখন স্বয়ংসন্ধ্যা, তিনটি একচক্রা পাখি ক্রমাগত উজ্জ্বয়ন শোনায়।

সংখ্যারা রুদ্র নাচে— তারা এগারবার লিঙ্গান্তর করে। তাকিয়ে দেখি— বিশল্য তুমি, যেন শীততাপ হাসপাতাল।

দৃশ্য ছড়িয়ে গেলে— কানামাছি ভোঁ ভোঁ করি, যারে খুশি তারে ধরি।

আমি প্যারাডাইমরেখা, বিকল্পে পরাগায়ন আঁকি।
পাঁচটি ফুলের কাছে ইন্দ্র খুলি— এই দেখো, আমিই প্রফুল্ল, তোমরা উঞ্ছ ভাবতে পারো।

অথচ স্বনামে আছি, সর্বনামে টান এলে ঝরে যাব, ঠিক তোমার মতো— শরীর ও শরীর।

ছল

বাড়ি যাই, চল্— বাড়িবাড়ি যাই…
মার্গ করি— আমি বীজ খুঁজি ভুঁই, যারে পাই তারে ছুঁই।

সদরে পটক খুলি, নিজের নাম রাখি দেহ— দেহ আমাদের বউ।

এই দিকে আয়, হল্যা করি— সমাপিকায় তুই মল্লার, আমি মল্লার। যোগচিহ্ণের মতো জল, তত জল;
তিন সমান্তরালে তবু স্নান হয় না।

তোরতো কন্যারাশি, সমঙ্গায় যাবি যা; আমি পাঙ্খি আছি, একদিন হয়ে যাব পাখি।

ইন্দ্রকুহক

বাদ্য বাজাও, কিছু বাদ হোক সুরে-অসুরে…

ও আদি মাতৃকা, কতটা প্রকম্প তুমি, কি চিত্ত পৌঁছে দাও
জড় ও পুরুষে।

এসো মোক্ষণ করি— একজন অজ অথৈ যায়, সোনার পঙ্খি ইহর ছায়।

তবু দুই দেহে অনেক দেহ, পুষ্প খোলো— অণিমা-অঞ্জলি শেষে নিজেকে কন্যা ভাবো। উপমান তুমি—
চক্ষু ছুঁইয়া দেখ, বণে বণে কুসুমনগর।

পিতা হে, বৎস আয়ণ করো— চৌষট্টি অক্ষরে নাচাও কলা ও কুহক।

চিৎ

একবার ভাবো— কাশ ও আকাশ, ছিদ্রছিদ্র কত অবকাশ।
আয় শব্দ ঝেঁপে
কলস্বরে চেপে…
আয় পুষ্প ও পারুলফুল, জোনাকপাতা, অস্মি ও অমৃতলিঙ্গম্।

চারিদিকে উড়াল-সমকাল; তোমার দশ আঙুলে বিরামহীন মুদ্রা নাচে।

এবার মৌন দাও— শক্তির শূন্যতা দাও; আমি প্রাণ ভালোবাসি। তুমি সোম থেকে এসে বলো— প্রাণই অভেদ।

একটা পাতাঘর, একজোড়া দু’জন; তারা অবলীলা করে… তারা একে অপরের জেব্রাপাখি।
অথচ তুমিও জোড়ধ্বনি, সৌমি চিৎকার।

কাল তোমার বিয়ে, সোনার টোপর মাথায় দিয়ে।

Facebook Comments

পছন্দের বই