লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শতানীক রায়ের গদ্য

কুহকের লেখা ও অন্যান্য গদ্য

কুহকের লেখা

একটা কুহক নিয়ে জন্মেছি যেন। যত এগোচ্ছি কেমন অদ্ভুত দৃশ্য খুঁজে পাচ্ছি। পর্দা সরালেই জগতের বাহার। মাংস অদলবদল হওয়ার কারিগর হয়ে উঠছি ক্রমে। কেন কী কারণ— এ-সব নয় মানুষের শরীরে এইসব বার্তা মানায় না। সংশয় যখন তৈরি হতে থাকে একটা তীর্যক জীবনের রহস্য খুলে আসে। কেউ কাউকে ক্ষতি করছে না। চারদিকে কেউ অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই শুধু উপচারে বসে আছি সবাই। তবুও কেউ কারো উপচার করছি না। দৃশ্য খুঁজছি শুধু। দৃশ্যের এরকম ব্যাপার আর দৃশ্যের কাছে যাওয়া। প্রার্থিত হওয়া। দৃশ্য খোলা। তখন দূর দেশে অজানা নীরবতায় হাঁটতে হাঁটতে অধিকাংশ কথা বলে যাওয়া। কী করে করব এত কিছু। খুঁজব কোথায়— মানুষ কেন খুঁজব। আমাদের চরম সবই এই ভাণ্ডে যখন আছে। এই আছে ঘিরে প্রেম উপাদেয় না হয়ে যখন রসিক অর্থে সমস্ত তাৎপর্যগুলো খুলতে থাকে বদলাতে থাকে রামধনুর রূপ। বৃষ্টি। প্রতিচ্ছবি হওয়ার আচার-আচরণ। এভাবেই তো মানুষ আরও বেশি বড়ো সমস্ত আলোড়ন করে এই করুণা এই সভ্যতার কাছে গিয়ে জানু পেতে বসে। তোমাকে এগোতে হবে এটা জেনে নিয়ে আমাকে যখন বারবার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফিরে ফিরে একই ঘটনার পর কোনোই হতাশা হয় না। দরজা বন্ধ হওয়া তারপর লৌকিক হয়ে ওঠে। স্বপ্নের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে শরীর রেখে আসা। তুমি ভাষা পেয়েছ বলে আমার সব তখন দৃশ্যমান হবে এমনও নয়। শরীরের ছাল চামড়া সব নিয়ে একটা পূর্ণতা। অজানা কোনো ক্ষমাকে খুঁজতে গিয়ে আবার প্রার্থনা করা। এই দৃশ্যের দিকে এগোনো এই দৃশ্য অন্তহীন কোনো ঘর নেই শুধু কুহকই আছে।

পাখির কথা

তখন একটা ঘোর লাগা সময় ছিল। কোনো পাতা পড়েনি জঙ্গলে। গাছে সদ্য পাতা গজিয়েছে ফল ধরেছে তখনই সমস্ত সরবরাহ সরিয়ে নেওয়া হল। এভাবে অঞ্জনা পাখি হঠাৎ ডাকতে ভুলে গেল। পৃথিবীর বুকে ঘুরে ঘুরে সে শিখল কেমন করে আরেকটা পাখির বাসার কাছে আশ্রয় নিতে হয় চেষ্টা করতে হয় ডাকতে আবার। সে পেল অদ্ভুত এক অভিমানী পাখির আশ্রয়। তারপর জল পড়া শুরু হল কোনো এক গভীর মহাশূন্য থেকে। বহু উপরের পরিভাষা কেমন এক পৃথিবীর ফুল যেন। পালক পড়তে লাগল ভেসে ভেসে আলতো জলে। এমনই আমার জলীয় শরীরে কেমন গন্ধ ছড়াতে লাগল। কেউ কোনো ভূমিকর্ষণের কথা তুলল না তখন। আগের এক পাখি কেমন ছলের আশা দেখাল। পৃথিবীতে তখন মুখের ভিড় গাঢ় অন্ধকার নিয়ে কারবার। কেউ কোনো কিছু জানল না তবুও ভেতরে ভেতরে গাছের ছাল গুঁড়ো গুঁড়ো হল। কাঠবেড়ালি এক ডাল থেকে অন্য ডালে গেল। সে ছিল এক আশ্রয়ের কাল আর সময়কে ঘোরে রেখে রেখে এগিয়ে চলার কাল। অখণ্ডকে খণ্ডে ভেঙে ফেলার কাল। যখন মানুষের মাথা মুণ্ডু বলে কিছু আর থাকে না। তখন ভিড়ের ভেতর কেউ একজন তার নিহত পরিচিতর কাটা হাত নিয়ে বিন্যাস খুঁজে চলেছে যেন। কোনো সূত্র নেই শুধু দীর্ঘ দীর্ঘ কথা বয়ান করা। লিখে যাওয়া সেইসব পাতার না পড়ার শব্দহীনতা। আমাকে তখনও অক্ষরবোধ নিয়ে কারবার করে যেতে হয়। এই কারবারে শরীর ক্ষণিকের পাখি শেখাতে থাকে, শেখাতে থাকে ত্যাগ। এখানে ছলনা ছাড়া কিছুই ছিল না শুধু দৃশ্যের পাখি এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে উড়ে খাবারের সংযম। সংগমে তখনও কোনো বিরামের চিহ্ন থাকল না। জঙ্গলে পাতা পড়েনি। আশ্রয় ছিল। আশ্রয়ের পাখির কথা ছিল।

রৌরব

আস্তে আস্তে যেভাবে শরৎ চলে গেল হেমন্ত এল আর হেমন্তও চলে গেল একটা সময়। পরতের পর পরত খোলার একটা অভিপ্রায় থাকে নদী খোলার মতো জল জঙ্গল পেরোনোর সময় যে-সব বার্তা পৌঁছোয় দূরে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। কে যেন বসে থাকে দূর দূর অবধি কোনো মানুষ নেই সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসবে কেউ সমস্ত কারণ। ঘণ্টা বাজছে আবার। চার্চের ঘণ্টা আবার শুনতে পাচ্ছি। পাখি জেগে ওঠার সময় এল। ঘন ঘন চার্চ এগিয়ে আসছে। ঘণ্টা আলাদা হয়ে গেল কোনো দূরে পাথর ছোঁড়ার মতো। পাথর দৌঁড়ে ছুটল পর্বতের দিকে যেখানে সেই মানুষটা অপেক্ষা করছে এরকম কোনো একটা অর্থহীনতার জন্য। ঘুমোনোর জন্য নিবিড় ধরে রাখছে। চার্চ এগিয়ে আসছে। মন্দির অদৃশ্য হয়েছে। ঘণ্টা অনেকটা আরও দূরে চলে গিয়ে ব্যাঙ হয়ে আছে। আমাকে কবর দাও হে ঈশ্বর। বা আমাকে ধরে রাখো এই বুকে। মাথাকে নত করিয়ে নাও নামহীনতার দিকে। ওদের কোনো অবয়ব নেই নাম নেই। তবুও একটা সময় ওরা যুক্ত হয়েছে অক্ষরে অক্ষরে কায়েম হয়েছে। পাথরে কায়েম এমন এক মনস্কাম নিয়ে এগিয়ে আসার ব্যথা। এটা তোমাকে কারণ করে নিতে হবে। চার্চ একটা সময় ঘণ্টা ধরে রাখতে পারত সমস্ত সম্ভব রাখত। ভোরের ঠিক আগে চার্চও বেজে উঠত চার্চের বাজনা এমন এক সরু হওয়ার মধ্যে কেমন এক স্বপ্ন ছিল। আমি আজও হারিয়ে ফেলছি। সব হারানোর ভেতর একটা ভেতর ভেতর ব্যাপার আছে। অনেক দূরে সেই পর্বতের মানুষটা আলোকিত আরও। প্রথম কাক ডাকার আলো নিয়ে তার একটা অনন্য অভিপ্রায়। জাতিবেত্তা। এর কোনো যুক্তি নেই। আস্তে আস্তে ঘণ্টা আর ধ্বনির মিলন হচ্ছে। এর কি কোনো কারণ আছে?

মাছি

সমস্ত মাছি আলাদা হও। এমনটাই হওয়া উচিত ছিল। এমনটা কোনো অর্থ রাখে না। তোমার যেমন বহু দূর অবধি কোথাও কেউ নেই মাছির নিঃশব্দ ছাড়া। এমনভাবে তোমাকে কারণ বয়ে নিয়ে যেতে হয় এর কারণও ছিল অশেষ। চিন্তামগ্নতাও একটা কারণ। তবে কোনো অর্থ নেই। সুর তুললে যে-কোনো পাখির একটা আওয়াজ হয়। পাখির আওয়াজ থেমে থেমে ধান গড়ায়। ধান হয় ভোর। এভাবে আর কত কী বলতে পারি বলার মতো শরীরে গাঢ় হয় পাখি। তার আওয়াজ ছড়াতে থাকে। আলাদা করে তোলে আওয়াজ তার শরীর থেকে। পাখির মাংসে আওয়াজ তবে দূর মানুষটার মতো নির্জন। শিল্প হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে কোনো ঋতুর মোহ নেই কারণহীন হওয়া পাথর হওয়া। এখানে কোনো কালে কিছুই নেই পরপর দেবতা এসেছে দেবতা গেছে। শরীরময় রক্ত ব্যথা আর শরবত মেশানো হলে অনেকরকম হয়। অনেকটা শব্দ মেশানো অক্ষর মেশানো এভাবে আমাকে আবার একাকার হতে হবে। পাহাড়ের মানুষটা একা দূরাহত। শূন্য হয়ে আছে। শূন্যের পিঠ বেঁকে গিয়ে দূরে সরে যায় আরও। আলোকিত হয় আরও। ওর শরীর নেই কেবল বাঁকা পিঠ অর্থহীন৷ শরবতের শরীর। কোনো অর্থ নেই।

সংসর্গ

২০১৮ সালে আমার একটি কবিতায় খড়ি ওঠা ভারতবর্ষের কথা এসেছিল। বলতে গেলে এও এক প্রস্তাবিত অন্ধকার। ঘোড়া দৌড়ে গিয়ে অনেকটা সময় পরে ফিরে তাকানোর শরীরটার কাছে সমর্পণ করবে কোন ভাষায়! কেউ মনে করাতে পারে না। ভোরের সাইকেল। তার চাকা ঘুরছে ঘুরছে। চাকার স্পোকগুলোতে একজন করে মানুষ দেখার ফাঁকে অদ্ভুতরকম দেখতে হয়ে উঠছি আমি। জলরঙের। আরও টান তাহলে মাটির দিকে। মনের মতো। পৃথিবীর পুরোনো ঝড়ে উলটোনো টবের গাছটাকে শুশ্রূষা করে কোন পাখি। আরেকজন পথিককে ভোর ভোর হেঁটে যেতে দেখে যখনই আলো তুলে নিই। আসলে আরও গ্রামীণ। আরও জ্যোৎস্নার। মাটির কাছাকাছি দুটো মানুষ এসেছেও। কীরকম তীব্র আকারে বড়ো পাখি। কথার হাঙরে আরও একতাল পাখি। একতাল মাটি। তীব্র মানুষের মতো পৃথিবী। অপরিসীম। কারো ভুলে যাওয়া থেকে পাখি উড়ে যাচ্ছে… কারো কাপড় তুলে রাখার থেকে যে-ঘ্রাণ পৃথিবীর দিকে মুখ করে আরও লম্বাটে নদী পেরিয়ে যাচ্ছে। কথা তারপর সমুদ্দুরের কাছে গিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। মধুরং। তৃষিত। অযথা মরুভূমি। জোর করে বলা শব্দ গোঙানির মতো গভীর। আরও আলোড়নহীন। একটু আগেই মনে হল একটি ঘোড়ার জন্ম হল। আর একটি গাধা নীচু হয়ে গেল। ব্রহ্মাণ্ডের কালো মেয়েটা কী অদ্ভুত! ফুল তুলবে বলে জলে নেমে আরও মধুর হল। আলতো নরম বুকের মতো মাটি। আগলহীন। তীব্র বিভাব। বিভাগীয়। কেউ না তাকানোর জন্য বড়ো। রক্ষা আর সকালের মতো শব্দগুলো। ভোরের জন্য মানুষগুলো জন্মাচ্ছে বারবার। প্রতিদিন পৃথিবী নিয়ে কত কথা হচ্ছে। শার্ট খোলার পর। এখানে আলোড়িত হবে তুমি। সন্ধ্যামালতী। কোথাও কোনো দূর। ওই দূরের অভিযান আমাদের আরও জড়ো করে।

ঠিকানা

কাউকে জানাতে পারি না মৃত কবিতাগুলোর কথা। সবই মিথ্যা মনে হয়। মিথ্যা বয়ে নিয়ে চলেছি। কোনো একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। এরকম থেকেও কত বছর কেটে গেল। হঠাৎ কোনোদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সংকট টের পাই। অনেকদিন ধরে স্বপ্ন দেখি কোথাও ভ্রমণে বেরিয়েছি। ভ্রমণে তাক করে থাকা জীবনটা কয়েকদিন হল বাস্তবে মিশে যাচ্ছে। সবকিছু একটা জাল বোনা। জাতিস্মর দুপুরে বলল, মাকড়সা এবার তোমার শরীরে জাল বুনবে। তারপরই ঘুম এল। হারিয়ে গেলাম। এখন আবার মিথ্যা মনে হচ্ছে। কেন? তার কোনো কারণ নেই। আলো— তার কি কোনো কারণ আছে? এই যে রোজ আমি বয়ে বয়ে চলেছি তার কি কারণ আছে! চার্চের বিস্ময় একদিন আমার ভেতর মরে গেল। চার্চটাকে টের পেলাম আস্তে আস্তে তার ঘণ্টাসহ উধাও হল। পিয়ানোটাও কোথাও হারিয়ে গেল। এখন শুধু একটা আরামবোধ কাজ করে। স্বপ্নে গিয়ে ফিরে আসতে পারছি না এরকম। কোথাও কি আদৌ বাস্তব আছে যার পিঠে ভর করে ভ্রমণ করব আমি। একজন বহু পুরোনো মানুষ সব কিছু ত্যাগ করে পাথরটাকে বয়ে নিয়ে চলেছে। কখনো পাথরটাকে যীশুর ক্রশ মনে হচ্ছে। কাঁটার মুকুট পরানো হবে তাকে। কেউ তার খোঁজ রাখবে না। তবুও সে অভিমান না করে পাথরে মন দেবে। উঁচু পাহাড়টাকে তার বাড়ি মনে হবে। ইঁটবিদ্যা। এমন কিছু বাক্যবোধ বুজে আসছে। যেন শব্দটাও এখন নেই আর। আর শব্দটাও হারানো কুয়োর দিকে যাচ্ছে। যাচ্ছে ক্রিয়া ক্ষয়ে আসা মানুষের রক্ত। দিনের পর দিন পেরোয় আর মাংস নরম হয়। দৃষ্টি হারিয়ে যায়। চোখ খুবলে নেওয়া মানুষ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। মনে করতে হয় একদিন কেউ তাদের সাহায্যে আসবে। তারা সেদিন ঠিকানা খুঁজে পাবে।

ছায়াপুরুষ

যে-আমি কবির পাশে বসে থাকা আলোও দেখেছি। সে আরও কিছু দেখতে চায়। ভোর হল। সকাল হল। দুপুরও হল। তারপর বিকেল হয়ে রাত্রি হল। সন্ধ্যার প্রসঙ্গে না-ই বললাম। টাউন থেকে অনেক দূরে স্কুল ছিল। পাশে আস্ত বড়ো পুকুর। খুব সকালে স্কুলে গিয়ে পৌঁছেছি আমরা। নতুন স্কুল। রোমাঞ্চ লাগছিল। কাচের জানালা ঘরে ঘরে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আলো ছায়া দেখা শুরু করেছি। আলোর ভেতর দিয়ে ছায়া কীভাবে বড়ো হয়। সারাদিন একটা একটা প্রহর পেরোতে দেখে ভাঙা প্রাচীরের পাশে আমবাগান। তার পাশে নিঃশব্দ পড়ে থাকত। নিঃশব্দ বড়ো হত। বড়ো হতে গিয়ে হারিয়ে যেত। দিনের পর দিন দেখে গেছি। মানুষ বড়ো হয়েছে আমার সঙ্গে। মানুষ চলে গেছে। হারাতে দেখেছি কত মানুষকে। হারাতে হারাতে একটা সময় ওই আমবাগানের নিঃশব্দই একটা একটা মানুষ হয়ে বুকের ভরে হেঁটে বেরিয়েছে। কেউ দাবি করেনি কোনো সম্পর্কের। চাঁদ ফাটা রাতগুলোতে একা পড়ে থেকেছে হুল্লোড়ের ঘরগুলো। একসঙ্গে এত এত মানুষের যৌথ ক্ষয় যৌথ খোসা ফেলে যাওয়া। গন্ধ রেখে যাওয়া। গভীর রেখে বেলুনের আকারে ফেটে যাওয়া। বারবার এরকম করে আরও একা হয়েছে আমবাগানটি। এতগুলো আমগাছ। কেন জানি সেইসব রক্তহীন আলোহীন নিঃশব্দগুলো হেঁটে হেঁটে বেড়ানোর ভেতর এক-একটা নতুন উত্থান ছিল। এক-একটা আকৃতি। ভূমণ্ডলের গান। পৃথিবীর বুকের ভেতর থেকে কীরকম অনাহারের শব্দ খাঁ খাঁ করতে করতে বেরিয়ে আসা। প্রতিবার হারাতে হারাতে তাঁরা কেউ-ই আর কিছু স্মৃতি নিয়ে গিয়েছিল কি? খুব সকাল থেকে খুব বিকেল অবধি আমার দিনগুলো এখন ভেঙেচুরে আঁকতে থাকে। ছায়া বড়ো হয়। আয়ু বড়ো হয়। নিঃশব্দে ঘুরে ঘুরে একা পাক খায় সেই আমবাগান।

ঝরার অভিপ্রায়

I am tired of confiding in myself, of lamenting over myself, of pitying mine own self with tears.
— Fernando Pessoa

আমাকে ছোটোবেলা কাটিয়ে উঠে বড়ো হতে হয়েছে। ইদানীং মনে হয় ক্রমাগত একা হয়ে যাচ্ছি। আশা হতাশা খুব পুরোনো ওক গাছের মতো। খুব প্রাচীন অন্তর্ভুক্ত করেছে আমাকে। আমার সবকিছু একই রকম থেকে যাচ্ছে। যে-সব আয়ুর ওপর ভর করে বেঁচে আছি। ভালোভাবে বলতে বেঁচে উঠেছি। নিজেকে ভুলতে ভুলতে গজিয়ে উঠেছি। বড়ো একটা শেকড়হীন গাছ। অভিমানী রক্ত বয়ে বেড়াতে বেড়াতে পুকুর ঘাট বুজে যাওয়ার উপক্রম। নিজের ভুলের ওপর দিয়ে সাঁকো পেরোব বলে বারবার চেষ্টা করি সাঁকো পেরোব আমি। সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে যেতে সরু সুতো হয়ে যাব। অর্বাচীন শব্দ পরপর। সাজানো পদ্মের কাছে ঋণী সর্বদা। ফুরিয়ে যেতে গিয়ে কোনো একটা প্রাচীন ওক গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা। চাঁদ আর সূর্যের অভিশাপ সে তো বহু বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বয়ে বেড়াতে গিয়ে একদিন আমার সাইকেলের বেল ঝরে পড়ে।

Facebook Comments

পছন্দের বই