লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শুভদীপ আইচের কবিতা

উড়ান

ভালোবাসা সিরিজ নিয়ে লিখতে বসে ভেসে উঠছে নিমের ডাল
পিঁড়ি পেতে বসে আছি
এভাবে কি বৃষ্টি থামানো যায়?
অনুবাদ করেছ ডাকনাম
ভুলে গেছ বাদলদিনে গুপ্তহত্যার কথা
ভুলে গেছ তেঁতুল পাড়ের এলোমেলো অক্ষর
অক্ষর থেকে খুলে আসছে মাংস
আ-কার এর মতো চাকুর গড়ন
প্রথমবার নগ্ন হতে দেখেছি এমনই এক রাতে
মোমের আলোয় সঙ্গম ঘটানোর লক্ষ্যে ফেলে এসেছি সম্ভ্রম-খাঁচা
পাখনার গোড়ায় তবু ভয় নিয়ে বেঁচে আছি
জেনেছি খাঁচা ভেঙে পালিয়ে যেতে যেটুকু সাহস
তা মোটেই বয়স ভিত্তিক নয়
সমাজভিত্তিক চাপে হাঁস অথবা ভদ্দরলোক হয়ে আছি
তীব্র জলকেলি অথচ উড়তে পারছি না

কনফেশন

গোলাপি ডানার কাছে ফিরে আসছে চিল
গুটিকয় ঝাঁপ এখনো লুকোনো গভীরে
চিলের মতো আমাদের কোনো ব্যক্তিগত আকাশ নেই
আকাশের গায়ে তারা জমে আছে
রাতের অপেক্ষায় ফুটে ওঠে কারসাজি
যেমন অপরাধ গাঢ় হয় ঠিকঠাক অন্ধকার পেলে
অন্ধকার এক নিজস্ব ইতিহাস
গোপন করেছ যাকে, গুছিয়ে রাখোনি

ফাঁস

আরও কিছু লিখতে হবে এমনই ভেবে এই সন্ধ্যার দ্বিতীয় কবিতা লিখছি
দরজা নরম ভাবে ভেজানো আছে
টিভির রিমোট থেকে কপালকুন্ডলার দূরে অবস্থান
উদ্যত খড়গ থেকে ডেডলাইন গলায় চেপে বসে
গলার চারিদিকে গোলদাগ
নায়কের মৃত্যুর খবর ঘেউ ঘেউ এর মতো ছড়িয়ে পড়ে
চেনের দাগ একবার বসে গেলে
কী আমি কী তুমি
বেকার স্বপ্ন দেখি নিজস্ব উঠোন হবে
একটা নিঝুম ঝোপ রচনা করতে গিয়ে পুরো জঙ্গল কম পড়ে যাচ্ছে

ক্ষত

বৃষ্টির সাথে ভিজে যাচ্ছে মনখারাপ
পায়ের কোনো আত্মা নেই
দরজার থেকে আঘাত
মন থেকে লেস দ্যান চিহ্নে জেগে আছে
মাড়িয়ে দেবার আগে ভেবে দেখো
পিষে দিতে কোনো লিঙ্গ জেগে ওঠে কিনা

ঘোর ও ঘরোয়া

চুমুক দিয়ে পান করে নিচ্ছি অন্ধকার। গেলাস থেকে গেলাসে ফিনকি দিয়ে ছুটছে অপরাধপ্রবণ সংলাপ। হত্যাকাণ্ডের আগে আমি কোনো দয়া দেখাতে চাই না । দোয়া কোরো, যেন সাজানো মেহফিল জুড়ে নামিয়ে আনতে পারি পরাগ। পরাগ আমার জন্মবেলার নাম।  আঙুলের কড় গুনে বলে দিতে পারি পূর্বপুরুষের ইতিহাস। অর্ধেক গ্লাস জল, আর অর্ধেক গ্লাস পানি। জলের মধ্যে সাঁতার কাটছে জন্ম। দেয়াল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বেড়াল। বেড়াল থেকে ছায়া। ছায়ার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে মানুষ। মানুষ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার। অন্ধকার কোনো আত্মার নাম নয়। আত্মার মাংস হরিণের থেকে সুস্বাদু। হরিণের মন জুড়ে হলুদ। হলুদের মধ্যে দাগ টানছে কালো।  কালোর মধ্যে ঘর করছে সাদা। জঙ্গল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষ। মানুষের পিছু নিয়েছে জেব্রা। জেব্রার পিছু নিয়েছে শহর। শহরকে মুড়ে রেখেছে মৃত্যুভয়। ভয় এর উল্টো পিঠ নিরাপত্তা। নিরাপত্তা এক লোভী পিশাচের কান্না। কান্নার শেষে শুকিয়ে ওঠে জল। জলের আরেক নাম স্ফটিক। স্ফটিক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বরফ। বরফ এক হিমশীতল সন্ধ্যে। পুড়ে যাওয়ার আগে ঘি মেখে স্নান। মৃত্যুর থেকে হেঁটে যাচ্ছে মেঘ। মেঘ থেকে ফেনিয়ে উঠছে ঘুম। ঘুম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রাত। রাত থেকে হাফিয়ে উঠছে অন্ধকার। অন্ধকারকে পান করে নিচ্ছে চুমুক। চুমুক থেকে পিছলে যাচ্ছে গেলাস। গেলাস থেকে ছলকে উঠছে অপরাধ।

সি অফ

পাপ আমাকে আত্মার থেকে আলাদা করার পথ খোঁজে। গুরুগম্ভীর কিছু নর্দমা পেরিয়ে মসৃন হাইওয়ের ধারে নোঙ্গর গারি। বেলা শেষ হয়ে আসে পেলব ত্বকের মতো। রাস্তার এই ধার থেকে এক রমণী উঠে আসে। স্খলনের প্রাক মুহূর্তে জাহাজ ছাড়ার ভিড় । সশব্দে যে হুইসেল ভেসে আসে তাদের জন্য আমার কোনো করুনা নেই আজ।

ভার্টিগো

বিশ্বযুদ্ধের মেঘ এখন তোমার পাড়ায়। আমি উল্টোদিক থেকে চোরাস্রোত শুনতে পাই। হ্যারিকেনের আলোয় কাঁপতে থাকে কিছু মধ্যবিত্ত স্মৃতি। কুঞ্জ সাজানোর পর রাধিকার মানভঞ্জন পালা অস্তমিত প্রায়। টিভির আলো জুড়ে পাহাড়ী ঝর্ণা আর মন্দাকিনির স্নানদৃশ্য। উচ্চতার সাথে আমার পুরনো শত্রুতার কথা পুনরায় মনে আসছে।

Facebook Comments

পছন্দের বই