কারা গান গাইছে
স্বপ্নে দেখছি একটা খেত—
গম পেকে থিকথিক করছে,
কালো-ডানা-মেলা পাখিরা
বাতাসের নীচু স্তরে
উলম্ব-তির্যক-আড়াআড়িভাবে
উড়ে উড়ে চক্কর দেয়।
স্বপ্নের সাধ দেখো— তার দর্শনকারীকে
শস্যদানার মতো ছুড়ে দিতে চাইছে
হাঁওয়ালা লালমুখো বুড়ো সূর্যের দিকে—
যে নিজেই কিনা এইবার ডুবে মরবে।
কিন্তু, এখানে শেষ নয়— মানুষের
পৃথিবীর দিক থেকে ঝাঁক বেঁধে
পোকা ধেয়ে ধেয়ে আসছে, যাদের
জন্ম রোগ ও মৃত্যুর মরসুমে।
এর মধ্যেও কারা সব গান গাইছে—
বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের গলা না ?
ড্রাম পেটাচ্ছে কিম্ভূত সন্ধ্যের সময়।
ঘোড়াদের ভঙ্গিতে
সময় ও স্বপ্নের মাঝখান থেকে
রাস্তাটা চলে গেছে—
গাধা হেঁটে যায়
ভেড়া হেঁটে যায়।
নির্বুদ্ধির সাথে লড়বার ভয়ে
বিকেলের চাঁদ পিছু হটে, আর
আকাশের সীমা হতে থাকে দূরবর্তী।
নির্জন উঁচু খালপাড়, তাকে
দিগন্তরেখা মনে করে
গর্দভ ও গাড়ল ঘাড়মাথা নাচাল ক-বার
কানদুটো ডানাঅলা ঘোড়াদের ভঙ্গিতে মেলে দিয়ে
ঝাঁপ দিল নিমজ্জমান সূর্যাস্তের জলে।
সময়গুলো
গলা শুকিয়ে মাটি হয়েছে
মনে পড়ছে জ্যোৎস্না পান করেছি একদিন
সময়গুলো গড়িয়ে যায়, চাকার দাগ জমিতে
খড়ি ফুটেছে চামড়ায়
নিমের ফল পেকে উঠেছে, অরসজ্ঞ কাক ডাকছে
আয়না ভেঙে বেরিয়ে আসে পুরোনো মুখ
জানালা খুলে ঢুকতে চায় প্রজাপতি
শব্দ করে শব্দ করে পাল্লা নড়ে দরজার
বাড়িটা ঘাড় ঘোরায় যেই দিকে রাস্তা
হাতদুটো
প্রথমে হাতদুটো পুরোনো বাড়ির জানালার
ভাঙা কাঠের পাল্লা হল—
খানিক বাদে ভারী বাতাসে
এলিয়ে খুলে পড়া মেঘের কপাট।
দরজা পার হয়ে কতটা দূর যাওয়া যাবে—
হয়তো বড়োজোর শস্যখামার আর
চারপাশের নীচু জমিতে, তারপর
নিপুণ তেলরঙের ছবি উপচে-পড়া বহুবর্ণ সূর্যাস্ত।
রাতে, হাতের মধ্যে থেকে বেরিয়ে লতা একটা
ইটের খাঁজ ধরে
সারাদেয়ালে বাইতে থাকে, সাদা ফুলের চোখ জ্বেলে
খুঁজে চলেছে শয্যা কোনখানে—
মৃত্যুকালে কার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল !
সময়গ্রন্থি
এখনো ধূসর, এমন গ্রামের মেয়ে, চুল বাঁধবার
ফিতের উটকো গিঁট খুলছে—
অনিশ্চিত সময়ের গ্রন্থি আলগা হচ্ছে
চারটি সহজ আঙুলের মনোযোগে।
গোড়ালি জড়িয়ে আছে
হাটের গয়না, দু-দিন বাদেই ছিঁড়ে গিয়ে
রাস্তায় পড়ে থাকবে
শস্য পাকার মরসুমে
খালি পায়ে তাকে খামারে ঘুরতে দেখা যাবে।
নখে নখে চাঁদ ফুটেছে, যদিও
ওই নামে তার চেনাজানা কোনো যুবক নেই,
তবুও উথলে উঠছে
সন্ধ্যের মুখে বুক।
7 replies on “সেলিম মল্লিকের গুচ্ছকবিতা”
অপূর্ব সব কবিতা
অনবদ্য প্রত্যেকটিই
ঘোড়াদের ভঙ্গিতে খুব পানজেন্ট। তার নিজস্ব স্বাদ আছে। বাকি চারটি কবিতাই একাধিকবার পড়তে হল। কী বৈচিত্র্যময় কবিতা সব! সংলগ্ন করে রাখছে।
অসামান্য না বলে উপায় নেই।প্রতিটি কবিতাই খুব ভালো। সেলিম মল্লিক আমাদের অত্যন্ত প্রিয় কবি। তিনি শক্তিশালী কবি এবং সম্ভাবনাময় কবিদের পৌঁছে দিচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের দরবারে। সন্দেহ নেই তাঁকে আজীবন অনুসরণ করতে হবে।
লেখা গুলির আলাদা একটা নিজস্বতা আছে, খুব ভালো লাগলো
কবিতাটা বিশুদ্ধভাবে লেখেন সেলিম মল্লিক। তাঁর সঙ্গে কথা বলেও দেখেছি কবিতা নিয়ে তাঁর আবেগ কী শুভ্র চূড়ায় অবস্থান করে।
আমরা যারা সহজ সোজা পথ না পেয়ে কবিতায় কিছু চালিয়াতি ফন্দিফিকির আমদানি করতে চেয়েছি —সেলিমের কবিতা তার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ।
এও জানি, সচেতনভাবেই বেছে নেওয়া আমার আঁকাবাঁকা কূট পথ হয়তো বিশুদ্ধতায় আত্মসমর্পণ করবে কখনো, ভেঙে পড়বে নাবিকশুদ্ধ জাহাজ।
যা কিছু ঘটতে পারে।
অন্তত এখন সেলিম মল্লিকের কবিতাকে কুর্নিশ জানিয়ে রাখি।
কবিতাগুলো ভালো লেগেছে। এরকম সমর্পিত কবিতা আমার ভালো লাগে। খুঁজে খুঁজে পড়ি। নিঃসন্দেহে সেলিম মল্লিক একজন শক্তিশালী কবি।