লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সৌরভ আহমেদ সাকিবের কবিতা

উপেক্ষা

এই নরম সুরের ভিতর তুমি জেগে আছ, তোমার আত্মা জেগে আছে। রোজ সন্ধে হলে ধ্রুপদী অন্ধকারের ভিতর জেগে ওঠে তোমার বিরহলিপি।
অগ্নিস্নান সেরে রোজ আমি তোমার দরোজায় বসি। আমি সেই গান আসক্ত পুরুষ যে রোজ মৃত্যু অতিক্রম করে তোমার গানের কাছে ফিরে আসে, তোমার কাছে ফিরে আসে।
তুমি আমাকে চিনতে পারোনি কখনো।

তবু রোজ অগ্নিস্নান সেরে তোমার দরোজায় বসি, আর অন্ধকারের ভিতর জেগে ওঠে তোমার বিরহলিপি।

মাটি

ফসল ফুরানোর আগেই হতোদ্যম হয়েছ!
লাঙল চালানো কঠিন জেনেও আস্থা রেখেছিলে মাটিতেই। অভাবদীর্ণ এই ভব-সংসার কখনও পূর্ণ হয় না ফসলে; তা জেনেও লাঙল টেনেছিলে। আজ তবে এতো ক্লান্ত কেন! মাটিই তোমাকে দিয়েছিল যে মন্ত্র, সে মাটিকেই তো ফিরিয়ে দেবে সব।
তুমি তো জানো মাটিতেই তোমার জন্ম, মাটিতেই রাখা হবে তোমার কৃতকর্ম, তোমার অসফল শব।

ফুঁ একটি জাদুমন্ত্র

ফুঁ দিয়ে বোকা বানায় জাদুকর।
তুমিও ফুঁ দিয়ে বোকা বানাতে চেয়েছিলে।
তবে সব ফুঁ-ই যে সম্মোহন হবে না,
জাদু হয়ে উঠবে না,
তুমি বোঝোনি…

এখন ফুঁ-এর কথা মনে এলে হাসি পায়।
ফুঁ দিয়ে বিড়িতে আগুন ধরানোর শিল্প
যেভাবে রপ্ত করে বখাটে ছোঁড়া,
আমিও ফুঁ দিয়ে কবিতা আনতে চেষ্টা করেছি বহুবার ।
বুঝেছি, ফুঁ আর কবিতার মাঝে যে দীর্ঘ দূরত্ব,
সেখানেই শুয়ে আছে কবির আসল জাদুমন্ত্র..

বেইমান

পাতা ওড়া বিকেলে দেখেছি ক্ষ্যাপা কুকুরটি বারবার ওই পাঁচিলেই ধাক্কা খায়। কেউ কেউ ভিতরে ভিতরে কুকুরের স্বভাব লালন করে বলেই, লোকে তাদের বলে—
অকারণে ঘেউ ঘেউ করো না।
আমি ওসব বিবাদ এড়িয়ে গেছি বহুবার।
কিন্তু আমি ওই কুকুরটিকে এড়াতে পারি না কিছুতেই।
বিকেল হলেই এই নির্জন ছায়াবৃক্ষের নীচে সে আজও বসতে চায়। লেজ নাড়ায়।

লোকে বলে, কুকুরের লেজ সোজা করা খুব শক্ত। আমি চেষ্টা করিনি কখনও। কেননা, প্রভুভক্ত কুকুর আর বেইমান মানুষের তফাত বুঝতে লেজ সোজা করার প্রয়োজন পড়ে না,
সেক্ষেত্রে উভয়ের আচরণই যথেষ্ট..

হকার

ঘুরতে ঘুরতে চাকা চলে যায়। চাকার ভিতর দিয়ে তোমার ব্যস্ততা অনুভব করি। চাকা ঘুরতে ঘুরতে যেটুকু দাগ পথে রেখে যায়, বুঝেছি ও-দিনের জন্য ওটুকুই তোমার জীবন। ওই দাগ জুড়ে জুড়ে তুমি যে মানচিত্র আঁকো তার সাথে ভূগোলের মিল হলেও,
আসলে সেটা তোমার ক্ষুধার দাগ,
বেঁচে থাকার দাগ

Facebook Comments

পছন্দের বই