লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্য

১— টুকরো

এক জানলা থেকে আরেক জানলায় যেতে গিয়ে দেখি, ডানার কমতি পড়ছে৷ গুনে গুনে বলা যায় আকাশের মেঘ কতটা শ্রম দিয়ে ঘাম নিংড়েছে৷ ওরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে আমি সাগরের মাঝে জলচৌকি নিয়ে নৌকা কাটি৷ তালিবানের মতো এক তীব্র আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে পেলাম আরোগ্য নিকেতন৷ যতদূর চোখ যায় রোগী আর হিসেব৷ কতদিন মরুভূমির পাশ কাটিয়ে পেরাতে গিয়ে দেখেছি, উটের শৃঙ্গার৷ তপ্ত মরুভূমির ওপর ওই যেন সূর্য, ওই যেন আলোর হ্রদ৷

জীবনের কণা দিয়ে কি বাঁধা যায় অপরিসীম ক্ষত! পাঁচ রিপু প্রকোষ্টে সাজিয়ে চোরাচালান কি করা উচিত দুর্ভিক্ষ, মহামারীর গান! আমাদের আচমন শেষে গঙ্গা থেকে টিকালো ডলফিন উঠে আসে৷ কপাল থেকে চঞ্চু বরাবর সেই শুশুকের শুধুই রোদ পিছলানো খেদ৷

কী আশ্চর্য লাগে আজকাল, আত্মহত্যাও নাকি এক প্রকল্প৷ অধ্যাবসায় থাকলে সুইসাইড নোট মা-কে গর্ভে বসে লিখে যেতে বলতাম৷

কিছুটা উদাসীন পাখি টুপ করে ঘরে ঢুকেছিল, আমার আশ্রয়ে ওরা ভাস্কর চক্কোতি হয়ে কলেজস্ট্রিট উড়ে গেল…

আমি বলতে স্বীয় অথবা ব্রহ্ম কিছুই নই৷ পুরাণ মতে খালি একটা বিশ্বরূপ৷ যার হাঁ-এ পিচুটি জমলে, চাঁদ থেকে মাটি শুদ্ধ ধৈবতে জ্যোৎস্না জমে৷

২— টুকরো

পুরুষের মতো সূর্য কেমন করে যে ডুকরে মেঘ হয়ে যায় জানতে আজ কারোর বাকি নেই৷ হয়তো লিখছি বলেই মেঘে ডাক জেগেছে আবার৷ ব্যাঙ্গালোরের রোদ বড়ো উৎপাতে৷ কেমন দিশেহারা রোদ ছড়ায়৷ বৃষ্টি এলে ল্যাপটপ ভিজে যায়৷ আত্মহত্যা শুরু করার আগে জাটিঙ্গার দল আগুনকে পুজো করে নেয় কিনা জানি না, তবে মানুষের সুইসাইড কিন্তু মজার, কাঁদবে জিরোবে তারপর আকাশের দিকে শ্বাস ফেলে মৃত্যুর কাঠগড়ায় নিজেকে নিয়ে যাবে…

শূন্য এ বুকে পাখি ফিরে আয়— বাক্যটার মধ্যে অসাধারণ আহুতি রয়েছে৷ আগুনের স্তর যখন নাল বের করে ডাকে আর নাচে কেমন যেন মনে হয়, একটা সিগারেট ধরানোর বদলে তাকিয়ে থাকাটাই নেশার!

অদ্ভুত এক সমাপতন! পাখির মতন অনস্বীকার্য যেই কাম, আমরা সাগরের সাথে তুলনা করি; তা আসলে মাছির মতো পারিবারিক আর উচ্ছিষ্টের মতো ঘনিষ্ঠ৷ অনেকদিন আগে শীতল হওয়ার বদলে আমরা কুড়িয়েছি ঠান্ডা পাথর৷ যা পাহাড়ের বরফ থেকে পেয়েছে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান আর শ্রম৷ শুধুমাত্র ভালোবাসা সেই পাথরকে অজ্ঞ আর দামী অলঙ্কার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে৷ পাথর গয়নাই হয়ে যায়, তার আর দাঁত-নখ থাকে না৷ সে আভরণ হয়ে ওঠে, আবরণ হতে গিয়েও নিজের গড়ন ভুলে, ‘দ্রষ্টব্য’ গুণে দুষ্ট হয়ে ওঠে৷

৩— টুকরো

মাংসের মতো ঘনিষ্ঠ সূর্য যখন ছায়া দেয় তখন তাকে ভাবি রোদ৷ আজন্ম দেখে এসছি কুটিরের ছায়ায় বনস্পতি বেড়ে ওঠে৷ ছোট্ট খড়ের সেই ঘর কত লালনে বৃক্ষবেদীকে ঘুম পাড়ায়৷ জল হয়ে ঈশ্বর যখন ধান বুনে ছায়ে এসে জিরোয়, কতকিছুর আওয়াজ হয় চারপাশে! অন্নপূর্ণা ভাত নিয়ে এগোন, আর চারদিকে শস্য ফলার মতো ঝিমায়৷

একটা সাইকেল নিজেও কিন্তু অনুভূতিপ্রবণ হতে পারে৷ তার প্যাডেল যেন বৃত্ত— সকালে যার প্রণতি হয়, রাতে ক্ষুধাকে কেন্দ্রে রেখে পরিবার যাপন৷ অস্তমিত চাঁদ আমরা ঘুমের ঘোরে প্রেয়সী কপাল ভেবে চুমে দিই৷ আর সাইকেল হয়ে ওঠে খোদার গ্রাম, যেখানে আল্লাহ্ সতরঞ্চি পেতে খেলায় মাতেন, কুমীরের জল মাদক হয়ে গ্লাসে গ্লাসে চোঁয়ায় ৷

Facebook Comments

পছন্দের বই