লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শুভাঞ্জন বসুর গল্প

ধাক্কা

এক-একটা দিন এমন হিসেবের বাইরে দিয়ে চলা শুরু করে যে, চেষ্টা করেও আর হাতে আনা যায় না। গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবছিল শিতাংশু। যেগুলো করলে মন মেজাজ ভালো থাকে সবকিছুই প্রায় করা হয়ে গেছে। বাইপাস ধরে বেশ জোরেই গাড়ি চালানো, ক্যাফেতে বসে এক কাপ ক্যাপুচিনো, বেরিয়ে এসে বড়ো একটা সিগারেট… কিন্তু কিছুতেই মন যেন ভালোই হচ্ছে না আজকে। আজকের দিনটা বোধহয় এইভাবেই যাবে, অথবা এই পুরো মাসটা।

যদিও আদ্যোপান্ত রুটিনে জড়িয়ে থাকা শিতাংশু জানে শিডিউলের বাইরে একবার চলে গেলে তা ম্যানেজ করে ওঠা কি ভয়ংকর! সেলস টিমের মিটিং ছিল সকালেই, কিন্তু হয়ে উঠল না। অবস্থাও কী ছিল! অন্বেষা প্রায় এক মাস ধরে ফাইনাল স্যাটেলমেন্টের ডেট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যাব যাব করে কিছুতেই হয়ে উঠছে না। হয়তো ইচ্ছেও নেই তেমন শিতাংশুর। দশ বছরের বিয়ে। দশ বছরের অভ্যেস। তারমধ্যে রুকু আর মিনি। ছয়মাস আগে অন্বেষা যেদিন ওদের নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে সেদিন শিতাংশুর মনে হয়েছিল, থাক যা হয়েছে ভালোই। এবার নিজের জীবনটা নিজের মতন করে গুছিয়ে নেওয়া যাবে। দুই নৌকায় পা দিয়ে কোনোদিনই চলতে পারেনি। আগামীতেও হয়তো সম্ভব হত না। আর সংসারের জন্যে অফিস, কাজ, মিটিং এ-সব বাদ দিয়ে একটা গোটা জীবন কাটানো প্রায় দুঃস্বপ্নের মতোই লাগে শিতাংশুর। দিনের ফাইনাল মিটিংটা না হলেই মাথা খিঁচড়ে থাকে। বাড়ি এসে হুইস্কির সাথে ফাইনাল রিপোর্টটা বানাতে বানাতেই ও দিন শেষ করার আরাম খুঁজে পায়। এরকম কী হতে পারে না একজনের জীবন! আলবাত হতে পারে। এ-সব ভাবনা সেদিন ভিড় করে এসেছিল শিতাংশুর মাথায়। অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করছিল সেদিন। কিন্তু শুধু ওই কয়েকটা দিনের জন্যেই বোধহয়।

ছুটি, হঠাৎ আসে বলেই হয়তো আরামের। একবার অভ্যেস হয়ে গেলে ছুটি অকাল-বার্ধক্যেরই সমান। শুধু ওই রুকু আর মিনির কাছ থেকেই ছুটিটা মানতে পারেনি শিতাংশু। ওদের স্কুলের ফিজ থেকে হঠাৎ সারপ্রাইজ দেওয়ার ছোট্ট ছোট্ট আনন্দগুলো থেকে বিরত থাকাটা সম্ভব হচ্ছিল না ওর পক্ষে। ওরা চলে যাওয়ার এক মাসের মধ্যেই শিতাংশু বুঝতে পেরেছিল ও ‘বাবা’। অফিস, মিটিং, কাজ, সংসার, বাড়ি বাদে একটা আলাদা সম্পর্ক।

অন্বেষা একটা টাকাও দাবি করেনি। রুকু আর মিনির স্কুলের টাকাটাও নয়। বড়ো একটা চাকরি করে এখন। দু-জনকে বড়ো করে যথেষ্ট আরামে রাখার সামর্থ্য আছে অন্বেষার। তাই বোধহয় ছুটি নয়, ও মুক্তি চেয়েছিল শিতাংশুর কাছে। প্রথম প্রথম অভিযোগ, আমি পারলে তুমি পারবে না কেন! রুকু আর মিনি কী শুধু আমার দায়িত্ব! সংসারটা ওই মাসের শেষে টাকাটা দিয়ে দিলেই মিটে যায় না, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি… শিতাংশুর কিচ্ছু যায় আসত না এ-সব কথায়। দিনের একটা সময় ও রুটিনের মতন রেখে দিয়েছিল অন্বেষার এইসব কথা শোনার জন্য। কিন্তু সেদিন যখন আর অনুযোগ না করে অন্বেষা ঘরে এসে সোজা জানিয়ে দিল চলে যাচ্ছে ওরা… না সেদিন নয়, বেরিয়ে যাওয়ার এক মাস পর একদিন হঠাৎ ভয়ে কেঁপে উঠেছিল শিতাংশু। এবার কী? এবার কে! কোনো উত্তর ছিল না। এতদিন যেই শান্তি, যেই একার সময়, যেই অফিসের কাজ অলংকার হিসেবে দেখে আসছিল শিতাংশু, সেদিন যেন হঠাৎ সে-সব বোঝা হয়ে গিয়েছিল ওর শরীরের।

কিন্তু থেমে থাকা— স্বভাব নয় ওর। জীবনটাকে রুটিনে বেঁধে ফেলছিল। একটা সময়ও দিচ্ছিল না নিজেকে যখন ওর মনে পড়ে অন্বেষার কথা। তারপর আস্তে আস্তে ভুলেও গিয়েছিল প্রায়। শুধু ওই মাঝেমাঝে ডিভোর্স হেয়ারিংয়ে যাওয়া। ব্যাস, গত কয়েকমাসে এও অভ্যেস হয়ে গিয়েছে শিতাংশুর।

আজ সকালে ফাইনাল স্যাটেলমেন্ট ছিল অন্বেষার সাথে। কিন্তু অফিসের মিটিংটা না করলেই নয়। ডেটটা যদিও দিয়েছিল শিতাংশুই কিন্তু গাড়িটা বার করে কী যে হল, কিছুতেই অন্বেষার ওখানে যেতে মন চাইল না। শিতাংশুর একটা স্বাক্ষর বড়ো বড়ো ডিল ফাইনাল করে দিয়েছে অফিসে, কোটি কোটি টাকার লাভ এসেছে অফিসে— সেই একটা স্বাক্ষরই রুকু আর মিনিকে ‘অফিসিয়ালি’ আলাদা করে দেবে! নিজের কলম আর হাতের ওপর হঠাৎ ঘেন্না ধরে গিয়েছিল শিতাংশুর। মনে হয়েছিল, ওর নয়— কলমের বুক পকেটে থাকে শিতাংশু বিশ্বাস।

ফোনটা বার করেও, ডায়াল করার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি। ম্যাসেজে জানিয়ে দিয়েছিল— আজ আসা সম্ভব নয়। জানত, এরপর কলের পর কল আসবে অন্বেষার, ম্যাসেজ আসবে, হয়তো দু-একটা বাজে কথাও। প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল সেইরকমই। কিন্তু অদ্ভুত একটা রাগ হল তারপর। কনফারেন্স রুমে বসেছিল তখন। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দু-ঘণ্টা লেট। অথচ কর্পোরেট কালচারে কিছু বলাও যাবে না। সময়-জ্ঞানহীন মানুষকে সহ্য করতে পারে না শিতাংশু কিন্তু লোকটা যখন পঁচিশ কোটি টাকার ডিলের কথা নিয়ে মিটিংয়ে আসে তখন বোধহয় নিজের আদর্শ একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেওয়াটাই কালচারের মধ্যেই পরে। কনফারেন্স রুমে বসে পিপিটিটা গুছিয়ে নিচ্ছিল শিতাংশু। তখনই জানতে পারল, আরও একটা ঘণ্টার মতো লাগবে ওনার আসতে। ফোনটা হাতে নিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল অন্বেষার কথা। না জানি, কী সব ম্যাসেজ করে রেখেছে। ফোনটা সাইলেন্ট এ ছিল, কতবার যে ফোন করেছে কে জানে! লকটা খুলতেই অবাক হয়ে গেল ও। অন্বেষার ম্যাসেজ। শুধু একটাই। ‘ওকে’। ও যেতে পারবে না জেনে অন্বেষার শুধু একটাই ম্যাসেজ। কোনো ফোন নয়, প্রশ্ন নয়। রাগে আগুন জ্বলে উঠল শিতাংশুর মাথায়। কিচ্ছু কী এসে যায় না অন্বেষার! আসতে পারবে না জেনে এখন রাগও হয় না! এতটা দূরে চলে গিয়েছে নাকি দু-জন! কিন্তু শিতাংশু নিজেও কি তাই করেনি? এতদিন ধরে পিছিয়ে দিতে দিতে আজকের দিনটা ঠিক করেছিল ওই। তারপর শিতাংশু-ও তো কোনো ফোন না করে শুধু একটা ম্যাসেজ করেছে। একটাই। ওর তো রাগ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হচ্ছে, জানে না কেন কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে। রাগ সহ্য করে নেওয়া যায় কিন্তু অবহেলা নয়। যুক্তির ধার না ধরে নিজেকে আর বোঝানো বন্ধ করে দিয়েছিল শিতাংশু। অসম্ভব রাগে মাথাটা দপদপ করছে। কিছু একটা করে ফেললেই যেন ভালো হয়।

ফোন করে ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জানিয়ে দিয়েছিল আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় ওকে এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে হবে। মিটিং রিশিডিউল টাইম ও পরে মেইল করে দেবে। ইচ্ছে করেই নিজেকে একটু প্রাধান্য দিয়েছিল। সবসময় মানুষের মন জুগিয়ে চলা যায় না। অনেক হয়েছে। মানুষের সময়ের কোনো দাম নেই নাকি! কাওকে কিচ্ছু না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিল শিতাংশু। বাইপাস ধরে গাড়ি চালিয়েছিল অনেকক্ষণ। বেশ জোরে। মাথাটা একটু ঠান্ডা হতেই মনে হল, কাজটা ঠিক হয়নি। পার্সোনাল লাইফকে, প্রফেশনাল লাইফের সাথে কোনোদিনই মেলায়নিও। কিন্তু আজ হঠাৎ কী হল! এইভাবে কেন হঠাৎ বোকার মতো কাজটা করে বসল! গাড়িটা সাইন্স সিটির সাইডে রেখে বেরিয়ে এল বাইরে। একটা সিগারেট খেতে খেতে অনেকক্ষণ ভাবল কী করা যায়। ডিলটা একবার হাত থেকে ফস্কে গেলে অনেক জবাব দিতে হবে ওপর মহলে। তারমধ্যে ওর নিজের ইনসেন্টিভের ব্যাপার বাদ দিলেও রেপুটেশনের ব্যাপার আছে। অফিসের সব বড়ো ডিলে শিতাংশু। যেখানে কেউ কিচ্ছু করে উঠতে পারছে না সেখানেইও। আজ ছোট্ট একটা রাগের জন্যে এ কী করে বসল! ফোনটা বার করে আরেকবার দেখে নিল কোনো ম্যাসেজ বা ফোন এসেছে কিনা অন্বেষার। না, আসেনি। চুলোয় যাক সব। এরপর শিতাংশু নিজেই ঝোলাবে আরও বেশ কয়েকমাস অন্বেষাকে।

নিজেকে একটু শান্ত করে ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ফোন করে বেশ নরম গলায় বুঝিয়ে বলল কয়েকটা মিটিংয়ের কথা। হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল, ওনার স্ত্রীয়ের কথা, ছেলে মেয়ের কথা। গদগদ হয়ে বলল, আমি জানি আপনি প্রচণ্ড ব্যস্ত মানুষ। এরকম একটু আধটু লেট তো হতেই পারে। তবে একটু আমাদের দিকটাও দেখবেন। এ সপ্তাহের মধ্যেই যদি মিটিংটা আবার সেরে ফেলা যায়।

আরও কিছু স্তাবকতা করে ফোন রেখে গাড়িতে এসে বসল। এখন দরদর করে ঘামছে শরীর। এসিটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিয়েও লাভ হল না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না, কিচ্ছু না। অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখল লুকিং গ্লাসে। নিজের দিকে। এ কি করল ও! এতটা নীচে কবে নেমে গেছে শিতাংশু! ওর একটা ডেট পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে বিভিন্ন অফিস। এখন আর সিভি ড্রপ করতে হয়না। মুখোমুখি আলোচনা হয় স্যালারি নিয়ে। কুড়ি বছরের এত পরিশ্রম, এত লড়াই শেষে স্তাবকের দলে এনে ফেলল শিতাংশুকে! কেন ফোনটা করতে গেল ও! কী হত? আরেকদিন নিজেই হয়তো মিটিং সেট করত এমডি। হয়তো-বা কাল। কিন্তু আজকে যখন ওর পাশে কেউ নেই তখন নিজের সম্মানটাকে তো অন্তত নিজের পাশে রাখতে পারত! সব ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিল শিতাংশুর। বুঝতে পারছিল, আজকের দিনটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে আর কিছু করা সম্ভব নয়।

শুধু কি অন্বেষা ম্যাসেজ করেনি বলে! ম্যাসেজে দু-চারটে বাজে কথা শোনালেই কি ভালো লাগত ওর! তাই হয়তো। নাকি নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছিল পৃথিবীর কাছে। অন্বেষার কিছু যায় আসে না। রুকু মিনি ফোন করে খবর নেয় না বাবার, ম্যানেজিং ডিরেক্টর দু-ঘণ্টা অপেক্ষা করায় শিতাংশুকে। তাহলে জীবনের কুড়ি বছরে এত পরিশ্রম কোথায় এনে ফেলেছে শিতাংশুকে! ওর সামনে কে! পেছনে কে! পাশে কে!

গাড়ির স্পিড আরও একটু বাড়িয়ে দিল শিতাংশু। আরও একটু… কিছু একটা করতে পারলে ভালো হত। কীভাবে রাগটা কমানো যাবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। নিজেকে শান্ত করতে পারছে না কিছুতেই।

চিংড়িহাটার ফ্লাইওভার ধরে সেক্টর ফাইভের দিকে ঢুকতেই দেখল গাড়ির বিশাল লাইন। মুখ বার করে ট্যাক্সি ওয়ালার কাছে জানতে পারল নিক্কোপার্ক পর্যন্ত আটকে আছে সব।
একের পর এক। একের পর এক। অশান্তির দিনে সব দুর্ভোগই যেন বেশি বেশি করে চোখে পড়ে। আজ লাল সিগন্যালটাও মনে হচ্ছে বেশিক্ষণ ধরে জ্বলছে, গাড়ির ভিড় প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি, পাশের হলুদ ট্যাক্সিটা পুরো গায়ের ওপর এসে দাঁড়িয়েছে, হর্ন দিচ্ছে অকারণেই। কাচটা তুলে জোরে গান চালিয়ে দিল শিতাংশু। আর নেওয়া সম্ভব নয় এ-সব। যথেষ্ট হয়েছে।
জ্যামটা ছেড়ে বেরোতে পাক্কা দেড় ঘণ্টা লাগল। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। জ্যাম যদিও ছেড়েছে কিন্তু গাড়ি চলছে ওই আস্তে আস্তেই। বিরক্তিকর লাগল সবকিছু। ভেবেছিল টেনে বেরিয়ে সিটি সেন্টার টু-তে গিয়ে একটা সিনেমা দেখবে বা একটু বসে থাকবে ফাঁকা রাস্তায়। কিন্তু তারবদলে…

অন্বেষার কথা মনে পড়ল আবার, রুকু মিনির কথা, আঠারো বছরের বিবাহিত জীবন, হুইস্কি, রিপোর্ট, বস, কেবিন, রিপোর্ট, এক্সেল শিট, পেট্রোল, ই.এম.আই…

এ-সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিজের অজান্তেই ধাক্কা মেরে বসল সামনের একটা রিকশাকে। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাটা মুখ থুবড়ে পড়েছে রাস্তায়। কেটে গেছে বোধহয় কপালে। আশেপাশের রিকশাওয়ালারা দৌড়ে দৌড়ে আসছে এদিকে। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকে তুলে বসাল রাস্তার ওপর। এক-দুটো লোকও জমে গেছে আশেপাশে। কয়েকটা লোক এসে ধাক্কা ধাক্কি করছে জানলার ওপর। শিতাংশু জানলা একটু নামিয়ে মুখ বার করে জিজ্ঞাসা করলো— ‘লেগেছে নাকি?’
একটা জোয়ান মতন রিকশাওয়ালা দৌড়ে এসে বললো— ‘গাড়িতে বসে আছেন বলে কী মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি! মাতালের মতো গাড়ি চালাচ্ছেন।’

শিতাংশু আর ঠিক রাখতে পারল না নিজেকে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে বলল— ‘জানোয়ারের মতো কথা বলবি না শুয়ার। মাতাল আবার কী কথা!’
জোয়ান রিকশাওয়ালা প্রায় সামনে এসে বলল— ‘আপনি গাড়িতে আছেন বলে খিস্তি করতে পারেন! বেশি কথা বললে এখানেই মারব সবাই মিলে।’

শিতাংশু আর সামলাতে পারল না নিজেকে। জোয়ান রিকশাওয়ালাটাকে সপাটে একটা চড় বসিয়ে পকেট থেকে দু-হাজার টাকার নোট বার করে এগিয়ে গেল রাস্তার ওপর বসে থাকা বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার দিকে। কাছে গিয়ে দু-হাজার টাকা দিয়ে একটু জোর গলায়ই বলল— ‘এটা রাখ। ওষুধ কিনে নিস।’

কিন্তু ততক্ষণে আশেপাশের লোকজন, রিকশাওয়ালারা সব জড়ো হয়ে গেছে। একটা লোক এগিয়ে আসতেই বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা দৌড়ে এসে ওদের থামিয়ে বলল— ‘যেতে দেন বাবুকে। ভুল করে মেরে দিয়েছে।’ পকেটে সদ্য পাওয়া দু-হাজার টাকার নোট।

ভিড়টা দাঁড়িয়ে গেল হঠাৎ করে। শিতাংশু গর্ব-অহংকারে জয়ী সেনাপতির মতন আবার এসে বসল গাড়িতে। জানালাটা আটকে জোরে বেরিয়ে গেল সামনের দিকে। মাথা নত মুখগুলোর কথা ভেবে অনেকটা শান্ত লাগছিল এবার নিজেকে।

কিন্তু এক ধাক্কায়, সবার বিরুদ্ধে শিতাংশুর সব অভিযোগ মিথ্যে হয়ে গিয়েছিল সেদিন…

Facebook Comments

পছন্দের বই