গৌরাঙ্গ মণ্ডলের কবিতা
মহাজন
ছেঁড়া ল্যাঙটের মতো পুরোনো হাতের লেখা
কাউকে দেখাই না বা
দেখি না নিজেও
কাগ্ ঠ্যাং, বগ ঠ্যাং, হাতের রেখারা আর
হাতের লেখাও
ঘষ্ ঘষ্ উড়ে যেতো আমার খাতার থেকে টুকির খাতায়
রুই-এরা যেমন ওড়ে, ছিপের কাঁটায় গেঁথে
অচিন ডাঙায়
অথচ, মাছের খিদে
লিখে রাখে মহাজন, ঋণ বাবদের আঁকা ছকে
সুদখোর জানে শুধু, কীভাবে রুপোর কাঠি মুঠো মুড়ে
সোনা করা যায়
বিড়ম্বনা
১
কিছুই নিঁখুত নেই
‘বিষ-শ্বাস’ বানান কি ভুল!
আলোয় হোঁচট খাই
রক্ত-মুত-রহস্যে অদ্ভুত
অবিচল। মায়া হয়, মায়ায় পাঠালে
আয়নার বদলে নিন্দুক
২
অজুহাত, তুমিই ঈশ্বর
জটিল গহ্বরে অস্থি ছিঁড়ে আনো প্রাণ
শেকড় ছোঁয়ালে মন্ত্র, বিনয়! বিনয়!
”স্নেহের আদলে হিংসা এবার কমাও, সহদূত”
সম্পর্ক
১
আহ্লাদে নিহত গাছ
ঝুঁকে থাকে, মৃদু লজ্জামুখ
ম্রিয়পাতা শরীরে এখনও
সম্পর্ক নেভাবে বলে তুলোধনা করেছে জীবন
২
শপথ পেরোতে হবে, যাই
সব ভুয়ো, কিছুই ছিল না
আমরা স্বভাবে পিছুখোর
চুপ থাকি, ভুলিনি ভর্ৎসনা
উন্মোচন
গোপন চেতনা থেকে ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে
জিহ্বার ফলায় ঢালি বিন্দু-দুই রঙিন ড্রপার;
অসুখী শরীরে রাত, মনে হয় চাঁদের প্যারোডি
কেবল লালসাহীন, দিনভর চড়িয়েছি নেশা
ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ওঠে অবহেলা, শিরার ভেতর
দ্রুত তর্জনীর মুখ ছুঁয়ে গেলে গণ্ডনালীকোষ
দেহ উদ্গীরণ হয়– ছেলেখেলা, যা কিছু আগুন
তুমি তো চেনোনি ঢেউ, উলঙ্গ পাঁজর জুড়ে স্নান
উত্তাপ চিনেছে শুধু– দ্রবীভূত
সাবানের ফেনা
গল্পশেষে
ভেঙেছ বিরাম
তোমার ফেরার চোখে বিহ্বলে জড়িয়ে থাকে শোক
ডুবে যায় বেখেয়াল, ত্রিকাল হদিস
এমন গহীন আলো, তারার যাপনে
বিষাদের গায়ে গায়ে
আলাপ ছড়ায়
নেই কোলাহল, এই নীরব কিনারে
কে নেবে, শেষের পর নটেগাছ বাঁচানোর দায়!
