
গৌরাঙ্গ মণ্ডলের কবিতা
দাম
ঘুঁটে শুকনো হয়, খসে পড়ে
দেওয়ালের থেকে
কেউ না চিনুক, তাকে
উনুন চিনেছে
ঝরে যাওয়াদেরও থাকে
আগুনের গূঢ় সম্ভাবনা
অনিয়মে
হাত বোলালেই বুঝি শান্ত হয় সব?
নিয়মের ঘোরে
নারী থাকে না বলেই
কচ্ছপের বিপরীতে জাগাতে পেরেছি তার স্তন
স্নানঘর
‘সাবান’ শব্দের থেকে খুঁটে নিই বন
বনের ভেতরে এই গাছপালা, তোর
ঘাড়ের দিকের ভেজা চুল
চুলের কোটরে আমি সুতোহীন পাখি
গতজন্মে স্নান সেরে কতবার কেঁদেছি, একাকী
জন্মবৃত্তান্ত
রাত্রি একটা ব্লাউজ। আলো তার স্তন
গভীর, অপেক্ষারত পুরুষ যখন
ভোর সেজে দাঁড়ায়, হে নারী
লাজুক চাহনি পারে সহজেই ধুয়ে দিতে
বহ্নি, মহামারী
হুক খুললাম। দেখি, কোকিলবিহীন
আকাশ জাগাতে জানে সম্ভোগের গানও
দিন তো তোমারই শস্য। আর এভাবেই দিনে দিনে
মহাকাল আমাদের হাতেই ছড়ানো
তোমার কথা
ভাবলেই কি ভাব হয়ে যায়, যদি
হঠাৎ হঠাৎ করে বিঁধেই না ওঠে সে গোপন!
তেমন ঠোঁটের কাছে সুতোটির
সেভাবেও
খুলে যেতে পারা
মূলত বুনন
বিপথে না এসে বাতাসও তো কতবার
সুরজন্মে পড়েছে বিপাকে
বাঁশির দু’দিকে খোলা, তবু
বেজে উঠবার লোভে
নিজের বুকের কাছে আরও কিছু ফুটো করে রাখে
কলহ
১
নুনের আন্দাজ থেকে যা যা সরে গেল
তা থেকেই লিখে নিই— সম্পর্ক আসলে
সমুদ্র অথবা কোনো নুনের পাহাড়
দাহ্যে ভরা লোক, আমি
চোখ খুললেই দেখি আগুনে জড়িয়ে আছে
অপরের গ্লানি
নুনে যা ভেঙেছি, তাকে অনুনয়ে জুড়ে নিতে জানি
২
যা ঘটে তা— ঘটনার কাছাকাছি, তাকে
ঘটনা না বলে
স্নায়ুদোষ ভেবে মেনে নাও
ভেঙে যাওয়া জরুরি বলেই
টেবিলের থেকে, একদিন
একটি একটি ভুল পড়ে যাবে
নীচে
জোনাকি দেবে না, যদি
বিচূর্ণ সেলাই নিয়ে শুধরে নিতে আসি?
তোমারই তো হাতে গড়া প্রতিমা, ক্ষমার
ফুঁ এসে নেভায় যাকে
ফুঁ তাকেই নিজে জ্বালিয়েছে কতবার
ভালোবাসবার দিনে
আঁকড়ে আছি দ্বিধার মতন
ভালোবাসা, তোমার আড়ালে
স্রোত তো গভীরে ছিল। তাকে আজ কী লোভে জাগাব!
দায় থাকে। চুম্বনেরও। হাড়হীন হয়ে
সম্মতি জানাতে আসে জলের কায়দায়
কেননা, গোপন জানে
কঠিন পারে না হতে অপরের ম্লান
ও পথ পুরোনো পথ। কাঁটাতার। সেসবের নীচে
জড়িয়ে জাগানো ছিল আমাদের প্রথম শ্লোগান
উভমুখী
দোষ একলা থাকে না। তারও পাশে জেগে থাকতে হয়
আয়ু বলতে যতক্ষণ কষ্ট দিচ্ছে কেউ
নামাবলী গায়ে যারা সঙ্গমে এল না
তাদের ধ্যানের মধ্যে ঢুকে পড়ি
অকারণ চিন্তা হয়ে। বলি—
দোষ একলা থাকে না
তোমাকে সাঁতারে পেয়ে জলও তো কেঁপেছে প্রতিবার
প্রেম
ঘেন্নাকে কালো করে যারা এঁকেছিল
তাদের জীবনী লেখা কাঠের পেন্সিলে
ঘেন্না দাও। ঘেন্না যেমনই হোক তাকে গায়ে মাখি
চুমু দিই, অনাদরে আদর ছোঁয়াই
থুতু না ছেটালে, এত সহজেই
সুতোকে নিজের করে ছুঁচ তার জীবনে জড়াত?
ময়দান
১
তছনছ হয়ে যাক। আমারই কারণে
যে বল মাঠের দূরে ছেড়ে যাচ্ছে। তাকে খুঁজে আনি
বলি— সীমানায় থাকো
সীমাহীন যা কিছুই, নিজেকে গুছিয়ে তারা
ফেরাতে পারে না
২
লেগস্পিন বড়ো উদাসীন
যেন লোভহীন
উইকেট তাকে দেখেও ডাকে না
মায়ায় পড়ো না তার। সে কেবল বোঝাতে চেয়েছে
স্পর্শের ভেতরে এলে
কী সহজে মুছে যাওয়া যায়
৩
মানি না, মানি না আমি । স্কোরবোর্ড সংশোধিত হোক
সমূহ পেরিয়ে
কিপারের হাতে যাওয়া বল
কী জেদে যে শূন্য দেয় এরা!
Facebook Comments