জয়ীতা ব্যানার্জীর কবিতা
বিরহ
যেকোনো প্রকার-ই ছেড়ে যাওয়া আসলে চিরন্তন
এই বোধে রাত নেমে এল
দূরে লেবু পাকবার ঘ্রাণে মৃদুমন্দ বিরহ জেগেছে
নিদ্রা
পরশ্রীকাতর তুমি একবার হও অন্তত
এই মধ্যরাতে যত নিদ্রামগ্ন নক্ষত্র রয়েছে, তাদের
জনে জনে ডেকে তুলে পাখিদের কান্না শোনাও
দূরত্ব
তুমি জানো কীভাবে পেরিয়ে যেতে হয়
অথচ সাধন এই, আমাকে বোঝালে
আমি বুঝি আলোটিকে। ছুঁই তবু ছায়া জোটে তার অনুপাতে
প্রস্তাব
বিপদসীমায় ফোটা তিলখানি আগে তো দেখিনি
আলোহীনতায় তাকে জোনাকি ভেবেছি এতদিন। আজ
চাঁদটির কাছে এই ভুল স্বীকার করতে যদি দাও
অপেক্ষা
ঋতুবদল বিষয়ে এযাবৎ আলোচনা হয়েছে অনেক
সবটুকু সহমত নই। তোমারও হঠাৎ কিছু সংশয় দেখা দিলে বোলো
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে যেকোনও দিকেই চলে যাওয়া যায়
সন্তান
উচ্চতম ডালটিতে শিকড়ের জল পৌঁছায়
আলো বাতাসের খেলা চলে
আবার পুষ্টিরসও ক্রমে শিকড়েই নেমে আসে
পুরস্কার
শ্রোতার আসনে সেইসব সারসেরা বসে আছে
পিচ্ছিল কবিতা শেষে হাততালি দিলে উড়ে যাবে
কবিতা লিখিয়ে তুমি বহু সঙ্কোচে তবু মঞ্চে দাঁড়ালে
সন্ধে
এখন নীরবতায় আজানের শব্দ মিশেছে। পোষা হাঁসেদের ডাক
শঙ্খধ্বনিও স্পষ্ট অথচ কই একটিও তারা ফুটছে না
কথা বলতে বলতে কেন আচমকা চুপ করে গেলে
প্রশ্ন
চলে গেছ। সেও আজ বহুদিন হল। অস্তগামী সূর্য
আর “তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়”, দুজনেরই বয়স হয়েছে
নক্ষত্রের পরিণতি এখনও কি সমানভাবে বিশ্বাস করো
ভাষা
জল, ছল-চাতুরি, আবেগ, নেশা
যৌনতা, বিরহ, প্রতিবাদ— ফর্দ মিলিয়ে সব রাখা হল
ও কী! তাও ঝুঁকে পড়ে কী খুঁজছ নিজের ভিতর
শাশ্বত
আমার এ চেয়ে থাকা একদিন শেষ হবে। ভাবি
আর চাঁদের অনতিদূরে অজস্র বিন্দু ফুটে ওঠে
যে নক্ষত্র নেই তারও আলো এসে পৃথিবীতে পড়ে
অতীত
গুলি খেলবার লোভে একসাথে পালিয়ে এসেছি। অথচ প্রথম দানে
তোমাকেই নির্মোহ ভাবি আর খেলতে খেলতে দেখি একদিন
আমার সীমিত মুঠি। তোমার পকেট ক্রমে ব্রহ্মাণ্ডের মতো বিশাল হয়েছে
স্মৃতি
প্রিয় মানুষের ছেড়ে যাওয়া পোশাক যেমন
দীর্ঘ সময় পর হাতে নিলে চমক লাগে না
অথচ ঘ্রাণের ঘোরে একই শ্বাস বারবার নিতে ইচ্ছে করে
পরিচিতি
সামান্য মানুষ আমি। ফুল, শিশু, গান ভালোবাসি। তবে
পৃথিবীতে জন্মে অবধি এতকাল যাকে যাকে স্পর্শ করেছি
আজ স্পষ্ট বুঝি তারা সকলেই মাগল ছিল না
যৌনতা
তুমি পবিত্র, নিরাকার, সর্বকালীন
মানুষেরই ভ্রমে এই তুচ্ছ সামাজিকতায় জড়িয়ে পড়েছ
যতই বেরোতে চাও আরও জট পাকে। রক্তপাত হয়
প্রেম
মাধুরীলতার মতো ফুটে আছ। মনে হয়
একটু অসাবধানে শাখা থেকে ঝরে পড়ে যাবে
এই বোধ, সংশয় আমাকেও ঘুমোতে দেয় না সারারাত
রেডিও
শৌখিন কাঠের ফ্রেম থেকে শব্দ বেরত। তখন
আমি তো অপরিণত শ্রোতা। মুগ্ধতাবশত
বরাবর আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছি
চাঁদ
বালিয়ারিটির মতো টানা টানা মেঘ এখন আকাশে
দিকভ্রষ্ট জাহাজেরা একা বাতিঘর দেখে নোঙর ফেলেছে
নিজ আলোহীনতার কথা সে তো আজও স্বীকার করেনি
জ্বর
পারদ-এ বিশ্বাস নেই। ঘাম-এ আছে কিছুটা যদিও
হাতের উল্টো পিঠে কতটুকু বোঝা যাবে আর
ঠোঁটও পরিমাপ জানে, এই তথ্য প্রাণপনে গোপন করেছি
জীবন
কঠিন অংকগুলি মুছে ফেলে দাঁড়ালো শিশুটি
এমন অনেক অংক চাইলেই মিলে যাবে ভেবে
সে এখন ছুটে গেছে পাকা পেয়ারার খোঁজ পেয়ে
কবিতা
স্কুলমাঠে সন্ধে নেমেছে। আর যুব আষাঢ়ের মেঘে
চৌকিদার বিলাবল তার বাঁশিখানি হাতে নিয়েছেন
এই ক্ষণ, আলো, অশ্রু, সুর, বারিপাত। সামান্যই নৈবিদ্য তোমার