নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
ছায়ামানুষের খেলনাগাড়ি
৬
স্বপ্নার্জিত হাসিগুলো যেন আর কোনোদিন
সংক্রামিত হবে না শরীরে
ঠোঁট নড়ছে অচেনা ভাষায়
ঘুমের কুয়াশা থেকে প্রভাতফেরির দল বিউগল বাজিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে পাখির স্বরূপে
দুচোখে বিড়াল মরে আছে
হাত-পা অবশ হয়ে অনিশ্বাস জলের পাথর
দোনলা সকাল ঝুলবারান্দার ধারে উবু হয়ে
ঘষে ঘষে সাফ করছে মরচেধরা আলোর মেশিন
৭
আধখাওয়া কুয়াশার ফলগুলো মাটিতে ছড়ানো
রাত্রির ভিতরে রাত্রি গুম হয়ে আছে
ডোরাকাটা অন্ধকার ডোরাকাটা আলোর ভিতরে
ফিকে হয়ে উড়ে যাওয়া নিজের ছায়ার খোঁজে
পথে পথ লুটাচ্ছে পাগল
বিড়াল লাফিয়ে পড়ছে চৌকো থেকে গোলে
সুঠাম প্রহর, ভারী বুট
শ্বাসের সুড়ঙ্গ থেকে উড়ে আসছে সোনাচুর
দৃষ্টিহীন উটের জাহাজ
৮
বিশীর্ণ গলির মুখে দমবন্ধ পুলিশজিপ গোঁজা
ড্রেন থেকে রস কাটছে ফোঁটায় ফোঁটায়
গুলাবিমহল থেকে পাপড়ি ঝরছে দূরের আকাশে
মাছি উড়ছে কাটাফলে
এলোখোঁপা সস্তাদরে হাওয়ায় টাঙানো
রেডিও বগলে নিয়ে টলোমলো পানের দোকান
মাটির প্রদীপগুলো আলগোছে দরজা খুলে রেখে
ঠোঁট কামড়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে—
বেলুনওলার সুতো ছিঁড়ে
আলতো ঠেলে ঢুকে যাচ্ছে চামড়ায় বাঁধানো বাঁকাহাসি
৯
চাক চাক করে কাটা নরম আলোর মাংস
মেঝেয় ছড়ানো
সিমেন্টের জাফরি থেকে রক্ত পড়ছে ফোঁটায় ফোঁটায়
থাবা সামলে অন্ধকার খাবার টেবিল
ফুরনো রেকর্ড ঘুরছে
অসাড় পিনের স্পর্শে শিউরে উঠছে হাওয়া
দরজাগুলো একে একে মেলে ধরছে জড়োয়া পাঁজর
ভিতর গুনগুন বেজে আকারবিস্মৃত এক ছায়া
ঠোঁটে সিগারেট আঁকড়ে এগোতে এগোতে
সুরের কিনারা থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে জোনাকিমুঠোয়
১০
যেসব দৃশ্যের কোনো বিস্ময়চিহ্ন নেই
তারা সাজঘরের ঘোলা আয়নার ভিতরে ডুবে গেছে
দুলে দুলে গোঙাচ্ছে মেরুন
মাটি চাপা দেওয়া চৌকো পৃথিবীর চিলেকোঠা খুঁড়ে
সন্ধের কুকুরগুলো টেনে আনছে বরফের হাসি
সড়ক দৌড়চ্ছে আর
পন্থা থেকে ছিঁড়ে নেওয়া পথগুলো ঢলে পড়ছে বুকে
উঁচু-নিচু কূটাভাস দু’পায়ে সমান করে করে
রোডরোলার ভিতরে নিঝুম
বাঁকানো আলোর নখে ঝুলে আছে নিটোল আকাশ