নিয়াজুল হকের কবিতা
ক্ষুধার্ত সভ্যতা
আমাদের যাতায়াতের ট্রেনটা
ঘাসের মতো সবুজই থেকে গেল
অনেকটা গাছপালার মতো,
কিছুটা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ের মতো
এমনকি উটের মতোও খানিকটা
বালিঝড়ের ভেতর
উটের কুঁজের ওপর চড়ে
আমরা একটি ক্ষুধার্ত সভ্যতা পেরিয়ে যাচ্ছি
দিল্লি বহুদূর নয়
বসন্তের যেসব পলাশ
ভেতরে ঢুকে পড়েছিল
তারাই বেরিয়ে আসছে আজ
তাদেরই আর্তনাদগুলো
ছুটে বেড়াচ্ছে আকাশে
তাদেরই রক্তপতনে
পিচরাস্তায় কালচে দাগ পড়ে গেল
গাছের কোটরে কোটরে লেখা হয়ে গেল ইতিহাস
আজ দিল্লি বহুদূর নয়
আমাদের ঘরের খুব কাছে এসে থেমেছে
সিকিউরিটি
হেলমেট পরে নিয়েছি
এবার দুরন্ত গাড়ি ছোটাব
হাড়গোড় ভেঙে যাক
হাসপাতালে গিয়ে
কয়েক দিন চিত হয়ে শুয়ে থাকি
হেলমেটের কাঁধে ভর করে
একটি অক্ষত মাথা নিয়ে
বাড়ি ফিরতে চাই
একমাত্র হেলমেট ছাড়া
আমার আর কোনও সিকিউরিটি নেই
প্রতিভাবান
সারাজীবন আগুন জ্বালিয়ে
মুখের কাছে এনে ধরেছি
তার মধ্যেও খামতি থেকে গেছে
প্রতি ঠোলে পঞ্চাশটা কাঠি থাকে
হাওয়াকে এড়িয়ে ক’টাইবা জ্বালাতে পেরেছি
বড়োজোর সাঁইত্রিশ, আটত্রিশ
খুব বেশি হলে চল্লিশ
হাওয়াকে দুমড়ে দিয়ে
কেউ কেউ পঞ্চাশটাও পারে
সেইসব ধূমপায়ীদেরই আমরা
প্রতিভাবান বলি
গো-হারান
এই যে চারপাশ থেকে
এত ছলাৎ ছলাৎ শব্দ
তোমরা শুনতে পেয়েছ ?
আমার বিশ্বাস
পাওনি
আমার বিশ্বাস
পাওয়ার চেষ্টাই করোনি
শুধুই গোরুজবাই
শুধুই চামড়া ছাড়ানো, হাড় থোড়া, ভাগা ফেলা
তোমরা কতটা নিষ্পাপ
শুধু তো আমি জানলেই হবে না
তোমাদের চকচকে ছুরি এবং হিংস্র ভাবমূর্তি নিয়ে
মাঠে মাঠে ফুটবল খেলা হয়
প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই
তোমরা গো-হারান হও
ঈশ্বরকে খুঁজে পেলাম
কোনও ঈশ্বরকেই দেখলাম না
রাস্তায় এসে দাঁড়াতে
কুশল বিনিময় করে হাত নেড়ে
সেই যে গর্তে ঢুকে পড়লেন
আর বেরলেন না
কোনও উচ্চবাচ্য নেই
ছোট্ট কাঠবেড়ালির মতোও অন্তত
একটু উঁকি মেরে দেখলেন না
ঈশ্বরকে আগে বাঘ মনে করতাম
আমি ভুল ভেবেছিলাম
এখন দেখছি একটা শেয়ালও নয়
অবশেষে ঈশ্বরকে খুঁজে পেলাম
হাসপাতালে গিয়ে
সমস্ত ঈশ্বর হাসপাতালে জড়ো হয়ে
মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়া দেশকে
সর্বশক্তি দিয়ে টেনে ধরছেন