প্রীতম বসাকের কবিতা
সামগান
জল পড়ার শব্দে জেগে উঠছে যূথগণ
রসুইখানা থেকে উড়ে যাচ্ছে ভাতগান
পুরুষ জেগে উঠছে মন্ত্র নিয়ে
রজঃস্বলা নদী জড়িয়ে ধরছে বৃক্ষচারী পথিন
বালকের পুষ্পরাগ উড্ডীন মগডালে
মাছরাঙা থেকে নেমে আসছে জলের সারাংশ
সন্তান কাঁখে মা দেখছে ক্ষুধার গুরুলঘু
ওদিকে মেয়ে ভাবছে কাঙাল তাকে কত দূর টেনে নিবে
আমি সজিনাগাছের নিতান্ত প্রেমিক
নিমদাঁতন খুঁজতে একটা প্রাচুর্যময় সাঁকো পেরচ্ছি
সকালের গণ্ডদেশে রেখে দিচ্ছি ভালো থাকার মুদ্রণ
মুহুর্মুহু সংসার ফুটে উঠছে আহাম্মকের হাতে-পায়ে আর জিহ্বায়।
ভুলদেহ
দুঃখিত মাছের কাছে গিয়ে বসি
বলি ভাস্কর্য শব্দের পরিসংখ্যান দাও
কাঁটায় আবিদ্ধ করো হে চতুর জিয়ল
দংশন শব্দের বানান এত তীব্র কেন বুঝিয়ে লেখ
বৃক্ষরস মেখে ভুল হল খুব। গাছেরও ক্ষতি হল।
নারীতে নেমে হলাম একান্ত কামার। লোহারও ক্ষতি হল।
কে যেন বিজ্ঞাপন সেঁটে দিল গমক্ষেতে
কী বিচ্ছিরি হস্তলিপি
আমি ভুলে গেলাম ভিক্ষার প্রথম ডাক
যোগ্যতাহীন এই বিশ্বে নিজেকে কোথায় রাখি
শরীরে মাছের স্বভাব পেলে
এই কম্পিত আত্মাকে আমি দহে ভাসিয়ে দিতাম
অথচ দেখো, এতদূর অন্ধ এই সফলতা
আমি শুধু পেরেকের আবহে দুলছি তো দুলছিই
আদেহ।
স্নান
অতএব নিষ্ঠুর ভাদ্রমাস
তোমার ঊড়ুমণ্ডলে শীঘ্র কোনো সুখবরের সম্ভাবনা শূন্য
অতএব
আমি, হে নির্মম ভাদ্রমাস
হেঁটে যাব ব্রহ্মপুত্রের নিবিড়ে
অরণ্যসঙ্কুল একক নারী
তার জিহ্বাফলকে ভেজাব উপবীত
সোমরসের কৃপাপাত্র নিষাদ আমি
রৌদ্রেমেঘে বজ্রে গিয়ে দাঁড়াই
ঋতুমতী গাভীনের বাটে
খুলে যায় দুগ্ধের আগল
এরও পর যুদ্ধের ক্রম থাকে
রক্তের বাহুমূলে পিপাসা ওঠে
মাঠকে মাঠ পড়ে থাকে নারী ও জমি
আমি হৃদয়ে অন্ধ হই
অতঃপর স্নানের যোগানে কাঠ জ্বলে
হে নিহিত ভাদ্র
স্নান ব্যতীত কীভাবে বাঁচে বলো
এ হেন গ্রীষ্মকাম।
একা
আমার একটা একা দরকার
বিধ্বংসী মাঠে একার সাথে আমার সাক্ষাৎ বুনে দাও
কিছু কিছু মধুর সিগারেট থাকে সবারই রুমালে
কোনো দ্বিপ্রহর খুব তাগিদ থেকে ডাকে
আমার ওসব বাদামের স্তূপ আর খেলে না
বিশেষণের জন্য, ধুর, পরিশ্রমে কোনো তীব্র নেই
টসটসে ঘুম উঠে এসো স্পর্ধার জানালায়
নিরন্ন কুপি বেজে ওঠো ঠন্
ওহে মনখারাপ-লাঙল ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দাও যন্ত্রের দাগ
সবাই ঠিকঠাক স্নানে যাও
আমি এককের সাথে দু-দান সরলতা খেলি
একবাক্স ভুল হস্তান্তর করি
আকূল হয়ে থাকা বলতে আমি এখন
একশৃঙ্গ তালগাছ বুঝি।
আঙুল
আঙুলেরও কিছু নাক উঁচু বিশ্বাস থাকে
সে তোমার নিভু ডাল ছোঁবে কি উদাসীন মেখে
পেরিয়ে যাবে দুপুরের জেব্রা
তাতে কবির কোনো হাত যশ থাকে না
শহরের সব অংশে সমান পৌঁছায় না দেশ
কিছু গ্রামীণ ব্যাংক নিরীহ প্রেমিকার হাত ধরে
মাঝেমাঝে পার্কগুলো ভরে ওঠে শীতের টানে
মা-ছেলেতে রবীন্দ্রপক্ষ থেকে রোদ বাছে
আঙুলের অবশ্য এসব জানার কথা নয়
সে বড়ো ঘর, আঁভা গার্দ বান্ধবী এবং চুরুট
তার পাপোষে আন্তরিক পশু জিভ চাটে
