ফারাহ্ সাঈদের কবিতা
জিন্সের পাশে আত্মাহুতির ঘ্রাণ
এ কেমন আত্মাহুতি বলো?
শরীরে দাগ নেই
ফুসফুসে ফুটেছে লাল
তোমার মাঝে যত না আমি
তার চেয়ে বেশি ফুলার রোড
আত্মাহুতি ফুসফুস পেরিয়ে
কৃষ্ণচূড়ার শ্বাসনালীতে নেমে গেছে
বিকেলে কারো নতুন হাত
এ-কোন আশ্রয়, তোমার ছল!
কোথাও যাইনি আমি
আছি কী নিরন্তর!
প্রান্তর সাদা-লাল, ভেবো না আলপনা
এই শূন্যতাই চারুকলা, ওখানেও আমি
কিছু চলে যাওয়া সিগারেট প্রতিমা আমার
জিন্সের পাশে তোমার আত্মাহুতির ঘ্রাণ .
ভান
যে আনে পরাগের ভান
বর্ষাতি হাতে
আমাকেই নিয়ে গেছে ঘরে
রিকশায় থেমে থেমে পথ
আমিও হারিয়ে ধুলো
খুঁজে পাই ফুলের আড়াই
কার্নিশে বাকুমের নাম
গুড়ি পায়ে পায়রার বৃষ্টি সমান
আধ ফোটা চুম্বন, কেটে যায় ভান
আমিও কি গেছি ভুলে চোখ
সমুদ্রে খুলে যায় হাতের আভাস
ফসলের ভয় নেই সেই দিবারাত
ভাষায় ফুটে থাকে জোছনার ঘর
ঘুম লাগা মানুষের ফুরোয় না জ্বর।
পতঙ্গ
ঠান্ডা এ-অনুযোগ
বড়ো ঠান্ডা এ-অনুযোগ তোমার
আমি যাঁর কবিতা পড়িনি
বরফে মিলিয়ে হরফ
আমি তো বলিনি এই সব।
হৃদয়ে আজ মাটির ঝাঁঝে কথা বলে
তার বইয়ের পাতায় ঝিঙের দোল
ফালি ফালি করা তাঁর চোখ
মিহি কুচির অক্ষরে অক্ষর মেলে রোজ
কোনো একদিন মৃত কবির সামিয়ানায়
উপুর হয়ে মরে যেতে ইচ্ছা করে
ইচ্ছা করে মরে যেতে
বলো, কীভাবে সেই ব্যথা
একে অপরকে বিশ্বাস করে?
পতঙ্গ কবিতা বোঝে না রে কবি
পতঙ্গ কোনো কবিতা বোঝে না!
ছোটো কাগজ গুঁড়িয়ে দেয়া যায়
চোখের আড়ালে মহীশূর এত রোগা লাগে!
রেখে দিয়ো হালকা অপচয়
শুয়ে থাকা ধুলো, দরগার পাড়।
আসবাব, মোমেরবাটি
চশমার অনুবাদে এ-কার পরাজয়?
হাতে তাঁর কাটছে দেওয়াল
কোন সে নিমগাছ
এমন ছোঁয়াছে তোমার মতো
তাকালে বদলে যায় ত্রিফলার রং
ঠাওরে নেই ভেজা করোটি
যেভাবে মানুষ আজও গানবিদ্ধ হয়
ছুটির কিনারে।
ছোটো কাগজ গুঁড়িয়ে দেয়া যায়
তোমাকে নয় !
তৃষ্ণা, আপন বরাবার
কোথায় আছো?
জীবনের লাটিম ঘুরে আত্মাহুতির
সিলিংফ্যানে মাখামাখি হলো না যার!
কালো দাগ ডাকছে তোমায় শৈশব
জানি মুহূর্তে তৃষ্ণা বাড়ে
এতটুকু বেঁচে থাকবার।
বৃষ্টিপ্রেমীর ভয় কী বলো
আমের আঁটিতে কচিপাতার তিরতির বেড়ে ওঠা—
দেখবে বলেই কী বেঁচে আছো তুমি?
এতকাল ঝুলে থাকা আঙুল
মার্বেলের মই সাজিয়ে পৌঁছে কি গেছ
আপন বরাবার?
মিথ
রুটি সেকার বিলাপ
সকাল সকাল জানালা খুল্লেই
জিপসি মেয়ে, যার পোড়ামন
এখনও জামায় ফোস্কা পড়ে আছে
মিথের ঝলসে যাওয়া রাতের পরে
কত কী গন্ধ লুকাতে চায়।
