বল্লরী সেনের গুচ্ছকবিতা
রুদ্রপলাশ
বড্ড বেজন্মা
আমারই হাতে দুধ কেটে যায়
শাঁখা পলা বেড়ে যাচ্ছে। অলক্ষ্মী কুয়ো, শুকনো
যোনির মতো কাঠ হয়ে আছে কান্নায়
না কি এরকম নববর্ষ
বহুদিন হয়নি, আম্রপল্লব ঝরে পথটি সুতরো
মুসুর ডাল ধুয়ে সাঁওতাল মেয়ে
রাস্তায় বিছিয়েছে তার
ব্যক্তিগত হাঁড়ি
খুন্তি দিয়ে সে সারাদিন বৈশাখ বিক্রি করে যাচ্ছে
চিঠি আসে না
ছায়া বাড়ে পেটের ভেতর আর খোঁপার রুদ্রপলাশ
ভোর হয়
লালফুল, শরৎকাল
নাকছাবি
কুঁচবরণ কন্যার কেশবরণ চুল
তোমার দৃষ্টি ফুটবলের প্রতি সাঁটা
মাঠের এপারে
অন্য ইস্কুল
লাল পুলোভারে ঢাকা সাদা শার্ট নীল রং স্কার্ট
কোনোদিন ব্যাগ দাওনি ধরতে
কোনোদিন সাইকেলের সামনে এসে সোজা বল পাঠাওনি
নোয়ান ফেলোনি ওলা বিবির দরগায়
গীর্জার ঘন্টা পড়লে মনে পড়েনি, কত ঋণ ছিল
কী কী শাস্তি পাওনাগণ্ডায়
শোধ করতে হতো |
ফেসবুকে আমাদের নাম ধাম ভাষা সব
দাঁড়ি পড়ে গেল।
এভাবেই শূন্য হয়ে আছি।
লুচি ডিমভাজা
রোববারের প্রাতরাশে লুচি হচ্ছে ডুবো তেলে
তুই ডিম ভাজা চাইলি
আমি তোর প্লেট বদলালাম কাপড় ছাড়ার মতো
লুকিয়ে
তুই জানলি না আমার ১৩ বছরের ইস্কাপন টুকটুকে
লাল
৩০ বছর পর আদরের অন্য কোনো বলিরেখা ধরে
ঠোঁট তার যমজের দেখা পায়
মুছে যায় না-পাওয়া ফুলকোগুলোর কষ্ট
বুঝে নিস
তাহলে
তোকে না পাওয়ার মানে ঠিক কী কী
কম
জিয়াভরলি
এখন আর শহর ভাবি না
বন্দরের বৃষ্টি ভাঙা তাঁবুর তলায় আলুনি মাছ যেভাবে রোদে ঠা ঠা পুড়ছে
জানোয়ারের জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছি কত শতাব্দীর না বলাটুকু। আবদার করে চোখে খিল তুলি, না থাক
দেখতে নেই, দুনিয়াদারির চাবিতে তোমার দিকে চাইলেই মনে কাম জন্মে। পরস্ব ন পরস্বেতি মমেতি ন মমেতি চ। অর্থাৎ
আমার কিন্তু আমার নয়
পরের তবু পরের নয়। আমি এর পরেও জলপাই সাবান দিয়ে জানু মেজেছি, তোমার নাকে এখন আমার বাস লেগে আছে
নিবিড়তা কখনো শেখানো যায় না
বোর্নভিটার তলায় দেখো কতবার আমাকে খেয়েছ
এ জন্মে মাথা খাও
আর না বোলো না গো
পা
সরালে জুতো
জুতো ফিরে গেলে মাটিতে কাদার মতো
চোখের শেষ তারা অশ্রু ফেরত দিতে আসে
দরজা
দুটো
আমার যোনির মাঘী পূর্ণিমায় শিরোনাম পায়, ডাকনাম জুড়ে আলনায় কাপড় মেলা থাকে।
তারপর রোববার
সমস্ত দেহের ভেতরঘর, ভাঙাচোরা জোনাকির ডানার মতো নিঃশব্দপ্রায়
তোমার পায়ের মোজায় চুপ করে ঘুম দিয়ে যায়
সেদিন হয়তো এমনিই
ঘুমাও
ওষুধ ছাড়া।
জল্লাদ
জামদানি অন্ধকার কাঁঠালি কলার সঙ্গে ক্রমশ খোসায় ঢাকে তামাম রসিদ
এক-বাক্স জোনাকির আলো, লন্ঠনের মতো
কুয়াশাকে নীচে নামায়, কুয়াশারা আমাদের হাতে কুমোরের চাকায় ছাঁচ গ্রহণ করে| তুমি আমারো বাজুবন্ধ ওভাবে খুলতে শেখো,খিলানে জাগে রুমানি ছোটবেলা, মেঘ নিয়ে ফিরি করতে যখন। হানপান করা স্বভাব ছিল, কষ্ট দিই, আর একটুসখানি… চোখ উপুড় করলে সূর্যাস্ত।চোখের একটি ডিবেয় কুইন্স নেকলেস, তোমার গ্রীবার চোরা রাত্রি, সারমেয় লেহনপ্রণালী
বালিরেখা
যোনির বাইরে তুমি আঙুল প্রদাহ বেঁধে মারো
শব্দের শেষ টান, আহ্লাদে গলে গলে শবদাহ ঘি আর চুল্লিতে মো মো করে
ভোরের পানে নোঙর খুলে দাও, ডাকো
একটিবার শ্ শ্। নতি কোরো, নইলে এই আমার কুদরতি
সময় ছোপানো শাড়ি, জাজিমে তার আদ্যক্ষর |