বেবী সাউ-এর কবিতা
কালীকা
চোখেতে হারাই আজকাল
অনেক অনেক শ্মশান ভেঙে
রাজপথ ভেঙে
জোগাড় করেছি শেয়ালের উজাগর চোখ
মাথা গুণছে মুণ্ডু
মুণ্ডু খুঁজছে লাশের ছবি

ইস্কাবনের বিবির সঙ্গে বিবাহসূত্র পাতছে চেসের সম্রাট
আর্যাবর্তের শৈল্পিক কারুকাজে তুমি পোষ মানাচ্ছ ধ্বংস
আমার দেহে মৃত সন্তানের গন্ধ
স্তনে শত শত পুরুষের লালা, নখ
অথচ, এই যে অজান্তে হলেও
পা-ছাপ এঁকেছি সমাজের বুকে
তুমিও নির্লিপ্ত কেমন জবার মালা ঝুলিয়ে ভাবছ
এই পুজো এই পরমহংস…
একা
নির্জন সাধনা নিয়ে সমস্ত দৃশ্যের কাছে আমার অঞ্জলি তুলে ধরি
তুমি নগ্ন হও আরও
আরও বিস্তারিত হয় এই মাঠ ঘাট
পাহাড়ের চতুরঙ্গ চূড়া
সবটুকু মিথ্যে জেনে ফেলো যদি
চুপ থেকো
একদিন এইসব সত্যের কাছে
আমাদের বিবাহমন্ত্র উচ্চারিত হবে
রাবণ
আমিও অনন্ত ভেবে আতপের চাল আর দু’মুঠো আগুন
ভগবান জেনে যদি তুলে দিই প্রস্তাবের এই বারবেলা!
ব্যক্তিগত মতামতে ভেসে ওঠে পালকের সীমাহীন রোদ
কে তাকে ছোঁয়ার লোভে ডেকে নিয়ে যাবে ওই সীমান্ত অঞ্চল?
কে তাকে ভোলাবে রোজ সকালের চিঁড়ে মুড়ি খই সহকারে
অনিত্য সংসার তাকে কুলুঙ্গির ধূপ ধুনো ভোলাবে অধিক!
সমস্ত নিশান ভেঙে সেও আজ বিষাদের শাল ঢেউ জুড়ে
নিজেকে ঈশ্বর জেনে আমাকেই রোগ জ্বালা— দু’বেলা কাঁদাবে!
নিরাময়
অতঃপর শরীরের জ্বর কমে গেছে
তাও সেই ছলনার শীত
পাড়ার নিস্তব্ধ ভেঙে
চুপিচুপি দরজাতে আসে। হাত রাখে
লোহার গারদ এই। চারপাশে প্রাকার তুলেছে
ক্ষীণজীবী লতাদের শোক
আমি কী ফেরাব তাকে! জমে ওঠা ঋণ
এতদিনে পরিশোধ জরুরিও জানি
স্মরণে নোঙর রেখে আমি ভেসে গেছি
মৃতডিঙা; পুরুষের জিভ
পিছুডাক ফেরাবেও তাকে
বিশল্যকরণী!
উপকূল
বশ্যতা সহজ জেনে তুলে দিই পোষা আর্তনাদ
সভ্যতা গড়ায় উচ্চে। জ্বর শূন্য পৃথিবীর ধাবমান অশ্ব
কলুর বলদ ভেবে তুমিও নিপুণ
ঘাড়ে পিঠে তুলে দাও সম্মোহন বোঝা
ভালোবাসা ভেবে রোজ শহরের উপকূল
মোহানার দিকে ছুটে যায়
হত্যাবিষয়ক
বিষণ্ণ ময়ূরদের কখনও এমনভাবে
বিশ্বাস করতে নেই
ছড়ানো ডাল-পালায়
আজ তারা পেতে দিয়েছে বিষাদময়
সাঁতার ও বৃষ্টিকাল
পালকের খাঁজে ভরে আছে রান্নাঘরের আগুন
মাঝে মধ্যে খুলে যাওয়া বুকের আঁচলে মেঘ ধরে রাখা হচ্ছে
শতসহস্র জন্মকাল ভেঙে ময়ূর, পেখম, ডানা
চোখের ইশারা
বাচ্চা কাচ্চা সংসার সমূহ
খিদের আকালে এসে দাঁড়িয়েছে
চোখ
চারপাশে মন্ত্র ধ্বনির মতো বাজছে মৃত কবিদের অক্ষর ও পঙ্ক্তি
আর রান্নাঘরের পোড়া ডাল ছুটে এসে সামলে নিচ্ছে
ময়ূরের ভুল হয়ে যাওয়া নাচের ভঙ্গিমা
মমির কৌশল…