বৈশাখী রায়চৌধুরীর গুচ্ছকবিতা
নদীকেন্দ্রিক
জানালা জুড়ে স্নানঘর
কে যেন খুলে দিয়ে গেছে কলঘরের জ্যোোৎস্না
ভেসে গেছে প্রলাপ
অসুখ রাঙানো উঠানে শুশ্রূষা নিয়ে ফোটে বেদানা বাগান
একটা একটা করে খুলে রাখলে যত্নের বাটি উপচে ওঠে
গড়িয়ে পড়ে ভালোবাসা কণা
দু-একটা কণা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পিঁপড়ের সারি রাজকন্যাদের দেশে
বৃষ্টি নামবে
জানালার কাচজুড়ে তারই প্রস্তুতি
আসন্ন সম্ভবনা মুখে নিয়ে উড়ে গেল বিকেলের শেষ কাক
জেলা রাজ্যব মহকুমা ভিজিয়ে বৃষ্টি আসছে
মানচিত্র জুড়ে পেখম মেলে নাচছে নদী, নাচছে মোহনা
মানুষ নদী হওয়ার বাসনায় খুলে দিয়েছে তার শিরা উপশিরার গুপ্ত সংকেত
আর নদী
মানুষ হওয়ার বাসনায় একে একে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার ধাতব কুঠার।
***
বিসর্জন
বিচ্ছেদের ভেতর থেকে যায়
অপেক্ষার সানাই এবং
প্রতিশ্রুতির মতো বেশ কিছু ঠান্ডা শব্দ
আমি চাই না পৃথিবীতে বিচ্ছেদ বাড়ুক
চাই কেবল বিচ্ছেদের মধ্যে বাড়ুক বির্সজন
যাতে একে অপরকে ডুবিয়ে দিয়েও
একটিবারের জন্যও আর ফিরে তাকাব না কেউ।
***
প্রবাস যাপন
দূরবীনে চোখ রাখলে দেখি আরও দূরে হয়ে যাচ্ছি নিজেই
নানা নামের বেনামী দূরত্ব
মিলেমিশে দ্রবীভূত হতে হতে শিখেছি
সমস্তটা ভালোবাসলেও কিছু একটা স্তর থেকেই যায়
যা কোনোদিন ডোবে না; ভেসে থাকে যার ব-দ্বীপ নাম
যেখানে গড়ে ওঠে অন্তিম মৃত্যুর মতো নিস্তব্ধতা
সে আমাকে রোজ ডাকে, কানে-কানে বলে—
ঘরে ফেরার মানচিত্র হারিয়ে গেলে
প্রেমিক শরীর প্রবাস ছাড়া আর কিছুই নয়
ফিরে এসো মেয়ে।
***
উত্তরের জানালা
একটা ঘরের মানুষ মান সম্মানের সঙ্গে কি জড়িয়ে থাকে জানো ?
তার বিনিদ্র নিস্তব্ধতা
ভ্যাপসা গন্ধের অহংবোধ
সাদা দেওয়ালের নৈঃশব্দ্য
একটা ঘরের কাছে সবচেয়ে বিরক্তি জাগায় তার উত্তরের জানালা
যা দিয়ে হঠাৎ ঢুকে পড়ে খড়কুটো মুখে কোনো পথভুলো চড়ুই
আসলে চড়ুইগুলোও আমার তোমার মতোই উটকো মানুষ
সংসারের মান মর্যাদার ভেতর বেমানানভাবে যারা ঢুকে পড়েছে হঠাৎ।
***
ভুলতে শেখো
বয়স হয়ে গেলে আর কেউ জন্মদিন মনে রাখে না
আফশোস নিয়ে পড়ে থাকে ক্যালেন্ডারের দলিল
মেঝেতে গড়ায় পুরনো গিফট র্যাপের কাগজ
আয়না ধুলো ঝেড়ে বলে ‘বয়স তো হল এবার ভুলতে শেখো’
কার্নিশে উড়ে আসে দু-একটা চিল শকুন
জন্মদিন মনে রাখে
দিন গোনে…