মনোতোষ বৈরাগীর কবিতা
পানা
মা, ওই বুকের রক্ত চুষে মূলরোমে শুয়ে আছি একা
বেগুনি ঝুটির বেণী শরীরে নিঃশ্বাস ফেলে
বাসনা গরম হয়। নেচে ওঠে ফুটন্ত পুকুর
হঠাৎ দরজা বন্ধ। কলসি ভাসে শামুকের বুকে
পড়ন্ত বিকেলে লাল জল
মাছরাঙা পাঁক ধরে ফেনা চোখে ফেলে দীর্ঘশ্বাস
জানো পেট ভরতি বায়ু, তবু নতুনের আশা রাখো
নাহলে ভাষাও কেন
সমস্ত কুঠুরি
সেতু
পৃথিবীর দুই মেরু
দুই সত্তা জুড়েই মা পর্ণমোচী দেহে শুয়ে আছ
উরু ভাঙে জলরাশি।
ধুনুচি আগুনে গেল পিচ
অপেক্ষার দীর্ঘ জল চোখে
যৌবন পেরোলে, ওই
রাস্তায় আমার যাতায়াত
অনীহা
সে তুমি যতই বলো
নির্জনে শরীর পুড়ে জন্ম নেয় আয়ু
প্রেম! সে তো
বাউল-ফকির
পাঁচিলে ফাটল জুড়ে সফেন বুদ্বুদ
প্রতি শ্বাসে, অবাক বাহানা
ফিরে যাও,
ফিরে আসি…
সিগারেট, শিস্
বোতলে সজোরে লাথি
নিকুচি করেছে, শালা
আমি কি পাপোশে মুখ মুছি!
সূর্যালোক
এই যে গৃহস্ত বাড়ি।
চিকন রোদ্দুরে সহবাস
সকাল হতে না হতে গায়ে পড়া স্বভাবের দোষ
আঁধার, সংকোচে মুখ ঢাকে
লজ্জাবতী ছোঁয়া পেলে কুঁকড়ে নেয় পাতা
দুর্বোধ্য ভাষার শীৎকার
ক্লোরোফিল-ঠোঁটে তুমি রান্না করো দেহের শিরায়
উত্তাপ উনুন কেঁদে যন্ত্রনা জমিয়ে রাখে
ঘরের কোণায়
প্রতিবিম্ব
গভীর সমুদ্রে মরু কিছুটা উর্বর
ভেঙে ফেলি পাংশু ছক
মনে হয় সমস্ত সরল
মাথায় অস্পষ্ট ছবি
মোড়কের খাম আনি তুলে
জলে নামো আলতা পায়ে দেখে নাও নিজ মুখ
হে প্রিয় কী দেখ!
ইতস্তত জাল বুনে
আমিও, বাসিভাত ভালোবাসি
প্রাক্কালে
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে আশি বছরের শিশু
দড়িখাটে গড়াগড়ি দেয়
দীর্ঘ রক্ত পথ বেয়ে পেরোও বিস্তীর্ণ জলাভূমি
সাঁতার জানো না !
পৃথিবী কিছুটা লম্বা মাত্রা বাঁধা দেহ জুড়ে ঘোরে
ভালোবাসা নিরর্থক
কঙ্কাল ঠোঁটের উন্মাদনা
ভৈরবী গানের কাঠ ধুনো মেখে স্নান করো,
পাত পেড়ে শুষে খাও ধোঁয়া
আবর্ত
নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে শীতল আগুন মুড়ি দিয়ে
কাঁচা মাটি পুড়ে খাঁক
কর্ণিকের আঘাতে কাঁদো রোজ
কারোর ভ্রুক্ষেপ নেই রোগাগ্রস্ত দেহ গেল খসে
আবার নতুন ইট
ঘষা মাজা শুরু
কাঠপুতুল
কারুকার্য দেহ
নির্দিষ্ট সময় পরে ক্লান্ত হয় বাবা
বিছানায় সোঁদা গন্ধ, চক্ষুশূল ছেলে
স্টিমার পাড়ের গায়ে জল ঘেঁটে এলোমেলো ঘুম
“মা, প্রসন্ন হও”
দু’হাত বাড়িয়ে দেখো ছুঁয়ে
পালবাঁধা সুতো ছিঁড়ে উড়ে যাব কাল
সংগোপনে
কিছুই গোপোন নেই তবুও আড়ালে উই পোকা
চোখের কোটরে মাছরাঙা
সন্ন্যাসী কম্বল গায়ে জিভ খুঁটে ভাত খায়
ভিক্ষায় অরুচি
ভোর। কু-কথার কাক প্রিয়জন, ধুর ছাই
আঙুল গুটোও
সংযমী মা আজও
মরা মুখে দুধ দেয়, ভাসায় আঁচল
অঙ্কুর
বাড়িয়ে ভিক্ষার হাত জন্ম অন্ধকারে
গভীর মাটির ভিড়ে জনহীন, এক সাদা নাভি
মোমবাতি চুঁইয়ে রক্ত। দুয়ারে যন্ত্রণা।
ময়লা নিজেই ভাঙে কুলোর বাতাসে
কিছুটা রসালো স্বাদে আলো খোঁজে জিভ
কে যেন তাড়না দেয়
কোনোদিন পিছোনো হবে না!
পরিচিতি:
মনোতোষ বৈরাগী। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এম. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা নতুন কলম।