শতদল মিত্রের গুচ্ছকবিতা
মাধুকরি
১
যখনই বৃষ্টি পড়ে, আমি
যমুনার চরে রাত বসত করাই
যমুনা ফকিরি জানে ভালো
আঁজলা ভরা মাধুকরি—
অন্ধকারের আলো!
২
যমুনা নদীটি জলহীন দিনমান
রাত্রি জাগলে তবে হড়পা বান
দেখ আমি ডুবছি, ভাসছি
ও সাঁই, তোমার ছন্দে মৃত্যুও আসান!
৩
দু-হাত বাড়িয়ে ছুয়েছি ভোরাই
আকাশ জোড়া রং—রক্ত
মরে যাই, মরে যাই সে জেগে ওঠায়
ও সাই, আমার হৃদয় জোড়া আনন্দ—ক্ষত!
৪
দেখ কেমন চাঁদপানা পুন্নিমে রাত
যমুনার চরে জেগেছে জলের মায়া
ও সাই, দেখ বাড়িয়েছি দুই হাত
এসো ডুবি, যদি পাই জাতকজন্মের ছায়া!
৫
আমি স্বপ্নে পাই তাকে এখনও
বলো গোঁসাই, এর কি মানে হয় কোনো!
৬
শুয়ে আছে যমুনে চাঁদবিহীন
যেন প্রলয়পয়োধিজল
আহা! ভেসে যায় কালও সে ছায়ায় নিঃসাড়।
গোঁসাই হে— জীবনের ছল
এসো, দোহে
মৃত্তিকা দাঁতে চেপে, মৃত্যুরে করি পারাপার!
৭
মারা যমুনায় তবুও তো ছায়া ফেলে
কৃষ্ণ মেঘ
বর্ষার অভ্যাসে বারবার
আমিও তো বিষণ্ণতা রোপন করি প্রত্যহ
গোঁসাই, একবার শুনো সে সজল-সলাজ হাহাকার!
৮
যমুনার বুকে দেখো চুমু খায় ভোর—
গোঁসাই-গোঁসাই !
এখনও ভাঙেনি তোমার ঘোর!
৯
নিলাজ জ্যোত্স্না হেসেছে বসন্তে
যমুনে তবু রাত্রিবিলীন
কৃষ্ণলীন একাকী আমি
বুকে জাগাই ক্ষয়-ক্ষরণ—
ও সাই,
আর আমায় মাখাবে না রং!
১০
যমুনার দেহে আহা, একাঙ্গী
আজ চাঁদ ও তৃষ্ণা!
মরে যাই! মরে যাই!
আমার সর্বাঙ্গে কৃষ্ণ-যাতনা আঁকি
ও সাই, রাত্রি সাক্ষী—
এ সুন্দরে মরতে চাই না আমি।