শাশ্বতী সান্যালের কবিতা
আপনাকে
১
পায়ে হাত দিলে মনে পড়ে
জ্বরে তেতে আছে সে শরীর
চৈত্রের দুপুর, তবু ফ্যান চলছে না
শান্ত বসার ঘরে বই। আর বই। আর বই
প্রণামের অবকাশে নিজেকে কী অবাঞ্ছিত লাগে
দুচোখে উত্তাপ এসে ধাক্কা দেয়
দাঁড়াতে পারি না
যেন দুর্দিনের পাখি দাবানল দেখেছে প্রথম
সেও কি এমনই শান্ত? জ্বরেপোড়া চন্দনের গাছ
পায়ের পাতায় শুধু আগুনের শ্লোক লেগে আছে
২
ভিতরে চঞ্চল, তাই বাইরে কথা জড়িয়ে এসেছে
সমুদ্রের উতরোল বুকে নিয়ে স্তব্ধ বালিয়াড়ি
যেভাবে নির্জন থাকে,
ফণীমনসার ঝোপে যেরকম শান্ত নাগমণি
অনুজ্জ্বল, বালিমাখা, একা…
মেয়েটিও তেমনই নিষ্প্রভ
পুড়ে যাওয়া শিখা। কোনো আলো নেই তার পৃথিবীতে
আশরীর অন্ধকার গুটিয়ে সে
আপনার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে

ভিতরে ঢেউয়ের ফণা, জ্বলে উঠে নিভে যাচ্ছে
রাশি রাশি নীল ফসফরাস
৩
বৃষ্টির খবর লিখে আপনাকে পাঠাই
কতদূরে রামগিরি পর্বতের ঢালে
বৃষ্টিচ্ছায় এক বন্ধ্যা শহরে বসে আছেন
চোখ বুজলে মনে পড়ে অফলা জমির মতো শীর্ণ আঙুল
চোখ বুজলে মনে পড়ে নীচু শান্ত গলা
মেঘ কি অতটা পথ পাড়ি দিতে পারে?
আমিও পারি না। একা বসে থাকি ভাঙা সমতলে
গ্রামে গ্রামে বজ্রপাত হয়…
আগুনের কথা আর কাঁহাতক বলা যায়! আমি
লেখার খাতায় বৃষ্টি ডেকে আনি, মিছিমিছি…
ভেজা হাওয়াটুকু তার, প্রিয় যক্ষ, আপনাকে পাঠাই
৪
ইদানীং শব্দে শব্দে বড়ো বেশি শ্বাসাঘাত পড়ে
থেমে যায় ভীরু পঙ্ক্তি পুরোনো রাস্তায়—
যতটা বলার ছিল, বলা হয় না। সেই গ্রহদোষে
সচল তর্জনী কেটে রেখে আসি শান্ত বেদীপিঠে
যদি রক্তজবা ভেবে দু’পাতা ওলটান
‘ভালোবাসা’ দীর্ঘ শব্দ, লিখে ফেলে কেটে দি’ আবার
দু’মাত্রা ফারাক হলে, আমাকে পরের বাক্যে
ব’কে দিন। খুব ব’কে দিন