সঙ্ঘমিত্রা হালদারের গুচ্ছকবিতা
বধির
আকাশ ফাটানো এক চিৎকার আমাকে
পাচ্ছে, তুমি দেখালে তখন ছিপি আঁটা দমবন্ধ এক ঘর
পায়ের কাছে একটা ঝিমিয়ে থাকা পাপোশ দেখালে তুমি
যখন ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছি
রাগে
রাতের ভেতরে নেশাগ্রস্ত নক্ষত্র দেখালে তুমি
ভিখিরির ঠোঁটে আধখাওয়া আগুন দেখালে তুমি
ঘুমের ভিতরে ঢুকে আমাকে দেখালে
বিস্ফোরণে হাড়-মাংস আমার উড়তে ভুলে গেছে
***
ইহজাগতিক
পাশের বাড়িতে জোরে কথা বলে ওঠা বিরক্তবাবু
একটু দূরে সরে গেলে নীলাকাশ ঢেকে দেওয়া
পায়রার খুপরিভরা ম্যাপ
বিরাট বিপুল আঁতাত এইসব
আর তুমি সেদ্ধ হচ্ছ
ইহজগতে কোথাও ছাড় নেই
আমাদের মহাকাল কফি খেতে গিয়ে সখেদে ফুরিয়ে আসা
আমাদের যা কিছু বাগদান সব ইহজাগতিক
আমাদের মর্মে শুধু বাতিল এক হারমোনিয়াম
ছেয়ে আছে যেমন আকাশ
***
আলোর নভেল—১
অন্ধকারে ঘরে ফেরো বলে তুমি পাখি
তালগাছ একা হলে তাকে কত প্রাচীন দেখায়
মুখ তুলে একটা কুকুর সেই থেকে তাকে পড়ছে
এমন দৃশ্যে হৃদয়ের পা টলমল করে
ধরে আসে একাকী কুকুর আর তার কান্না
যেন জনপদে তাড়াহুড়ো কিছু নেই
যেন সব অপমান এরপর পিছু নিতে ভুলে যাবে
যেন এই দৃশ্য পেরিয়ে আমাকে আর পৌঁছতে হবে না কোনখানে
***
আলোর নভেল—২
জানলা ধরে লতিয়ে উঠেছে গাছ
আমি তার সম্পর্ক জানি না
জানি না কোথায় বিঁধেছে তাকে আলো
গমধোয়া আলো বাঁকে এসে ঘুরে গেছে
যেভাবে ফকির মেশে লুপ্তপ্রায় দিগন্তের গ্রামে
জানি না অন্ধ কোন আলোয় পথ চলে
সব আলো নিজেই শুষেছে কিনা
পথচারী দু-চারজন আলোর ভিতরে নড়ে চড়ে
পড়তে জানলে আলোর বাদাম চলকে ওঠে সেই সেই মুখে
***
আলোর নভেল—৩
এমন আলোয় চুরি করে পড়লে মন
হৃদয়ে কুচিয়ে রাখা তরিতরকারি,
নম্র হল ব্যথা
সব নিরাময় ছায়ার ভেতরে নিলে
আর রেখে গেলে রোদের নভেল
ঠোঁটে কোনো তিল নেই, সব হাসি জলে ধোয়া
দীর্ঘ হাঁটাহাঁটি করে তুমি তো তখন অন্য মানুষ
রোদের নভেল থেকে উঁকি মেরে দেখছ তোমাকে চিনেছে কিনা কেউ