সঞ্চালিকা আচার্যের গুচ্ছকবিতা
স্থবির
আলমারিতে জমিয়ে রাখা আদরের গায়ে ছাতা পড়ে যায়।
অথচ সব ব্যথাই বুড়ো হয় একদিন।
ভাঙাচোরা অতীত ক্রমে আবছা হয়ে আসে, যেন ফ্রস্টেড গ্লাসের অন্য পার।
মলিন ক্লেশ নিয়ে বেহুদা ভবিষ্যত তবু জেগে ওঠে।
জাতিস্মর
শ্যাম্পেনের ছিপি খোলার পরিচিত আওয়াজে ক্রমশই অতীত দৃশ্যপট স্পষ্ট হয়।
বাঈজিবাড়ি থেকে সারেঙ্গির রেওয়াজ ভেসে আসে।
পথ ও বিপথ থেকে উড়ে আসে পূর্বজন্মের ধুলো।
প্রেমিকটি গ্লাসে প্রমাদ ঢেলে নেয়, মেয়েটি ধীরে পাশ ফিরে শুলো।
হাহারব
এভাবে কিছু দিন ভেসে গ্যাছে―
কিছু রাত ভেসে যাচ্ছে তার।
এ জন্মেও সে টের পায় ব্যথা, যেখানে সেতারের ছেঁড়া তার।
ভুল ফাঁস কোমরে নিয়ে জন্মানো মেয়ে রোদ্দুরের দিকে ডালপালা মেলে দেয়।
এ জন্মেও সে পামবীথিতলে
মুরলীর বাহুবন্ধনে শুয়ে
এক অভিসাররাত শুধু বাঁশি শুনতে চায়।
মাস্ক
তবুও আয়নার ছল ক’জন বোঝে!
রূপশালি ধান কেটে নিয়ে গেছে কৃষক।
এখন চামড়ার নিচে রয়ে গেলো যে নউলকিশোরীর উদ্দামতা,
আগলপাগল হাওয়া―
লগ্ন অসতর্ক হলে লোকে তাকে ভীমরতি বলে।
সরু সিলুয়েটে ঢাকা পড়ে আছে যত স্পর্ধা―
শুধু মৃত্যু বুঝেছে তার সব ভাব, ভাষা, অলঙ্করণ।
চক্র
পূর্ণ চাঁদও তখন আকাশের বুকে গলে যেতে চায়।
যে-রাতে বারান্দায় জ্যোৎস্না আসে মৃদু পায়ে,
আধপোড়া শরীর নিয়ে
আমিও ওফেলিয়ার মতো ডুবে মরি বিস্মরণের দীঘিতে।
অপেরা শেষ হলে সব দেহ-ই শৈশবের দিকে ফেরে।