লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা

মৃত্যু উপত্যকা ১

আমার কপালের সামনে তুমি
ভুরুর একটু ওপরে অদ্ভুত ভালোলাগার ব্যাসার্ধ

সময়কে ভাগ হতে দিয়ে
রোদ নিজের জমি খুঁজে নেয়

এইসময় এইসময়
আরও ভাবনা
আরও বিকেল
হাত-পা কেটে উড়ে যাওয়ার সফল চেষ্টা

এইসময় এইসময়
কফির কাপ
আমার সামনে— তুমি

কে আমার চুমু নেবে?
আমি কার চুমুক নেব?

অপার্থিব মরণে মানে চাঁদমারির
নাভি থেকে সোজাসাপ্টা নিচে নামলে যে মৃত্যুর ঘর

সবাইকে স্বাগত সেখানে…

মৃত্যু উপত্যকা ২

ঝড় এবং ঝাপটা এবং তুমি

উদ্দেশ্য এবং বিধেয় এবং তুমি

বালিয়াড়ি পিরামিড যখের ধন
এবং তোমার নাক

ঘণ্টাঘর বাতিঘর ফাঁকাঘর
এবং তোমার মুখ

ছায়ার সঙ্গে তুমুল সঙ্গমের পর
দু-একটা দুরূহ লাল দাগ

তাকে গোলাপ বললে গন্ধের
বিশ্বাসঘাতকতা হয়

যেটুকু আসছে এবং এখনও আসে
ভুলে যাওয়া যুক্তির ধার্মিকতা

সেটুকুই না হয় ঠোঁটে তোলো

মাথা মুড়িয়ে ধোঁয়া ডেকে নাও

মাথা ঘামিয়ে ধোঁয়া ঢেকে নাও…

মৃত্যু উপত্যকা ৩

প্রেম একটু আধটু শিখেছে
সাইকেল চালানো

সারা পাড়া বেড়াতে বেরোয়

নারকোল গাছ আর পুকুরের খিলান থেকে
সজোরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘসরলতা

অগত্যা সাইকেল ঠেলে ঠেলে ফেরা

অবশ্য তখন রাস্তা ফুরিয়ে গেছে
পেন্ডুলাম দুলছে আরো জোরে

হ্রেষা চুপ বৃংহণ অবাক কেকা আহত
কোলাহল অনিবার্য বোবাকান্নায়

দূরে কোথাও গেলাস ভরে ওঠে
স্বাবলম্বী সোনালী তরলে…

মৃত্যু উপত্যকা ৪

গাছ

ওপরে শেকড়

নীচে মগডালবীথিকায় একটা ফুল
একেবারে একটাই

এইমাত্র মেঘের সর্দি ছাড়ল
ইলশেগুঁড়ি দিয়ে

তাহলে কী দাঁড়াল?

বান্ধবের সাবালক, অতর্কিত, ব্লেড বসানো
পুরুষাঙ্গ নিয়ে নাকে রুমাল চেপে ধরে
মেয়েটি ফাঁড়ির সামনে মাঠজোড়া সমর্পণ
ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে
এই তো?

না এভাবে কিছুই মেলে না

অংক যতদিন এরকম অগোছালো
ততদিনই সামান্য রয়েসয়ে থাকা

আরেকটু বেশি কথা বললে তো
আরশিও কাছে থাকে না…

মৃত্যু উপত্যকা ৫

কতক্ষণ ধরে সিগারেট

কতক্ষণ ধরে ভালোবাসা

কতক্ষণ ধরে রোদ অনুসারে ঘড়ির বোতাম

কতক্ষণ ধরে লেজ নাড়া

কতক্ষণ ধরে সিগারেট

জ্বলা নেভা জ্বলা নেভা

এর মধ্যে কতটা কী দেখা হয়ে যায়

এর মধ্যে কতটা কী দেখা শোনা যায়

কান বন্ধ রাখলে তো জীবন জাগে না
চোখ বন্ধ রাখলে তো রক্ত শুকোয় না

কতক্ষণই বা আর সিগারেট!

এবং কেউ জ্বলে থাকতে পারে না
এবং কেউ জ্বালিয়ে রাখতে পারে না…

মৃত্যু উপত্যকা ৬

আলাপীজন যাতায়াত শেখে

নিজে নিজে

পাহাড়ের ওদিকটায় রতিমাসিমার চেম্বার
ভীড়ভাট্টা লেগেই থাকে

সে সব কি আজকের কথা?

মেধাবী পর্দার সুতো দাঁতে কাটলে অতিসাধারণ
আলাপচারিতা পাওয়া যায়

চলে আসাটুকু বোঝা যায়
ধূসর ফুসফুসের নেশাবস্তু নিংড়ে নিলে

নিজে নিজে

ছুঁয়ে দিতে দিতে চলে যাওয়ার তেমন দাম নেই

চলে আসাটুকুই দানাদার

সত্যির যেমন কোনো বারোয়ারি বন্ধু থাকা বারণ..

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা

পছন্দের বই