সমীরণ ঘোষের গুচ্ছকবিতা
কাঁটা
কাচের ঘড়ির নীচে বারুদের অবসান চেয়ে শুশুক বসেছে। মরচে
সন্ধে নামে কামানের গায়ে। ফেটে যাওয়ার আগে কাঁটার ধুরন্ধর জোকারের
হাসি টেনে বসে। কিন্তু দাঁতে পিন টেনে ছুড়ে দেবে না শুশুক, এই পণ
জলের অনেক নীচে প্রার্থনা পুড়ছে নুড়ির শান্ত স্তূপে
এত অতীতভোজ্য। চুনোমাছ। শেওলা ও কাঁকড়ার পদ
শুশুক ভাবলেশহীন। আর সময় দুলছে। ঠোঁটে আস্ত গ্রেনেড
জলের সীমানা থেকে কাঁটার বিরামহীন পর্দা খুলে যায়
ঘুম
চাঁদ শুশুককে বলছে এত অভিমান! আর কলিজার ফেনা তুলে
শুশুক ভাঙছে যত স্নিগ্ধ প্রতিরূপ। জলের শ্মশান
শুশুক আমাকে টেনে মাত্রাহীন জলের গুহায়। ওর পাখনায়
আমার একটা হাত নালের আবেগে বুজে। আর মুঠো থেকে
যৌনপাপড়ি খুলে জলের চাতাল
শুশুক আমার ঘুম। আমি ওর পিঠের মাদুরে জাহাজের তেষ্টা ছড়াই
রাক্ষসজন্ম
প্রকৃতির সঙ্গে আমরা কী ভাষায় বলব! শুশুক মূহ্যমান
ঢেউ ওকে শূন্যে ছুড়ে লুফে নিচ্ছে শরীরী যাত্রায়
তাস ছুড়ে তাস ছুড়ে শুশুক ভাবছে গায়ত্রী আমাদের নয়
রাক্ষসজন্মের কোলে যত নদনদীসমুদ্রপাহাড়বনরেখা
আমাদের কাঙালভাষা শস্য ও পাথরের সাবেক দালান
স্মৃতির দানব এসে রান্না তোলে। পাক খায় ধোঁয়ার সকাল
কালো বাক্স
ব্ল্যাকবক্স উপচে মৃত চোখের মণির রাত
কলকবজার বনে ফটক খুলছে
ভাঙা উড়োজাহাজের পেটে সন্দিগ্ধ শুশুক ঘুরে ঘুরে
শান্ত ধাতুর গান তোলে। আমি যত মেয়ে-হাড় আলাদা আলাদা
করি। বালির তোরঙ্গে রাখি মরচে কেয়ূর। মরা ঝুমকোর
অতীত দূরের নেভা ভাষা
দেশহীন দলিতের ঝিঁকে ঝাঁঝিশেওলার ভাপ
তারই সামান্য দিই হরেক আধারে
ভাঙা জাহাজের মৃতমুখ চর্বণের হালকা আরামে নড়ে ওঠে
পাণ্ডুলিপি
কামটের দাঁতে ছেঁড়া মেছুনির হাত বা পায়ের গোছ
বালির পৃষ্ঠায় মুড়ে
কুমিরের বিষ্ঠা থেকে পশু বা মানুষের মণি
পানি-কলমের জাদুরাত
শুশুক আলেয়া তুলে জলের পাণ্ডুলিপি কখনও ওলটায়
মজাকি
লাল মোজা পায়ে আমিই কী এসেছিলাম
তিনহাজার বছর আগে ঝিলের সূর্যাস্তে
যার ছায়ার আরক লেগেছিল
শুশুক অভ্রান্ত। আর মোজাজোড়া নুড়ির পালঙ্কে রেখে
ছানবিন করছে মোজা-মালিকের শ্বাস
শেওলার প্রাচীন থেকে আস্ত জোকার
গুপ্ত রঙ্গের যত ভুরভুরি শূন্যে তুলে যায়
তথ্যচিত্র
শুশুক টেবিলের কোণে সম্পূর্ণ অনড়। নাকি টেবিলই শুশুকের বোধে
ন’লক্ষ বছরের পাথুরে চাট্টান! হাওয়া তোলে। সূর্যাস্ত ছড়ায়
কেন গিটার বাজছে! কেন মোমের অলক্ষ্যে ভূতগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে
দেয়ালের শিখার আশ্বাস
শুশুক টেবিল থেকে অবসানহীন বুদবুদ তোলে। নাকি টেবিলই
শুশুকের ঘুমে ডুবে যাওয়া জাহাজের ক্লান্ত বল-রুম!
শেওলার ঘাঘরা তুলে দেখাচ্ছে প্রবাল
কায়মনোবাক্যে শুধু টলটলে স্যুপ ঘটনাকে ঠেলে দিচ্ছে
বিলিয়ার্ড খোপে আর মরচে চামচে
গিটার উড়ছে সস্-মাখা মেয়েলি ফ্রিলের ট্রিপে
মদের গেলাসে দুই ছায়ামূর্তি কুয়োর বালতির সুরে নেমে গেল
বাজনার অন্ধকার ফসিল-কান্নায় ভেজা জাহাজের লোহার সুরেলা
শুশুক আমাকে কাঁধে যথেষ্ট মরিয়া। আর লেজে লেজে
অফুরন্ত ফেনার পৃষ্ঠা খুলে যায়