সেলিম মণ্ডলের গুচ্ছকবিতা
কোয়ারেন্টাইন
১
ঘুম থেকে উঠি—
তারপর আবার ঘুমোতে যাই
পেরিয়ে যায় অনেকটা বয়স
কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় তার টের পাওয়া যায়
২
সকালের জানালায় সূর্য আসে
রাতের জানালায় আসে চাঁদ
মধ্য দুপুরে একা একা গান করি আমি
বিছানায় আমাকে জড়িয়ে থাকে গতকালের সাপ
৩
ঘুমের পেটে ঢুকে পড়ি
আবার বের হই দ্রুত
এও এক লুকোচুরি খেলা
হারিয়ে যাব ভাবিনি, হারিয়ে গিয়েছি তবু
সকাল, দুপুর, বিকাল
৪
খবর পাই না, হয়ত নাও না
তবুও ভুলে যাইনি কিছু
বান্ধবীর ঋতু আমাদের ছাদে, উঠোনে
ঝরিয়ে দেয় নতুন নতুন পাতা
বাল্যকাল, যৌবনকাল, মৃত্যুকাল
কাটা ঘুড়ির খেলা নিয়ে
আটকে থাকে গাছে, শাদা কচুরিপানার বুকে
সন্ধ্যার চাঁদ এতটাই গার্হস্থ্য, কে বুঝেছে
সে আসলেই শিশু?
৫
ধর্ম আসে, রাজনীতি আসে
ভাত আসে না পেট গুনে গুনে
গর্ভবতী কিশোরীর শিশুস্তনে গড়িয়ে যায় বিকেল
সন্ধ্যায় ককিয়ে ওঠে বাড়ি
সাদা অ্যাম্বলেন্স শাদা শাড়ির মতো ঝলমল করে
এমনই ঝলমলে, শৌখিন, প্রাচীন
৬
এরপর কী হবে
যত ভাবি— ছোটো হয়ে আসে বেলা
এমন সন্ধ্যা ঘনঘোর
হ্যারিকেন, মোমবাতি মোচ্ছবে…
আলো হয় আঁধারে
আধারে গচ্ছিত থাকে মায়া, মাংস, কাবু!
৭
চোখ কেটে রাখি, খুলে রাখি পা
চার দেওয়ালে গড়িয়ে যায় দেহ
দেহ চাই শরীরে
শরীরে কুচ্ছিত আঁধার
জলের দিনে, জাল ফেলে দেখি—
জালে ওঠে চোখহীন, পা-হীন একটা কাটা মাথা
৮
মাথায় ধরে না কিচ্ছু
অস্থির উত্তেজনা
কীই বা লেখা হতে পারে এমন চিৎকারে, আঁধারে
তোমাকে খুঁজি—
মাছের পেটে
লিওনার্দোর ছবিতে
ত্রাণ শিবিরে
গুগুলে
ফেসবুকে
শাদা পৃষ্ঠায় কাটাকুটির মতো সমাধানের অংক নিয়ে
মাথা নেই, মগজ থেকে—
গাছের আর্তনাদ এতটা চিরহরিৎ
চুলের বিনুনিতে ছায়ার আশ্রয় হবে, ভেবে ভেবে ফুল তুলে রাখি
৯
কিছু তো দাও?
শিরা কেটে, গলা কেটে, বুক কেটে
সঞ্চয় করার কিচ্ছু নেই
অন্ধকার গুহায় আলো ঢোকে না
শেষ, সব শেষ ভেবে ক্ষয়ে যায় দাঁত
সময়ের ঋতু শ্বাসালো
দেশে, দশে, দেহে পড়ে আছে
সারি সারি
একা একা পড়ে থাকি এ-কেমন নিঝুম তালগাছ!
১০
ফেরা হবে বলেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা
কোথায় ফিরতে চাই?
লাশ ডিঙিয়ে আবার তো সেই লাশের দেশে ফেরা
গাছ বাড়ে গল্প হয়
গল্পে বড়ো হয় গোরু
আমাদের আহার নেই
মাংসের দেশে, গোরু-ই প্রুভু
হে প্রভু!