লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অনিরুদ্ধ সাঁপুইয়ের কবিতা

ধূসরজলের আখ্যান

ক্ষয়ে যায় মুখ
একটা বিকল পাথর ভাস্করের আঙরাখা গায়
চাপিয়ে সেই কোন উতরোল রাত্রি থেকে
মাংসের ছেনি হাতুড়ি নিয়ে খেলা করছে
আমি একটা নীল পাখি উড়িয়ে দিয়ে
নিঝুম বাসার দিকে তাকিয়ে…
বাদামপথে মানুষেরা পালক ছড়িয়ে গেছে ; অশ্রু খুঁটে খায়
চোরা বাতাস।

আমরা স্বপ্নে
সেলাই ফোঁড় দিয়ে একটা অর্ধেক বাড়ি
বুনে নিয়েছি। রাত নামলে মানচিত্র ও পথ
সবই সঙ্গে নেওয়া হবে
একটা ঘড়ির টিকটিক শব্দ, জলের পাত্র, বাসন-কোসন
নাইলনের জুতোও…
একজন বৃদ্ধার মৌখিক কারুকার্যের ওপর কয়েকটা
ঝিঁঝিঁর স্বর লালসুতো দিয়ে বুনে–
যাত্রা হবে…
…জোনাকির জ্যামিতিক আলোর দিকে
এভাবেই সম্মোহনী এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।

একটা আহত উড়োজাহাজ
সেই কখন থেকে বসে আছে আমাদের
উড়িয়ে নিয়ে যাবে ব’লে
তার ডানায় শুশ্রূষা দিতে তেলে জলে
মিশে আছেন জন্মদায়িনী
একটা সংসারের ভার বইবার মেরুদণ্ড পরিচর্যা,
নগরীর মৃত্যু স্মৃতির মতো গুম হয়ে আছে।
মেঘ ছেঁচে আকাশ কেটে আনছে এক শিশু
কয়েকটা টিমটিমে আলো ঝুলে আছে দূরে…..

আলো কমে এলে
একজন রুগ্ন মানুষ চাঁদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে
ধাপে ধাপে
ছায়ারা আত্মমগ্নের মতো উবু ব’সে
কাউকে খুঁজতে গিয়ে তার ফিসফাস ধ্বনি কুড়িয়ে আনেন
চাঁদের খোলা ছাদ থেকে
পটভূমি জুড়ে ভেজা বালিতে
শঙখ কাঁদে। ত্রিযামার নীল পর্দা জুড়ে ঠোক্কর খায় হাওয়া
চাঁদের মানুষটি মুঠোয় আলো নিয়ে চলে যান
জলের কিনারে

যাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না
তাদের একটা তালিকা প্রস্তুত হয়েছে
তালিকাগুলোকে শব্দ ছকে ফেলে এক ফেরেস্তা
কিছু স্বরলিপি লিখছেন, —ঢেউ এর সুর এবং ছন্দের জন্যে
ঢুকে যাচ্ছেন মানুষের চোখের ভিতরে
তারপর
কিছু না পেয়ে নুন তুলে এনে
স্মৃতির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে তিনি ফিরে যাচ্ছেন বিষাদ মুখে

তরল আগুন ছুঁড়ে দিচ্ছে
একজন হাস্যমুখের মানুষ বিষাদ মানুষটির দিকে।
বলের মতো লুফে নিয়ে
সেই তরল আগুন গায়ে মেখে লোকটি ঘোড়ার শরীর
নিয়ে চলে যাচ্ছে, পেছনে পর্বতমালা লাফিয়ে নামছে
হাস্যমুখের মানুষটির বুকে
সন্ধ্যের উষর শিরা বেয়ে মানুষদুটির নীল পোষাক ভাঁজ করে
রাখছে এক তৃতীয় মানুষ
তারপর সে
ঘুমে ডুবে গেল।

কয়েক শতাব্দী পর সেই তিন নম্বর মানুষটি
ঘুম ভাঙা শরীরে নগ্ন হেঁটে চলে গেলেন প্রস্তর যুগের পাকশালে।

গাছের কাছে যেতেই
খোদাইপর্ব শুরু। তোড়জোড়
প্রথমে মুখের দিকে বানানো হলো অক্ষর
মাঝের অংশে বনভূমি এবং নিম্নাঙ্গে কিছু
বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হলো
আমি কিছু বলার আগেই আমাকে কুঁদে অনেক আকার গঠিত হলো— ভাস্কর সেই গাছটি; যার কাছে বহুবছর আসিনি
অথচ যে আমার শিল্পী

দেওয়ালের কাছে এলে
ভ্রমণ কাহিনি হয়ে ওঠে
একদা এক মাদি টিকটিকির পেছনে এই পথ ধরেই
তার পুরুষ দৌড়ে গেছে। ঋতু বদলাতে পিঁপড়ের দল অবাধ আনাগোনা। দুটো মানুষ দীর্ঘ কুড়ি বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা পেছনে নিয়ে ঝুলে থেকেছেন।
দুই শিকারি মাকড়সা এখোনো প্রত্যহ তাদের রোমাঞ্চকর অভিযানে সামিল। অথচ—
এ কাহিনীর ইতিহাস কেউ লিখলো না।
সমাপ্তির হাতের ঘাতক ছুড়ির কাছে এসে
ঘাড় পেতে নতজানু বসে শূন্যতার দিকে তাকিয়ে
এ ভ্রমণ কাহিনী।

Facebook Comments

পছন্দের বই