লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অরিত্র সান্যালের গুচ্ছকবিতা

অনেকদিন চলার পর
অদ্য দ্বিপ্রহর বারো ঘটিকায় দিবালোক খারাপ হয়ে গেছে।
সত্বর আমাদিগের ভিন্ন একটি নক্ষত্র না হইলে
এই যে এত ছিন্নভিন্ন ভ্রুকুটি ওড়ে আকাশে
এই যে এত অশ্রুজবা ফোটে
এই যে শ্লেষ্মার মতো সাদা অন্ধত্ব এসে বসেছে জীবনে
তার শেষ নেই…

চারিদিকে সবাই যখন কান্নাকাটি করছে তারই মধ্যে ভারী ধূর্ত হাবড়া বুড়ো একটা লোক— সাপের ফণায় মাথা ঢেকে পালিয়ে গেলেন উদাসীনতার শেষ প্রান্তে। শোনা যায় তিনি দেবতার পিতা ছিলেন।

ঘন জলার ওপর আবছায়ায় তারপর থেকে একটি রূপকে আমি দেখেছি বন্ধনমুক্ত হতে— সে রূপ যে আমার অসমবয়সী আমি-র মতো আমায় রোজ ঘুম পাড়ায়, বলে— নিজের ভেতরটা তৃষ্ণায় ছপ ছপ করে উঠলে নিজের হাসি পান করে বেঁচে থাকতে হয়।
বলে, বিশ্বাস কর, প্রাচীন গ্রন্থে যা লেখা আছে— দিবালোক
উহা একটি অত্যন্ত চোখের অসুখ— যে ঘন অন্ধকার
আমাদের ঘিরে রেখেছে অনন্ত— তাকে সাময়িক দেখতে না পাওয়া

‘যে স্বপ্ন ভাঙা শো-য়ে একা বসে দেখি তা এক অনন্য ধারা— অশ্রুর—
শীর্ণ একক ধারা— দেখলেই বোঝা যায়’

অকথ্য আওয়াজে পাতা ভরে ওঠে।
ল্যাম্পের ছোটো আলো। তাতে আর কতদূর দেখা যায়—
জীবিত থাকার শ্রম, ভৌত দশায়…
আজ রাতে কামনার যে মাত্র বাকি—
সব মুক্তির।

যাওয়া আছে, তাই
বাক্সভর্তি পাখি— আমাকে আকাশতর, নীল ও ছিদ্রময় করে রাখে
সময় এবার শেষ – আমি নেমে পড়ি— গায়ে সমস্ত শিথিল বন্ধন পরে
আমাদের রাস্তায়
রাস্তায় কবেকার হারিয়ে যাওয়ার দাগ—
উড়োজাহাজের ডুবি—
গাছে ঝরা প্রজাতির পাতা আসে
একটা দশার থেকে একা ছুট হয়ে যাওয়া
একা হাঁটা বস্তুত হাহাকার লাগে
হাহাকারে আমার সমগ্র পাতা ভরে যায়
দূরে বন দুলে ওঠে

একমাত্র নিভৃতিই আমাদের জন্য অন্যের ভিতর অবধি
বিভিন্ন জলবায়ু        কলঘর        রুগ্ন দেওয়াল
হেঁশেল        পিঙ্গল অসুখের দাগ হয়ে        পাখির পথ

অয়ি         রৌদ্রের ত্রসরেণুসকল— দেখ- কে         নিজেকে মুঠো মুঠো প্রকৃতিতে ছুঁড়ে
গাঢ় সমুদ্রের উড়ুক্কু মাছেদের ডাক হয়ে যায়—

ও বন্দী থাকলেই        পিঠে সাইকেল করে        গা থেকে নিজেকে নিজেকে        ঝেড়ে
খানিকটা নিম্বাসের        প্রতিধ্বনি
এসো ধ্বংস, আরও কাছে এসো—

ওই যে সময়ের বেড়া— ওই অপেক্ষার শিক গেঁথে আছে দৃশ্যে
মাটিতে পৃথিবী পরিত্যক্ত মায়ায় আঠালো পায়ের দুটি ছাপ

মোমবাতির ওপর
অন্ধকার আলতো সন্তুলনে
থেকে
সূক্ষ্ম পতঙ্গের মতো উড়ে যাচ্ছে
আবার
পাতার
ডগায়

ঝোপে ঢুকে
একটি চড়াই
পথ হারিয়েছে
ঈশ্বর
এতই যে
আমি

বন্ধুগন এই অকাল প্রহরে এখন অভিকর্ষ স্বপ্নকে বেঁধে ফেলছে সজাগতার দোষে— সে কারণে দম ফেটে যাচ্ছে চারিদিকের— অশেষ নিরেট পাথরে আবিষ্কার করি আজ বড়ো তৃষ্ণা ছিল আমাদের তৃষ্ণা বড়ো অন্যমনস্ক তৃষ্ণা— মেটে না, কিছুতে যা মেটে না। বালির ওপর ঢেউ মাত্র বাকি আছে পান করতে। তবু— দেখতে পাই, সমস্ত দৃশ্যের যা প্লাবন

উষরতার মোড় ভিজিয়ে বেজে উঠছে কালো বিউগল। আমার (আমাদের) থেকেই
সীমাহীন দৃশ্যের জন্ম— একটা পোড়ো জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে আমাদের থেকেই। আর তাকে সহ্য করতে পারছে এমন দু-চোখ শুধু মৃত শরীরে মানায়।

ওই করোটি দুলে উঠছে হাসির লাল পুষ্পোদগমে
ওই যে হলদে মেদ— মাংসের ওপর এসে বসেছে আহ্লাদী

আজ আমাদের এ সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার সময়

Facebook Comments

পছন্দের বই