লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শতানীক রায়ের কবিতা

যুদ্ধহীন যদি কোনো দেশ থাকে…


দ্বীপ যখন শুরু হয়
উঁচুতে তাকিয়ে কেউ পাখিকে ডাকে
একটার পর একটা ক্রিয়া ঘটতে থাকে
মাটি আর মানুষের রসায়ন ছত্রভঙ্গ হলে
মাঝরাতে ডাকতে ভুল করে পাখি
কীরকম করে শরীর দেওয়া নেওয়া হয়
ভূগোলের কাছে গিয়ে প্রার্থনা আরোপ করে
ক্রিয়াগুলো আলাদা হয়
সবকিছু একত্রে ঘটে, কখনো আলো
কখনো অন্ধকারই সব কথা বলে
আলো যেদিক দিয়ে ফিরে আসে
ফিরিয়ে নেওয়ার নদী ফিরিয়ে দেওয়ার মাটি
এরকম করে একদিন আবার দ্বীপমুখী হই
মূলে যে-কয়েকটি কথা আছে সেটাও ঘরমুখী হয়।


এমন একটি জগৎ
যার দরজা জানলা নেই
আলো অন্ধকার নেই
শুধু ধানক্ষেত পড়ে আছে
পাখি উড়ে আসে।
চৌকো চৌকো চিহ্ন নিয়ে
চিত্রকর্ম ফুটে ওঠে
কোনো পাখিকে বসাতে পারো
উদোম দরজার দিকে
জগৎ আড়াআড়ি হতে পারে
রেখা ধরে হেঁটে যাওয়ার ভেতর
সবকিছু। সবই অনন্ত সবই অপেক্ষা
ধরা পড়ে মানুষের বিপরীত কিছু
চিত্রের ভেতর এমনও হতে পারে
অপেক্ষারত পরি— ডানার দিকে
কেউ দেখেনি আর হঠাৎ সে উড়ে যাবে।


সব কিছু নিয়ে
একটা উদাসীন পুকুর।
জলাশয়ের অধিকাংশই পড়ে থাকে
দেখার জন্য এই ত্রিকোণ না
চতুষ্কোণও কিছু না
তেমনভাবে শহরের পর শহরে
কেউ গান গাইলে
পাখি ওড়া দেখলে
ঘুম ভাঙা— ঘুমোনো দেখলে
কে— কোন মানুষ
কী বলে উঠবে
সরল হিসেব নেই
মাছরাঙার যে কথা ছিল
পৃথিবীর যে ভিন্নতা ছিল
এবং বহুদিন পর
মূল কথা
বলার মাত্রা নিয়ে
যে-সব মানুষদের
সব… সবই চলে গিয়েছে
জল হয়েছে এত বড়ো
বিস্তারিত হয়ে বকুল গাছে
স্বপ্নের স্থপতি।
যারা শব বহন করে এনেছে
সিঁড়ি হয়ে নেমেছে দৃশ্য
অন্ধ করোটি
কিংবা শরীর
শরীরের সেই
কবিতা জমা থাক
বা উজাগর হোক।
বা না-হোক।


বাগানে একদিন…

তন্দ্রাঘোরে সে বাড়ি ফিরছে। ফেরার পথে অনেক আমবাগান লিচুবাগান পেরিয়ে আসতে হবে ওকে। সুন্দর নিকোনো উঠোন পাচ্ছে না সে। তাকে পাথরের কাছে মাথা ঠেকাতে হবে। একটু বসে জিরোতে হবে তারপর আবার উঠে যেতে হবে গৌর রঙের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারই কোনো কৈশোরের বিকেলে। অতৃপ্ত ঘোর বাসনা থেকে সে যখন মনে করেছিল আজকের গল্পটা পুরোপুরি বাদ দিয়ে নতুন করে একটা গল্প লিখবে। হয়ে ওঠেনি। এই আমবাগানেই সে এসে হাজির হয়েছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল আর হারিয়ে গেছিল। কেউ ডেকেছিল পাতার স্তূপের আড়াল থেকে কোনো পৃথিবীতে। জঙ্গল আর জলের সঙ্গমভূমিকে সে প্রথম বুঝেছিল। সে কীভাবে পুরুষ হতে গিয়ে নিজেকে দেখেছিল। গাছের ঝুলে থাকা ফল আবিষ্কারে। ঝড়ের ঝাপটায়। উপড়ে তোলার ক্রমশ সে তার ভেতর থেকে বেরিয়ে কোনো এক সমান্তরালে মধু রাখবে। ঘুমোতে যাবে এরকম তো কথা ছিল না। কেউ তো বলেনি এভাবে পাখির নতুন কথা তৈরি করো। তার জঙ্গল প্রাপ্তি হয়েছিল। ঘন সবুজ আর শুকনো পাতা মেশানো একটা জঙ্গল।


ঘুমের কথা শুধু বলে চলেছি। কেউ শোনে না। গাছটাকে বারবার সাবধান করলেও সেই-ই একই ফল হয়। পুরোনো ব্রাহ্মণ্যলোকের যত ছবি। কত কিছু একটা সময় ঘুরে ফিরে পাক খেয়ে ল্যাম্পপোস্টের নীচে পড়ে থাকে। এরপর সারাদিন সারারাত জোড়া দিয়ে বছরের পর বছর দিনের পর দিন মাঘের পরে মাঘ। একটা সময় সবই মাটির ঘোড়া হয়ে ওঠে। একটা সময় দীর্ঘ ঘুমোনোর পর দীর্ঘ কথা বলার পর যখন একটা খণ্ড তৈরি হয় পাক খাওয়া আরশি তৈরি হয় মাঘ মাসের ফুল তৈরি হয়। এইসব নিয়ে। আসলে এই সবই কোনো-না-কোনো কথার অংশ হিসেবের মধ্যে আরও হিসেব সংকেতের ভেতর আরও সংকেত মাংসবাহী দিন মাংসবাহী রাত। মাখনের সঙ্গে মানুষ শরীরের সঙ্গে… এ কি ঘটনা এ কি তার ভ্রম বা আর কিছু। ঘুমের পর আরও একবার ঘটে যাওয়া এই সবকিছু। পরা আর অপরার খেলা।

Facebook Comments

পছন্দের বই