লেখক নয় , লেখাই মূলধন

হারুকি মুরাকামির অন্তর্জগৎ

ভাষান্তর: রিপন হালদার

[২০০৮ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ‘দি নিউ ইয়র্কার ফেস্টিভ্যাল’-এ হারুকি মুরাকামির সঙ্গে কথপোকথন থেকে এই সাক্ষাৎকার সংকলিত। ‘দি নিউ ইয়র্কার’-এর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেবোরা স্টেইনম্যান।]

মুরাকামি: আমি যখন দশ বছর আগে শেষবারের মতো সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম এবং এই দশ বছরে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। যেমন, এই দশ বছরে আমি দশ বছর বড়ো হয়েছি। এটা খুব গুরুতপূর্ণ বিষয়, অন্তত আমার কাছে। দিনের পর দিন আমি বয়স্ক হয়ে উঠছি আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজেকে কৈশোরের দিনগুলো থেকে অন্যরকম মনে হচ্ছে। আজকাল আমি ভদ্রলোক হবার চেষ্টা করছি। আপনি জানেন যে, ভদ্রলোক এবং ঔপন্যাসিক একইসঙ্গে হওয়া সহজ নয়। একজন রাজনীতিবিদের একইসঙ্গে ওবামা এবং ট্রাম্প হবার চেষ্টা করার মতো। তবে আমার কাছে ভদ্রলোক ঔপন্যাসিকের সংজ্ঞা আছে। প্রথমত, তিনি যে আয়কর দিয়েছেন সেই বিষয়ে কথা বলেন না। দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁর প্রাক্তন বান্ধবী বা প্রাক্তন স্ত্রী সম্পর্কে লেখেন না। এবং তৃতীয়ত, তিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ সম্পর্কে ভাবেন না। সুতরাং, দেবোরা, দয়া করে আমাকে এই তিনটি জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না। আমি সমস্যায় পড়ে যাব।

দেবোরা: আপনি আমার প্রশ্নভাণ্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন। আসলে আমি আপনার অতি সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘কিলিং কমেন্ডোটোর’ দিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলাম। বইটি এমন এক ব্যক্তির বিষয়ে, যার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে এক পুরোনো চিত্রশিল্পীর বাড়িতে থাকা শুরু করে। সে যখন সেই বাড়িতে গিয়ে থাকা শুরু করল তখন অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে। এর মধ্যে একটা হল কিছুটা কূপের মতো দেখতে একটি গর্তের দেখা পাওয়া। আমি ভাবছি আপনি কীভাবে উপন্যাসের এই ভিত্তিটি নির্মাণ করলেন?

মুরাকামি: আপনি জানেন যে এটি একটি বড়ো বই এবং এটা লিখতে আমার দেড় বছর বা তার বেশি সময় লেগেছিল। তবে এটি শুরু হয়েছিল একটি বা দু-টি অনুচ্ছেদ দিয়ে। আমি সেই অনুচ্ছেদগুলো লিখে আমার ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম এবং একসময় ভুলেও গিয়েছিলাম। তারপর, সম্ভবত তিন বা ছয় মাস পরে আমার ধারণা হয় যে, আমি ওই অনুচ্ছেদ্গুলো দিয়ে একটি উপন্যাস লিখতে পারি। তারপর আমি লিখতে শুরু করি। আমার কোনো পরিকল্পনা বা প্লটও ছিল না। তারপর গল্পটি আমাকে পরিণতির দিকে নিয়ে গেল। যদি আপনার কোনো পরিকল্পনা থাকে, আপনি শুরু করার সময়ে যদি পরিণতি জানেন, উপন্যাস লিখে কোনো আনন্দ নেই। আপনি হয়তো জানেন, কোনো চিত্রশিল্পী চিত্রকর্ম শুরু করার আগে রূপরেখা এঁকে নেয়, তবে আমি তা করি না। আমার কাছে আছে একটি সাদা ক্যানভাস এবং একটি ব্রাশ। তাই দিয়ে আমি ছবি আঁকি।

দেবোরা: উপন্যাসটিতে একটি চরিত্র বা ধারণা আছে, যা মোজার্টের অপেরা ‘ডন জিওভান্নি’ থেকে গড়ে উঠেছে। এই ধারণা বা চরিত্রটি বইয়ের কেন্দ্রে থাকার কারণ কী?

মুরাকামি: সাধারণত আমি আমার বইগুলি শিরোনাম দিয়ে শুরু করি। এই ক্ষেত্রে ‘কিলিং কমেন্ডেটোর’ শিরোনাম আর প্রথম অনুচ্ছেদটা নিয়ে আমি ভাবলাম যে এগুলি দিয়ে আমি কী ধরনের গল্প লিখতে পারি! জাপানে ‘কমেন্ডেটোর’ বলে কোনো কিছু নেই। তবে আমি এই শিরোনামটির অদ্ভুতুরে মেজাজটি অনুভব করে মনে মনে পুলকিত হয়েছি।

দেবোরা: আপনার কাছে ‘ডন জিওভান্নি’ অপেরা কি গুরুত্বপূর্ণ?

মুরাকামি: চরিত্র আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি সাধারণত মডেল ব্যবহার করি না। আমার কেরিয়ারে একবার মাত্র একটি চরিত্রের জন্য মডেল ব্যবহার করেছি। লোকটি খারাপ ছিল এবং তাকে আমি বেশি পছন্দ করতাম না। ওই লোকটি সম্পর্কে আমি লিখতে চেয়েছিলাম। তবে মাত্র একবার। আমার বইগুলির অন্য সমস্ত চরিত্র আমি শূন্য থেকে তৈরি করেছি। আমি কোনো চরিত্র তৈরি করার পরে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নড়াচড়া করতে থাকে এবং আমাকে তারপর তার চারপাশে ঘোরাফেরা করে তার সাথে কথা বলে যেতে হয়। একজন লেখক হিসেবে যখন আমি লিখি একইসঙ্গে আমার মনে হয় আমি কোনো আকর্ষণীয় বইও পড়ছি। এইভাবে আমি লেখাটি উপভোগ করি।

দেবোরা: আপনি উল্লেখ করেছেন যে, বইটির মূল চরিত্র অপেরার পাশাপাশি অন্যান্য সংগীতও শোনে। প্রায়শই আপনার চরিত্রগুলি দেখি কোনো নির্দিষ্ট ব্যান্ড ও জোনারের সঙ্গীত শুনে থাকে। এগুলি কি আপনাকে লিখতে সাহায্য করে?

মুরাকামি: আমি লেখার সময় গান শুনি। সুতরাং সংগীত খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার লেখায় আসে। কী ধরনের সংগীত এটা নিয়ে আমি বেশি ভাবি না, তবে সংগীত আমার কাছে একধরনের খাদ্য। সংগীত আমাকে লেখার শক্তি যোগায়। তাই আমি প্রায়শই সংগীত সম্পর্কে লিখি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি আমার পছন্দের সংগীত সম্পর্কেই লিখি। আমার স্বাস্থ্যের পক্ষেও এটা মঙ্গলজনক।

দেবোরা: সংগীত কি আপনাকে সুস্থ রাখে?

মুরাকামি: হ্যাঁ, খুব। সংগীত এবং বিড়াল। তারা আমকে প্রচুর সাহায্য করেছে।

দেবোরা: আপনার কাছে কতগুলি বিড়াল আছে?

মুরাকামি: একটাও না। আমি প্রতিদিন সকালে আমার বাড়ির চারপাশে ঘুরতে গেলে তিন-চারটি বিড়াল দেখতে পাই, এরা আমার বন্ধু। আমি তাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়ি এবং তাদেরকে অভিবাদন জানাই। তারা আমার কাছে আসে। আমরা একে-অপরকে খুব ভালোভাবেই চিনি।

দেবোরা: যখন ‘নিউইয়র্কার’ ‘কিলিং কমেন্ডেটোর’-এর একটি অংশ প্রকাশ করেছে, আমি তখন আপনাকে আপনার কাজের অবাস্তব উপাদানগুলি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আপনি বলেছিলেন, “আমি যখন উপন্যাস লিখি, বাস্তবতা আর অবাস্তবতা একসাথে মিশে যায়। এটা আমার পরিকল্পনা মাফিক নয় এবং লেখার সাথে সাথে আমি এটি অনুসরণ করি। তবে আমি যতই বাস্তবতাকে বাস্তবসম্মতভাবে লেখার চেষ্টা করি ততই অবাস্তব পৃথিবীর উদয় হয়। আমার কাছে উপন্যাস পার্টির মতো। যে-কেউ যোগ দিতে চাইলে দিতে পারেন। এবং যখনই তাঁরা চলে যেতে চাইবেন, যেতে পারেন”। সুতরাং আপনি কীভাবে এই পার্টিতে অতিথি এবং অন্যান্য বিষয়গুলোকে নিয়ে আসেন, অথবা আপনি যখন লিখছেন সেখানে কীভাবে এরা বাধাহীনভাবে আসতে পারে?

মুরাকামি: পাঠকেরা প্রায়শই আমাকে বলে থাকেন যে আমার কাজগুলিতে এমন একটা অবাস্তব জগৎ রয়েছে, যে-জগতে নায়ক অনায়াসেই যায় এবং আসল পৃথিবীতে ফিরেও আসে। তবে আমি সবসময় অবাস্তব বিশ্ব আর বাস্তববাদী বিশ্বের মধ্যে সীমারেখা দেখতে পাই না। সুতরাং, অনেক ক্ষেত্রে তারা মিশে গেছে। আমি মনে করি জাপানে এই অন্য বিশ্ব আমাদের বাস্তব জীবনের কাছাকাছি। এবং আমরা যদি সেই অন্য পৃথিবীতে যেতে চাই সেটা আমাদের পক্ষে অতটা কঠিন হয় না। আমার মনে হয় পশ্চিমা বিশ্বে এটা করা অত সহজ নয়, সেখানে অন্য বিশ্বে যেতে হলে আপনাকে কিছু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে জাপানে আপনি যেতে চাইলে সহজেই যেতে পারেন। সুতরাং, আমার গল্পগুলিতে, আপনি যদি কোনো কূপের নীচে যান, দেখতে পাবেন সেখানে একটা অন্য বিশ্ব আছে। এবং আপনি সেখানে দুই বিশ্বের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পাবেন না।

দেবোরা: অন্য দিকটা সাধারণত অন্ধকারের জায়গা, তাই তো?

মুরাকামি: না-ও হতে পারে। আমার মনে হয় এটা আগ্রহের ব্যাপার। আপনি যদি কোনো দরজার সন্ধান পান এবং সেটা যদি খুলতে সক্ষম হন তবে আপনি সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন। এটি কেবল আগ্রহ থেকেই হতে পারে। ভিতরে কী? সেখানে কী আছে? এই প্রশ্ন করা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। আমি যখন কোনো উপন্যাস লিখি তখন ভোর চারটের দিকে উঠে আমার ডেস্কে গিয়ে লেখা শুরু করি। বাস্তব বিশ্বে এটা ঘটে। আমি আসল কফি পান করি। কিন্তু একবার লেখা শুরু করলে আমি অন্য কোথাও চলে যাই। আমি দরজাটা খুলি, সেখানে যাই এবং সেখানে কী ঘটে দেখতে পাই। আমি জানি না বা জানতে চেষ্টা করি না, এটা বাস্তব না অবাস্তব। যতই আমি লেখার মধ্যে গভীরভাবে ডুবে যাই ততই সেখানে ওদ্ভুত কিছু দেখতে পাই। আমি স্বাভাবিকভাবেই তাদের দেখতে পাই বলে মনে হয়। সেখানে যদি কোনো অন্ধকারও থাকে তবে সেই অন্ধকারের কিছু বার্তা থাকে অবশ্যই। আমি সেই বার্তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। আমি সেই বিশ্বকে ঘুরে দেখি, তার বর্ণনা করি, শেষে আমি ফিরে আসি। এই ফিরে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ফিরে আসতে না পারেন তবে ভয়ের ব্যাপার। তবে যেহেতু আমি পেশাদার, আমি ফিরে আসতে পারি।

দেবোরা: এবং আপনি ওই জিনিসগুলি সঙ্গে নিয়ে আসেন?

মুরাকামি: না। এটা ভীতিজনক হবে। আমি যেখানেই সব ছেড়ে দেই। আমি যখন লিখি না, আমি খুব সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনের রুটিনটাকে আমি মেনে চলি। আমি খুব সকালে উঠি এবং বেসবল খেলা না থাকলে রাত ন-টার দিকে শুতে যাই। সঙ্গে থাকে আমার দৌড় এবং সাঁতার কাটা। আমি একজন সাধারণ মানুষ, সুতরাং রাস্তায় যখন আমি হেঁটে চলি তখন যদি কেউ বলে, “মিস্টার মুরাকামি, আপনার সাথে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগল”, আমি বিব্রত বোধ করি। আমি এমন কিছু না। তাহলে কেন সে আমার সাথে দেখা হওয়ায় খুশি হল? তবে আমি যখন লেখার মধ্যে থাকি তখন অবশ্যই আমি একজন বিশেষ, অন্তত অদ্ভুত মানুষ।

দেবোরা: চল্লিশ বছর আগে, বেসবল খেলার মাঠে আপনি কীভাবে লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন, গল্পটি বহুবার বলেছিলেন। হঠাৎ আপনি ভেবেছিলেন, “আমি একটা উপন্যাস লিখতে পারি”। যদিও এর আগে আপনি লেখার চেষ্টাও করেননি। এবং আপনি আপনার স্মৃতি কথা, “হোয়াট আই টক আবউট হোয়েন আই টক অ্যাবাউট রানিং”-এ বলেন, “মনে হয়েছিল আকাশ থেকে কোনো কিছু নেমে এসেছিল এবং সেটা আমি হাতে পেয়েছি”। আমরা ধরে নিতে পারি ওই জিনিসটি ছিল আপনার লেখার ক্ষমতা। সেটা কোথা থেকে এসেছিল বলে আপনার মনে হয়? আর আপনি এত সাধারণ হলে কেন এটা আপনার কাছে এসেছিল?

মুরাকামি: সেটা একধরনের বোধোদয় ছিল বলে মনে হয়। আমি বেসবল পছন্দ করি এবং আমি প্রায়শই বলপার্কে যাই। ১৯৭৮ সালে ঊনত্রিশ বছর বয়সে আমি টোকিয়োর বেসবল পার্কে আমার প্রিয় দল ‘ইয়াকাল্ট স্যালোজ’ (Yakult Swallows)-এর খেলা দেখার জন্য গিয়েছিলাম। সেই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনটায় ছিল খেলার উদ্বোধন। আমি খেলাটি দেখছিলাম এবং প্রথম খেলোয়াড় একটি ডাবল মারল এবং সেই মুহূর্তে আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম যে, আমি লিখতে পারি। তখন প্রচুর বিয়ার পান করেছিলাম বলে কিনা জানি না। তবে তখন আমার মনে হয়েছিল যেন আমার মধ্যে একধরনের বোধের উদয় হয়েছে। এর আগে আমি কিছু লিখিনি। আমি একটি জ্যাজ ক্লাবের মালিক হিসেবে সান্ডুইচ আর ককটেল তৈরিতে ব্যস্ত ছিলাম। আমি খুব ভালো সান্ডুইচ তৈরি করি। তবে সেই খেলার পরে আমি একটা ষ্টেশনারি দোকানে গিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলাম এবং শুরু করলাম লেখা। তারপর আমি লেখক হয়ে যাই।

দেবোরা: সেটা চল্লিশ বছর আগে। সেই সময় লেখা আপনাকে কীভাবে বদলে দিল?

মুরাকামি: আমি অনেক বদলে গিয়েছিলাম। লেখা শুরু করার সময় আমি লিখতে জানতাম না। আমি খুব অদ্ভুত উপায়ে লিখেছিলাম। তবে পাঠক এটা পছন্দ করেছিল। এখন আমি আমার প্রথম বই ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’-এর জন্য তেমন একটা যত্ন নিই না। তখন আমি লেখা প্রকাশের উপযুক্ত ছিলাম না। বহুবছর আগে টোকিয়োর ট্রেনে বসে আমি একটি বই পড়ছিলাম এবং খুব সুন্দর একটি মেয়ে আমার কাছে এসে বলল, “আপনি মিস্টার মুরাকামি?” “হ্যাঁ, আমি মিস্টার মুরাকামি”। “আমি আপনার বইয়ের বড়ো ফ্যান”। “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ”। “আমি আপনার সমস্ত বই পড়েছি এবং আমি সেগুলো খুব ভালোবাসি”। আমি ধন্যবাদ জানাই। তারপর সে বলেছিল, “আমি আপনার প্রথম বইটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। ওটাই আমার কাছে সেরা”। “ওহ্‌, তুমি তাই মনে করো?” সে বলল, “আপনার লেখা এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে”। এইভাবে আমি সমালোচনায় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। তবে আমার লেখা আগের থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছে তা মনে করি না। আমি মনে করি সময়ের সাথে সাথে আরও ভালো হচ্ছে আমার লেখা। চল্লিশ বছর ধরে আমি আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং আমার বিশ্বাস যে, আমি সফল। ট্রেনের সেই মেয়েটি আমাকে জিন কুইল নামে এক জ্যাজ সংগীতকারের কথা মনে করায়। তিনি স্যাক্সোফোন বাজাতেন। উনিশ-শ পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে বিখ্যাত ছিলেন। সেই সময় যে-কোনো স্যাক্সোফোন বাদকের মতো তিনিও চার্লি পার্কার দ্বারা খুব প্রভাবিত ছিলেন। একরাতে তিনি নিউ ইয়র্কের একটি জ্যাজ ক্লাবে বাজাচ্ছিলেন এবং যখন তিনি ব্যান্ডস্ট্যান্ড থেকে নামলেন তখন এক যুবক এসে বলল, “আরে, আপনি তো চার্লি পার্কারের মতো বাজাচ্ছেন!” জিন বললেন, “কী?” “আপনি চার্লি পার্কারের মতো বাজাচ্ছেন!” জিন তখন তাঁর অলটো সাক্সোফোন যন্ত্রটি তার কাছে তুলে বললেন, “এই যে, আপনি চার্লি পার্কারের মতো বাজিয়ে দেখান!” আমি মনে করি, এই গল্পটির তিনটি বিষয় আছে— এক, কারো সমালোচনা করা সহজ। দুই, মৌলিক কিছু তৈরি করা খুব কঠিন। তিন, কিন্তু কারো এটি করা দরকার। আমি চল্লিশ বছর ধরে করে আসছি। এটা আমার কাজ। আমি মনে করি, আমি এমন একজন লোক যে অন্যদের মতো কিছু কাজ করে চলেছে, যেমন নোংরা পরিষ্কার করা বা কর সংগ্রহ করা। সুতরাং, কেউ যদি আমার প্রতি কঠোর হয় তবে আমি আমার যন্ত্রটি তাকে ধরিয়ে বলব, “এই যে, আপনি এটা বাজিয়ে দেখান!”

দ্বিতীয় পাতা

Facebook Comments

পছন্দের বই