লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অভিষেক নন্দীর কবিতা

চাবিগুচ্ছ

ইতর মানচিত্রে পাখিরা নষ্ট টর্চ লাইটের মতো
দাঁত দিয়ে কেটে রাখা বেড়া, শাড়ির আদলে
যে বালিকা-পাখি বিয়েতে পরবে ভেবেছিল
কাগজের নৌকা থেকে
পা তার ফসকে যাচ্ছে বারংবার…

জুয়ারি তার টেবিলকে এমনভাবেই
সাজানো দেখতে চায় প্রতিবার

***

আরও কিছু হতে পারত
এই ধরুন, একটা বটফলের সঙ্গে বাসররাত
সঙ্গমের শুরুতে ধার নেওয়া হাতপাখা
আমাদের মাথার ওপর
উড়োজাহাজ হয়ে উড়ে যেতে পারত

প্রতিবারই স্বপ্ন ভেঙে যায়
কেন আসে এত স্বপ্ন?
নিজে থেকে এমন হুট করে ঢুকে যায় খননে,

প্রতিবারই ঘট ভেঙে জমানো কান্না দিতে হয় তাকে

***

তোমাকে ভয় দ্যাখাবে বলে
বেহিসেবি সমস্ত আকার
অন্ধ হয়ে শুয়ে আছে থুতু সেজে

এ কথা মাছরাঙা জানে না,
যারা নদী ভুলে, সন্ন্যাস কাটায় ফুলের বাগানে

অথচ, এখনও তোমার রঙ গোলাপের মতো
তোমার কাঁটা দিয়েই ফুটো করা হয়
মায়ের ঘুণধরা স্তনের বৃন্ত…

***

আমাদের ভালোবাসা বাঘের খিদে
বেঁচে থাকার ভেতর জলের মতো ওষুধ

ঘড়ি ভাঙার শব্দে
নদী ভুলে যায় চিঠির পেছনে বাঁধা শ্মশানকে
এইখানে আগে কেউ এমনভাবে আসেনি
একেকটা চতুর্ভুজাকৃতি গণ্ডি পেরোলেই,
কৃষ্ণচূড়া থেকে নেমে আসেন বিসমিল্লাহ

***

তোমাকে রুটির মতো গড়িয়ে দিই এসো
ক্রুশবিদ্ধ হাঁ-এর মধ্যে তুমি ঢুকে যাও
ধারালো ঘুমের বদলে

এই ‘রুটি’ শব্দটা-ই একটা বিশ্বাস
তার গড়িয়ে যাওয়াটাকে নিউটন আটকাননি
তবু জন্মদিন নিয়ে বসে থাকা
ক্রুশ বিক্রেতার নাম লিখতে গিয়ে
তুমি এঁকে বসবে—একটা ছিন্নভিন্ন জোনাকি

***

প্রতিটি ঘরের ভেতর আরেকটা ঘর বেড়ে ওঠে
যার কথা বাড়ি-মালিক জানে না
তবু শাদা প্রণামের ভেতর তার উজ্জ্বল উপস্থিতি
টের পেয়ে যায় অভাবের নখ!

ঘরের ভেতর ঘর একটা প্রতিপক্ষ
কাটাকুটি খেলায় সে হয়ে উঠবে সচিন
এই ভয়ে আলো নিভিয়ে অন্ধকারে রেখে দিচ্ছি
আমাদের হাত, পা, বাসন…

***

মাথার ওপর ঘুরতে থাকে পৃথিবীর ভারী স্তন
পালক থেকে পালকে রটে যেতেই
দরজার এসে দাঁড়ায়
গাছ থেকে খসে পড়া মৃত পাখিদের সাজসজ্জা

খিলখিল করে নেচে ওঠেন মহেশ্বর

কলকে, যা হতেই পারে কারোর চোখে কৃষ্ণের বাঁশি
আমাকে দূর থেকে পৃথিবীর স্তন হাতে ডাকে
বহু পুরনো দিনের বন্ধুদের গালি নকল করে

Facebook Comments

পছন্দের বই