লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অর্ঘ্যকমল পাত্রের কবিতা

প্রিয় অসুখ


প্রিয় অসুখের কাছে এসে আরও উদ্বেলিত হয় রাত। প্রিয় তালগাছের দিকে তাকাই। তালগাছটিও আমার দিকে…

বুঝি, ক্রমেই ক্লান্ত ও ফেনিল হয়ে উঠব। একা-একা, মনে হয়, এ সময়, সমস্তটাই মেঘের। অতএব, এখন-ই আমাকে ডেকে আনতে হবে রাত। রাত…রাত…ওহ্! রাত আর ঘুম…ঘুম আর রাত….

এছাড়া, আমার কোথাও যাওয়ার নেই…


আমি একটার পর একটা কবিতা লিখব, আর তুমি একটার পর একটা লেখা পড়বে না। এভাবেই একটার পর একটা দিন আমরা কাটিয়ে নেব উপেক্ষায়…

তারপর, এইসব যাচ্ছেতাই রাত! আমরা ভাবব না কিছুই। শুধুই উপেক্ষার জোরেই, আমরা ঝুলিয়ে রাখব সেতু

এভাবেই পাথরের দেশে আরও পৃথুলা হবে মাটি। মাটির দেশে আরও সস্তা হবে পাথর। পাথর! তুমি কি পাথর হলে নাকি! এখনও বুঝতে পারছ না— আমার যৌনচেতনা ক্রমেই শুকিয়ে শুকিয়ে আমসত্ত্ব হয়ে গেছে!


তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে, স্পষ্টতই নিজেকে ‘বানচোদ’ বলে টের পেয়েছি। এই যে ঘন ঘন খিদের জন্য লড়ছি, আর অবশিষ্ট খিদে ছুঁড়ে দিচ্ছি, এইসব লীলাখেলা বন্ধ হওয়া দরকার!

নথভাঙা মেয়েটির কথা ভাবি… তার ঠোঁটের কথা স্মরণে আসলে, যে চেতনা চাগাড় দেয়, তা তো খিদেই। যে খিদের এক শতাংশও, আমি ভুলোর মতো কুকুরদের ছুঁড়ে দিতে পারব না!


এই আগুন কেউ জ্বালিয়ে রেখে গেছে। আমি শুধুই গরম হয়ে বাড়ি এসেছি। একজন নিভন্ত মানুষ হয়ে ঘুমিয়ে নেব বলেই…


বড়োজোর আর কয়েকটি দিন। কিংবা, কয়েকটি ঘণ্টা। তারপর বড়োজোর দুইখানি আঙুল চুষতে চুষতে একটানা ঘুম। বড়োজোর একটা রাত…

হয়তো আমি বড়োজোর তোমার পাশে শুতে পারব। কিংবা একদিন তুমি আমার পাশে…

আপনিও হয়তো এসব পড়ে, বড়োজোর আমাকে আবিষ্কার করতে পারবেন। কিন্তু তারপর?


এবং টুথব্রাশের ছোঁয়ায়, স্বপ্ন থেকে জেগে উঠছে মেয়েটি। একাকী বেসিনে দাঁড়িয়ে, কিছু কথা হয়তো আসছিল। কিংবা, কিছু কথা হয় তো এসেছিল…

উদগ্র ফ্যানা আর তেজি বাতাস! আমি দেখি। দেখি— ঝাঁঝালো কোনো বিকেলে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, আমাদের ঝিঙেবাগানের ফুলগুলো!

প্রিয় শীত! এইসবই দেখি… এইসব দেখতে দেখতেই আসে টুথব্রাশের স্বপ্ন… আর আমি ঘুমায়ে পড়ি! ঘুম…


বস্তুতই এইরকম একটা মেঘলা দিনে নিজেকে সামলে রেখেছি। ভয় পেয়েছি। মশারির ভিতর থেকে বাইরের পৃথিবীকে একটা বিড়াল মনে করেছি…

আর মশারির চারদিকে চারটে মাছের টুকরো ছড়িয়ে রেখেছি। যাতে আমার ঘুম না ভাঙে সহজে!


দেওয়াল থেকে একটি ক্যালেন্ডার ঝুলছে। অথবা, ওই ক্যালেন্ডার-ই একটা দেওয়াল। সুতরাং, যেদিকেই যাব, সেদিকেই কিছু ক্যালেন্ডার থাকার কথা।

অথচ, এই সন্ধ্যা। এই জলের গ্লাস। আর এই বিছানাময় জগৎ। বা জগৎময় বিছানায় শুয়ে, আমি আজকের দিনটিকে বুঝে উঠতে পারছি না!


অথবা রাত্রিবেলা ঘুম ভাঙল আমার। “leave it” বলে চলে যাওয়া মেয়েটিকে আমি জানিয়ে দিলাম— ঠিক সাড়ে চোদ্দ লাইন আগেই আমি তাকে ত্যাগ করেছিলাম…

তারপর ধরো, আমি বাথরুমে গেলাম। হিসি করলাম। শুধু, ফ্ল্যাশ দিলাম না আর…

১০
কোনো স্বপ্ন নয়। ঘুমের ভিতর কেবল ঘুমাতেই চেয়েছি আমি। কেবল চেয়েছি আমার দরজা, যাতে তোমার দিকে টানা না হয় কোনোদিন। হয়তো এই চাওয়াটুকুও একটা স্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন হয়তো বা। হয়তো স্বপ্নের কথা চাঁদ জানে। এবং সকালে উঠে আমি চাঁদকে দেখতে পাই না কোনোদিন। হয়তো চাঁদ, সুচিত্রা সেন।

অতএব, আমার জানা হয় না কিছুই…

Facebook Comments

পছন্দের বই