লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অর্ণব রায়ের গুচ্ছকবিতা


রাক্ষসবর্গে জন্ম। তার সন্ধ্যাতারায় দাগ ছিল করতলে জরুল,
মুকুল
শুকায়ে রয়েছে তারপর থেকে, ঝরে না, বর্ষে বর্ষে ফল,
ধরে না,
গাছপালা আপামর শুধুমাত্র ভীত স্মৃতি হয়ে
শেকড়ে শেকড় হয়ে জমে আছে, হিম,
দেওয়ালে বছর থেমেছে, দিন মাস মানুষের স্মৃতিতেও আর বেঁচে নেই।

মানুষের চলাচল ওঠা বসা হাঁটা থেকে তার ছায়া
পাশ কেটে গেছে কবে,
অন্য এক দাঁতালো পৃথিবীর ভীতিতে কাঁটা।
রাক্ষসবর্ণে জন্ম, সন্ধ্যাতারায় রক্তাভ জরুল,
দৃষ্টিপাতে চরাচর, বিবর্ণ,
মাংসভুক জ্যোৎস্নায় লাল।


নিয়তি নির্মিত কারখানা, এইরূপ দেখতে হয়, দেখো, অপাঙ্গে ছিপ ফেলে দেখো এ দেহরত্ন কীভাবে কালি ছাই ও শেষে ছায়ার নিঃশ্বাসমাত্র হয়ে পৃথিবীর এককোণা খামচে প্রাণের ধোঁকায় বেঁচে থাকার ভ্রমে রয়ে যায়। একই শ্বাস বারবার টেনে, পৃথিবী সুন্দর— বলে চারপাশটা একবার দেখে নেয়, গাছকে বন্ধু ভাবে, সবুজ বন দেখে নিজেকে স্বস্তি দেবার, শান্তি, মুহূর্তখানেক হলেও শান্তি দেবার আয়োজন করে। বিরাট দৃশ্যের মতো, সমুদ্রের শেষকণা ও আকাশে যেন সে শান্তি অধরা থাকে। কারখানা চলে।


রক্তাক্ত সফেন কেশ, জিহ্বা শ্বেতবর্ণ,উজ্জ্বল করবী যেন বাক্য, ফুটে আছে, পদমূল এত গৌর, বিশ্বাস হয় না এ স্তবের শুরু না শেষ! মানুষরক্ত কি বইছে! মানুষী ধমনী শিরা আদৌ আছে এই মন্দির প্রাঙ্গনের মতন বিপুলচেতনাতলে? মদ যেন ঘন কাম শোক ঘৃণা রক্ত পিত্ত মুত্র দ্বেষ বিবাহ দাম্পত্য সন্তানকামনারেশ, ধারণ ধারণ কী কী আরও ধরেছ মানুষের অবয়বে!
মানুষের চিন্তা বিস্তার পেতে পেতে আকাশ ভাবে, কালো তারাময় শূন্য পার করে অন্য তারা, ভাবে।
সব ভাবা শেষ হলে তুমি হও।


ঘুরে ঘুরে শস্যের উজ্জ্বল খোসা ওড়ে,
রোদ তাকে স্বাস্থ্য দেয়,
ওড়ার ভরসা দেয়,
এখানে উঠোনে বাতাস থাকে না, রমণীর কল্যানশ্বাস থাকে,
শস্যের উজ্জ্বল খোসা সন্তানের মতন ওড়ে,
গায়ে মুখে চুলে লেপটে যায়,
জননী ভেবে ছাড়তে চায় না।
রোদ শস্য শ্বাস ও উজ্জ্বল খোসা—
এভাবে সকাল কেটেছিল অসংখ্য শতাব্দীর, শান্ত,
এভাবে বিকেল ডুবেছিল খালপাড়ে কোনো টাঙানো মাছের জালের আড়ে।
কাগজে কলমে সে-সব শতাব্দী পুড়ে কালো কুঁকড়ে গেছে,
মানুষ জ্বলে খাক,
আকাশে মানুষের ম্লান চামড়া ওড়ে।


জরুরি নৌকাখানি কে নিয়ে গেল জলে, মাঝনদীতে?
এখনও পাড়ের কাজ শেষ হয়নি,
পালে যথাযথ বাতাস গলুইয়ে আলপনা, দাঁড়ে পূর্ণ বেগ
বসানো হয়নি,
এখনও হালখানি
শিশুর মতই দিশাহীন, টলমলে।
জরুরী নৌকাটি কাঠামো পেতে না পেতে
কে নিয়ে গেল প্রাণ ছেড়ে, দূরের জলে!
সেখানে কুয়াশায় মিশে ভাসে অদৃশ্য ভয়,
বাঁকে চড়ায় শবদেহ আটকে থাকে,
পাড়ে পাড়ে জনপদ,
মানুষের আবাস থেকে শতেক হত্যা,
শতাধিক হত্যাতীত নিষ্ঠুরতা তাক করা থাকে

প্রাণের নৌকাটি বুঝি অকালে হারালো

Facebook Comments

পছন্দের বই