লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অর্ণব বসুর কবিতা

জীবন, তোমাকে

ঝুম নেমে আসে স্টেশনে
খোলা আকাশের নীচে আমরা তিনজন
সেঁকে নিচ্ছি যৌবন আর
গাঢ় সংলাপে ভিড় করে আসে ব্যাভিচার।
জুবুথুবু রাত্রে নিভে যায় মুখের আলো,
আশ্চর্য কথা-উপকথায় ভরে ওঠে
ক্ষমাহীন বাতাস।
কী নিদারুণ হতাশায়
ট্রেন থেকে নেমে যায় মেয়ের দল
ভাঙা কুয়াশায় পিছলে যায় সবুজ সিগন্যাল…

পারদ

চুলের ভেতর আকুলিবিকুলি পেরিয়ে নদীগর্ভে প্রবেশ
জলআয়নায় ভেসে ওঠে স্থবির মুখ, মায়াজাল।
অথচ আদর শব্দের আগে কে যেনো কমা বসিয়ে যাচ্ছে প্রত্যেকবার,
দেখো, সবুজ কীভাবে পেয়ে যাচ্ছে পরবর্তী ঘাস
দেখো, কুয়োর গভীরে পাক খেয়ে ওঠে অন্ধকার—
খনন করতে করতে তোমার মুখে এক আশ্চর্য লোডশেডিং…

ঘুলঘুলি

ভেতরে এক উন্মাদ বেড়াল ঘুরে বেরায়
এক দরজা থেকে আরেক দরজায়
থাবাতে তার ব্যথার দাগ, বহুদিনের পোষা ।

ভেতরে ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে, চুরির স্বভাব
যেন কার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে
পড়ুয়া মেয়েটির ঘুম

ভেতরে এসে কড়া নাড়ে, দেখে গোপন লতাপাতার
আড়ালে ইতিপূর্বেই কে যেন বাড়িয়েছে নখ
দৃষ্টি ঘুলিয়ে যায়, শরীরের আনাচ কানাচ—

ভেতরে এক উন্মাদ বেড়াল ঘুরে বেড়ায়
গলায় লাল রিবনের ফাঁস, উঠে যাওয়া আদরচিহ্ন
দেখে ভুল করে ফেলে পাহারাদার।

যমজ দুঃখ

চোখ এক আশ্চর্য পারদ। সকাল থেকে এই লাইনটা বিড়বিড় করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে তোমার ওঠানামা দেখেছি। আবহাওয়া পালটে যায়৷ জ্বর আসে। ঘোর ঘোর ভাব দু’চোখে। এ সময়ে তিতো খেতে ভালো লাগে। তোমার ঠোঁটে আলতো কামড়। দু-কলি ধরি চলো। বাজাবে না? ঘরের ভেতর থেকে সুর ভেসে আসে,আমাকে বাজাও। সেরে যাবে আমাদের যমজ দুঃখ। পাড়ার মোড়ে মোড়ে বেলুন উড়িয়ে বেড়াব। এ বড়ো দীর্ঘ সময়,আমাদের ভবিষ্যত হালকা ‘না’ এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

সমর্পণ

এইসব নিমফল দুপুরে বসন্তহাওয়া নিয়ে
ছেলে মেয়ের আনাগোনা পুকুরের ঘাটে
এককোণে জড়োসড়োভাব, নিজের আঙুলে জড়ায় ছেলেটি-
ওই তার ধ্যানমগ্ন ছিপ ফেলে বসে থাকা—
ফাতনায় নড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাস, ওই।

অন্বেষণ

সমস্ত সম্পর্ক এভাবেই শেষ হয়ে আসে
ঝরে যাচ্ছে চেরিফুল, সারা রাস্তায় ছড়িয়ে
পড়েছে তোমার মুখের লাবণ্য
আমি এক ছায়াপথিক, কেবল পথ চিনে চিনে
তুলে নিচ্ছি দীর্ঘ ঘুমের ওষুধ

অন্ধ হাওয়া

এমতবস্থায় ছাদে এসে দাঁড়ানো বারণ
খোলা চুল উড়িয়ে নিয়ে যায় অন্ধ হাওয়া
মুহূর্ত কেঁপে ওঠে, ছিঁড়ে যায় আঙুলে
জড়ানো সুতোটি

হালকা পিঠের কাছে নেমে আসে শাড়ি
রোমাঞ্চতরণী—
বিকেলবেলার আলো, হলুদ মেয়েটির কাছে
তুমি আরেকটু ম্লান হবে না?

গ্রাস

মাঝে মাঝে আড়ালে চলে যাওয়া ভালো,
যেভাবে তিনতলা বাড়িটার পেছনে এখনো সূর্য লুকিয়ে আছে…
তুমিও তো প্রতি সন্ধ্যায় আইস কিউবের মতো অসংখ্য বিন্দুতে ভেঙে যাও,
ঘরে তখন হুল্লোড়, হাত থেকে হাত আলোময়, কাল গ্রহণে রাহু এসেছিল পাতে, গোটা একটা সূর্য গিলে আমার চোখে হামলে পড়েছে..
আড়ালে কাঁপে দেহ…
আমার মুখে তুমি, রাহুর মুখে সূর্য।

রাণাঘাট লোকাল

বনমধ্যে ছুটে চলেছে ট্রেন
মধ্যে মধ্যে অবাক করা আলো—
কেঁপে উঠছে মেয়েটি—
আদর আদর
চোখে কি তার বিদ্যুৎ চমকালো?

ফুড়ুৎ

খুব কাছে এলে ফুড়ুৎ উড়ে যাবে, এই নিটোল বিশ্বাস থেকে কিছুতেই সরছো না তুমি। শিখে গেছ প্রশিক্ষিত ব্যাধের আড়াল, গাছেদের চালাকি। গভীরে এলে কথা কমে আসে। দীর্ঘ ঈ এর মতো জটিল ডালপালা। তুমি আরেকটু নীচু হয়ে যাও। হাত-পা গুটিয়ে আসে। এই তোমার তৃতীয় সুযোগ। হাতছাড়া করার আগেই কিছু পালক ঝরে যায়…

কবি পরিচিতি:
অর্ণব বসু, মূলত কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে একটি এমএনসিতে কর্মরত। প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় ২০১৪-য় বৃষ্টিদিন পত্রিকায়। তারপর থেকে চলা শুরু। অবসরে ছবি তোলা ও সিনেমা দেখার শখ।

Facebook Comments

পছন্দের বই