লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কৌশিক সেনের কবিতা

মহাবিদ্যা

গেরি গুগলি তুলতে তুলতে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে পুকুরের জল। পায়ের নীচে ভাঙা শামুক বেঁধে। পুকুরের গর্ভে মহাপ্রলয় তখন! কোচ রে নরমুণ্ড। খড়গ হাতে কালো মেয়েটি উঠে আসে পানাপুকুর থেকে…

যশোদা

হাঁ মুখ খুলতেই ছেলের মুখে গ্রাস ভরে দেয় মা। খোকাকে সবুজ মাঠ, হলুদ পাখি আর সোনালি ধান দেখায়। গোয়ালে কালো গাইয়ের ডাক শুনিয়ে ভাত খাওয়ায়। খোকা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, মুখের গ্রাস গেলে না। মা বলে, হাঁ কর! ছেলে ফের হাঁ করে…

মা দেখে, পাতাহীন শুকনো গাছ, ধূ ধূ ফেটে যাওয়া মাঠ। একটা অস্থিচর্মসার মৃত গোরুর খুবলে খাওয়া অংশ ঠোকরাচ্ছে একটা হা-ভাতে কাক… অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে খোকার মা!

কমলেকামিনি

মাকে ভাত বাড়তে বলে সেই যে তেপান্তরের মাঠ পেরোল ছেলেটা,
তারপর ফিরল না আর…

ভাত আগলাতে আগলাতে মা বুড়ি হল, সিঁথির আল বরাবর
ছুটে গেল ভাদর মাসের দুরন্ত ঘুর্ণি…..

ভাত আগলাতে আগলাতে মায়ের শেকড় হেঁসেল ছাড়াল,
করীবর্গার ছাদ ছাড়াল মেহগনি ডালপালা…

ভাত আগলাতে আগলাতে দুগ্গামাস পেরোল মায়ের,
অঘ্রানের হিম গড়ালো ভাতের থালায়, ব্যঞ্জনের বাটিতে…

সপ্তডিঙায় চেপে ছেলে ফেরে ঘরে। দেখে, তাদের কোঠাবাড়ির দাওয়ায়
মস্ত একটা পদ্মপুকুর, ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে কানায় কানায়…

সীতার পাতাল প্রবেশের পর

আমি দেখলাম একটা দাঁতাল শুয়োর মাটি খুড়ে খুড়ে তুলে আনছে একটা কঙ্কাল। সম্ভবত নারীদেহের। পাঁজরে এখনও লেগে আছে লক্ষ্য লক্ষ্য লালসার ক্ষতদাগ। খুলিতে গভীর যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। উরুসন্ধি হয়ে ঊর্বস্থিতে তখনও চুঁইয়ে পড়ছে চ্যাটচ্যাটে আর্য পৌরুষ!

ওই চোখের কোটরে ভারতবর্ষ দেখেছিলাম একদিন। এখন সেখানে গভীর অন্ধকার। এইসব অস্থিতে রক্ত প্রবাহিত হলেই অঙ্কশায়িনী হওয়া যায় সূর্যবংশীয় অবতারের!

নাহ্, এই শুকর বরাহ অবতার নন। উর্বরা মৃত্তিকার দেবীকে উদ্ধারের কোনো অভিপ্রায় ছিল বলে মনে হয়নি! শুধু ক্ষুধার্ত দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলতে চেয়েছিল মাটির গভীরে চাপা পড়ে থাকা রসালো কন্দ মূল!

চতুর্দশী

এ কোন জন্নত তুমি আমায় দেখালে, দেবী! এলোমেলো
গুড়ো শিশির ছড়িয়ে দিলে মাঘ শীতের মতো সাদা আকাশ
বরাবর! রাত ভোর হতেই দাবানলের মতো ভালোবাসা ছড়িয়ে
দিলে এই ঘন সবুজ উপত্যকায়…

চিত হয়ে শুয়ে আছি আমি। কৃত্তি বস্ত্র ছেড়ে এসেছি
অন্ধকার মহাশুন্যে। উদ্ধত শিশ্নে পাপড়ি বিস্তার করেছে
অনন্ত যোনিসুবাস। নরম দুধের মতো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে
গভীর উষ্ণতা। আমার সুঠাম ছাতি, নাভিমূল, জঙ্ঘা
কেঁপে কেঁপে উঠছে নিবিড় আদরে…

চোখের তারায় শ্বেত ধুতুরার প্রতিচ্ছায়া। ডমরু বেজে চলেছে
গভীর অন্তঃস্থলে। জটায় ধারণ করা পুন্যপ্রবাহিণী আজ বয়ে
গেছে এই নগ্ন শরীরের সীমানা ছাড়িয়ে। ভস্ম শরীর পেঁচিয়ে
নেমে আসছে গলায় জড়ানো শীতল নাগিনীরাগ। আমি আবিষ্ট।
এই গভীর নেশার ঘোরে আমাকে নাচতে বোলো না আর!

Facebook Comments

পছন্দের বই