লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কৌস্তভ কুন্ডুর গুচ্ছকবিতা

খোলস ছাড়তে গিয়ে
খোলস ছাড়তে গিয়ে দেখি ফেরারি মেঘের সব দল; পুতুলের জামার ভেতর স্তনগন্ধ নিয়ে বাতিল শস্যের মতো শুয়ে আছে। আঁচলের উড়ে যাওয়া আলো গুটিয়ে এনেছিল যেসব শালিকেরা, বিজোড়ের ভ্রান্ত খেলায় ঢিল খেয়ে খড়খুটো ফেলে গেছে আগাছা মেশানো প্রচীরের পিঠচেরা জামার ভেতর। এই জল-জঙ্গল, স্তূপীকৃত পাথর পাহাড় এসেছিল কুশি হাতে, অর্পণে দিয়েছিল শ্রাবণের মাস।
তুমি ব্যর্থ পথিক। অন্ধ রেখেছিলে পথ। চাঁদ কাটা অন্ধকার বুনে ছিলে ঘরে। হিসেব বোঝোনি, বোঝোনি ফসলের ঘ্রাণ পেয়ে উড়ে গিয়েছিল যেসব পঙ্গপাল; আজ তারা ডানার মতো ভারী জলভরা চোখে এসেছিল, —ফিরে গেছে অপেক্ষার পদচিহ্ন রেখে।

টেকনিক্যালি
কারা নেমে ছিল পথে ? যত্নে, অজস্র ঝড়ের ভেতর; বুকভর্তি জলের ওপর হাত তুলে বাঁচিয়ে রেখেছিল নিশানের রং। ভাবি, রক্তের ভেতর কি এমন রোদ নেমে এলে পথ বোনে, দল বাঁধে মানুষের ঝাঁক। কথা কিছু পুরোনো। ব্যবহৃত জামার ভেতর গুমোট হয়ে যাওয়া ঘাম। তবুও; অগ্রজ ধুলো মাখা পা নক্ষত্রের মতো আলোর বিন্দু ফেলে রেখে যায়। এইই দুঃসময়, তবুও অন্ধকার পর্দার ওপর ওলোট-পালোট আলোর হাওয়া এসে লাগে। রাত জেগে থাকে যেসব ডানা, সড়সড় কেঁপে ওঠে যতোগুলো অন্ধকার ঝোপ— ভাব করি। উড়ে আসে বাতিল সব কাগজের দল।
খেলতে তো সবাই জানে না।
যারা খেলে; জানে মস্তিষ্ক আসলে একটি পারমাণবিক ঝড়ের মডেল।

দাঁড়িয়ে থাকা কথাগুলো

সে তুমি যায় বলো, আমি একটা নীল আলো, ছুটে বেড়াচ্ছি রক্তে, জঠরে, ফুসফুসে। একদিন সাদা চাদর চেয়ে নেব।
মালা থেকে শুকনো ফুল নিয়ে যেতে দেব ধেড়ে ইঁদুরের গর্তে। আমাকে টাঙিয়ে রাখবে না কোনো দেওয়াল। নষ্ট হওয়ার আনন্দে ভিজে থাকবে আমার রঙিন ছবির অ্যালবাম।


ওভাবে তর্কে যেও না। আমি কিন্তু সোজা সাপটা তারাখসা। খানিক ঝিলিক দিয়ে লুফে নেব এই অন্ধকার। বুড়ো চাঁদের আলোয় তোমার সমস্ত দাঁড়িয়ে থাকা নিঃস্ব করে চলে যাব আলোকবর্ষ দূর।
অতটাও নির্বোধ নই। তোমার বাহারি শখে ছড়িয়ে দেবো বেলপাতা, ফুল। সারাটা জীবন ধরে দেখেছি— মাংসের লোভে কীভাবে ভ্যানিশ হয়ে যায় পাঁঠার অণ্ডকোষ।

ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম

নিজেকে ছিড়ে ফেলতে ফেলতে টুকরো কাগজ হয়ে যাব একদিন। চোখের তলায় কালো দাগ; কপালের বিস্তৃতি জুড়ে কোঁচকানো ভাঁজ থেকে যাবে উড়ো-খুড়ো রাস্তায়, অলিতে গলিতে। নিথর এই পুকুর হারমোনিয়াম হয়ে বাজবে বৃদ্ধ বট গাছটির তলায়।
অনেকদিন হল মস্ত এক উট পশ্চিমের রোদ গায়ে মেখে মায়াবী গন্ধের দিকে চলে গেছে।

আলো জ্বালাতে গিয়ে পুড়িয়েছি হাত। বাঁশের বনে হয়েছি প্রবাদ প্রাচীন ডোম। এখন আর নিস্তার নেই। কাটা শামুকের পড়ে গেছে পা। কী আর করার, সকালে উঠি, ঘুমোতে যাই রাতে। প্যানপ্যান করে বেজে ওঠে দম দেওয়া ঘড়ি।
জ্বলে উঠি; স্রেফ, দেশলাই কাঠির মাথায় যেমন বারুদ।

নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ। চলো, নাচ শিখি। দু-হাত উপরে তোল, আঙুলে সাজিয়ে রাখো শুকতুন্ড, অরাল, অলপদ্ম, সূচি। চোখ ঘোরাও উত্তর দক্ষিণে। ঘুঙুর লাগানো পা করো তরঙ্গ মুখর। তালে তালে মিলিয়ে দাও পা।
চলো, নাচ শিখি। অভ্যেস করি কুচিপুডি, ভারত নাট্যম।
দোষ না দিয়ে চলো উঠোনকে নিমন্ত্রণ পাঠাই নাচের আসরে।

Facebook Comments

পছন্দের বই