লেখক নয় , লেখাই মূলধন

জ্যোতির্ময় মুখার্জির গুচ্ছকবিতা

কাঠের পা, ঘোড়ার পা

আচ্ছা, ঘটনাটা কি সত্যি? ওই যে, যেটা লিখেছে ‘মহাজনটুলি’ কবিতায়। আমার উত্তর ছিল, হয়তো। হয়তো ‘সতী-সাবিত্রী কথা’

আসলে প্রতিটি লেখার দুটো পা থাকে। যার একটা পা হাঁটতে হাঁটতে কোনও এক আরবি ঘোড়ার হয়ে গেলেও, অপর পা’টা অবশ্যই কাঠের

এখন, তুমি কোন পা’টা দেখবে। কোন পা’টা খুলে লাগিয়ে নেবে তোমার পায়ে, সেটা সম্পূর্ণই তোমার ব্যাপার। আমি তো বেশ কাঠের পায়েই হেঁটে যেতে পারি আরব দেশে। পিঠে এক সওয়ারি। যাকে তুমি কবিতা বলেই চেনো

কীভাবে!

কীভাবে? তার জন্য তোমাকে পড়তে হবে প্রভাত চৌধুরী। আর যদি এত কষ্ট না করতে চাও, তাহলে শোনো রবীন্দ্রসংগীত। দেখবে, কীভাবে দু’পায়ের মধ্যবর্তী দূরত্বে হাত বদল হয়ে চলে গেল ভানুর কলমটি কাদম্বরীর হাতে

হেলে থাকা স্ট্রীটলাইট

একটি মেয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে

যদিও পিছনে ফাঁকা প্রশস্ত ফুটপাথ, তবু
ফুটপাথ থেকে নেমে এসে দাঁড়ালো রাস্তায়

বাঁ পা’টা একটু আগে, না ডান পা?
মনে নেই, ফিনফিনে কাপড়ে ঢাকা

শুধু দেখলাম একটা শরীর
ঝুঁকে আছে, রাস্তার উপর

রাস্তা থেকে উঠে এসে কেউ কিনে খাবে বলে

মহাজনটুলি

জায়গাটার নাম মহাজনটুলি, বর্ধমান। খোসবাগানের ভিতরে বা ভিতর থেকে বাইরে যেতে যেতে শুকনো এঁদো গলিকে আরও এঁদো করে, ভিজিয়ে বসে আছে ওরা

ওরা মানে
যাদের আমরা বেশ্যা বলি

ফেলো কড়ি মাখো শরীর বলে যারা রাস্তা থেকে খুবলে তুলে, খুলে দেয় গলি

কবিতাটা এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু হল না

কারণ, বছর বাইশের ছেলেটি পড়ে আছে। সাইকেলের হ্যান্ডেল থেকে ঝুলে ছিল ব্যাগ, ব্যাগে থাকা বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে, সাইকেলটাও, রাস্তায়

এমন সময় বেরিয়ে এল কিছু হাত, কালো বাসি ময়লা তামাটে ডাঁসো লিকলিকে ফর্সা

জল দিল, ডেটল দিল, বই গোছাল, ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাগ’ও গেল পালটে

ফেরার কালে, আবার আসিস ভাই

একটা ফাটাফাটি কবিতা লিখেছি

এমনই মনে হচ্ছে আমার। বিকালে পেস্টাব বা সন্ধ্যায়। বা, কাল। বা, অন্য কোনোদিন। বা, পত্রিকা থেকে ফিরে এসে

দারুণ কিছু একটা লিখে ফেলব, এই অহংকারে আমার আর কিছু লেখা হল না। বলেছিল, জয়ীতা। জয়ীতা ব্যা নার্জি গোস্বামী। দারুণ লেখে। ‘খিচুড়ি-স্কুলে’ খাবার নিতে আসা গাভীন বউটির কথাও শুনেছিলাম ওর মুখে, ওর কবিতায়

মাঝে মাঝে এমনই হয়, নিজের লেখা পড়ে নিজেকেই আর চিনতে পারি না। ভাবি, এটা কি আমি লিখেছি। লিখলাম কী করে। বাহ্ রে আমি

রাতে আর ঘুম আসেনি। সকাল থেকে বউকে সাড়ে সাত বার বললাম কথাটা। ও তো ঠোঁট উলটে, হাত উলটে, ফিরে যাওয়া শরীর উলটে বলে দিল, তোমার কবিতা রাখো তো তোমার কাছে

আর আমি ভাবছি, লিখে ফেলা কবিতাটি কি আর আমার?

Facebook Comments

পছন্দের বই