লেখক নয় , লেখাই মূলধন

দীপ শেখর চক্রবর্তীর কবিতা

অগ্নির রূপ আজ তরল, কাব্যভাষা


মেঘলা দিনের আশ্চর্য উপকথাগুলো স্পষ্ট করে বোঝানো যায় না।
শুধু হেঁটে চলেছে পাঁচিলের ধার দিয়ে নম্র বিষণ্ণতা।
ভিজে যাচ্ছে তার প্রসারিত ডাকগুলো, খন্ডিত এই পৃথিবীর সমস্ত
আমলকিবন জুড়ে
প্রত্যাশা প্রেতসজ্জা ধারণ করে ছুটে চলে।
মেঘলা দিন একটি যৌনরস সরলরেখার ওপরে অসংখ্য বিন্দু।
দূর থেকে কোন এক প্রাচীন বেতারতরঙ্গ থেকে মানুষ খুঁজে পায় বিরল কথার ছায়া।
তবু মানুষের হৃদয় একখণ্ড বিশুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস
প্রতীকের মতো ভাঙে
একটি মেঘলা দিনের পাঁচিলে রঙিন কাঁচের ট্রাপিজ তৈরি করেছে।


শৈশবের কালিমন্দির থেকে এক অলৌকিক ঘণ্টাধ্বনি
বেজে চলেছে। এই যৌনশরীর জুড়ে,জ্বর,রসস্ফীতিকে
দুটি সুদক্ষ স্তন দিয়ে লালন করতে শিখেছে সন্ধের কিশোরীরা।
আমার মুগ্ধ হওয়ার চোখ খসে গিয়ে বিদায়গহ্বরে লবনাক্ত জল জমে।
তবু যে কেন মেঘাছন্ন আকাশে রাত্রির জোনাকি দেখে ফেলেছে মৃত্যুবোধ।
নৈঃশব্দের ছায়া গড়ে ওঠে দুহাতে
নগ্নতার বেলগাছে বসে ছায়াকুকুরদের কথা ভাবে কিশোর কাক।
তাকে অক্ষত চিহ্নগুহার কথা জানিয়েছে সন্ধের হারমোনিয়ামের
প্রসারিত দীর্ঘশ্বাস।
চিরকাল এভাবেই কাকের শরীর থেকে, প্রেমভারে ঝরে পড়ে
সৃষ্টির অন্ধতা।
অর্থহীনতার নির্মম পথ এঁকেবেঁকে উপকথার অন্ধ বেড়াল চলেছে।


মোহতরঙ্গ নাচে। স্তনবৃন্তের চারিদিকে ছায়াশিল্পীদের গ্রাম থেকে এঁকে এঁকে স্পর্শভান্ড নিয়ে নেমে এল ওষ্ঠরস।
শোও ভোর হয়ে এল এখন, তবু ভুলো না আলো।
আগুনের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিওনা। যদিও বৃক্ষের আগুনে ভরে যেতে পারে মর্মর আর সহস্র পাখিদের ডাক তোমার শরীরে আশ্রয় নিতে এলে কীভাবে ফেরাবে?
পাখিদের পিঁপড়েভুক আর তোমার যৌনরসের দিকে সারি সারি পিঁপড়ে ছুটে চলেছে।
পাখিদের ফেরানোর মন্ত্র আবিস্কার করো, তুমি জানো অরণ্যের ধারে এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তোমার নতুন জন্মের বল্মীকের স্তূপ।
কী করবে জাদুকর যদি জীবন্ত খরগোশ তোমাকে ঠকিয়ে প্রকাশের নতুন পথ আবিস্কার করে ফেলে?


অগ্নির রূপ আজ তরল।মেঝেতে বুক ছুঁয়ে এগোচ্ছে জড়তার দিকে।
নাটকের একটিই চরিত্র অথচ ফুরিয়ে গেছে তোমার স্বগত সংলাপ, এবার মুক্ত তুমি, সমস্ত দাম মিটিয়ে, ওড়ো—
প্রশংসা থেকে, দল থেকে, কীর্তি থেকে, ওড়ো সেসব থেকে যার দিকে শকুনের তীক্ষ্ণ অপেক্ষা রয়েছে
যৌনরস মাখানো শাবলের খননের শব্দ থেকে মুক্ত করো নিজেকে বরং—
একা থাকা ও নিঃসঙ্গতার মাঝে ঘুরে ঘুরে যে ভরিয়ে তুলেছে দুটি স্তন মুকুলগন্ধে তাকে খোঁজো, যেন প্রতিটি খোঁজ তোমার অন্তিম, পান করো—
শিশুজন্ম লাভ করো তুমি, সেচে সেচে নৌকা থেকে তুলে নাও জল, মেরামত করো—
এভাবে বায়ু, এভাবে জল, এভাবে মাটি তোমার শাদা কাফন থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাক দেহ—
দেখো, এখনও প্রত্যাশার মৃতদেহভুক কীটেরা এসে পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারেনি তোমার রোমাঞ্চিত শরীর—
অগ্নির রূপ আজ তরল।
জড়তার বুকে আজ মুকুলগন্ধ। সন্ধ্যাভাষা।
বাতাসকে কেউ কেউ আজ হেঁটে যেতে দেখেছে অরণ্যের দিকে।

সমস্ত বর্ম খুলে অমসৃণ পায়ে আজ ছাদে উঠে এসো—
ঐ দেখো তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছে শেষ বিকেলের সূর্যবাউল।
ঐ দেখো সারি সারি পিঁপড়ের দল তোমাকে ফেলে ছুটে চলেছে যৌবনের মিষ্টতার দিকে
ঐ দেখো তেজপাতাগাছের মাথায় গোত্তা খেয়ে পড়ে আছে তোমার সমস্ত বয়স। কাব্যভাষা।
দেখো দেখো খোলা কলতলায় কেমন ঝুলে পড়েছে আকাশের রসস্তন।
এবার কাকের অহেতুক স্নানের মতো করে এই জীবন তোমার,
বলো, কীভাবে কাটাবে?
শোও, যাকে ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়ো কাঁটার বিছানায়, শিশ্নাসন শুধু, বুকে বুকে ব্যর্থ ঘর্ষণ—
যাও, যেখানে খুশি, পতঙ্গের মতো আলো দেখো, ঝাঁপ দাও, পোড়ো—
তবু কেন দাহ্যগুণহীন তোমার দুটি চোখ চিৎকার করে বলে বাঁচাও, বাঁচাও
সমস্ত তমসাধ্বনি তুমি হারিয়ে ফেলেছ লোভে
বলো কীভাবে কাটাবে?
কাকের অহেতুক স্নানের মতো প্রেমহীন, এই অবশিষ্ট জীবন তোমার?

Facebook Comments

পছন্দের বই