লেখক নয় , লেখাই মূলধন

দেবোত্তম গায়েনের কবিতা

আশ্চর্য এক চিতা-কে কেউ বাঘ মানতেই চাইছে না…


ব্যথার মতো করে যে-ছবি দেখি তা মানুষের স্বভাব। ফলের টক নিয়ে অর্ধেক রেখে যায় বাদুড় সংসারের মাথায়। আহারের অনার্য; শরীর দিয়ে প্রবেশ করতে চায়; ঘাসের জন্মের মতো চাতুরি পায়ের শীতল দুঃখ ছুঁয়ে প্রতিবাদে ন্যুব্জ হয়ে এলে তুমিই আসো আবার উপঢৌকন নিয়ে। এমন জটিল ব্যাধের নিষ্ঠা অর্পণের মতো পাথর খুঁজে পাওয়া যায় না কোথাও। আঙুলের অপরিপক্কতা মাটিতে মিশে যায়; মূর্তির ভাব। কিছুই আয়ত্ত করার নেই, নেই কিছু ভাঙার মতো অবয়ব! ফলা ধীরে ধীরে আঙুলের ন্যায় শিখে নেয়।


‘সামান্য’ বোঝাতে গেলে মানুষের অহার রূপ নম্রতা হারায়। চারিদিকে বন। মধ্যে মধ্যে ফাঁক হারিয়ে ফকির আমার আদল দেয়। যৎসামান্য প্রলেপের পর চুরমার করে দেয় আবার! ডুবে যাওয়া আলোর পথ ধরে সেও মিলিয়ে যায় ধানক্ষেতে। একটা অশরীরী উন্মাদনা সমস্ত পথে বিছিয়ে সে যায়। কোথাও ছায়া মাড়ানোর মতো ঊর্বর ভূমি পড়ে থাকে না! আহারের থেকে লুকিয়ে শুধু জলরূপ জরিপ করে কেটে গেল কতগুলো বছর। বিশ্রী রকম ধারালো হয়ে আসে ব্যাধের নিশানা, ক্ষত!


প্রতিপালকের মগ্নতা শেষমেশ লুঠ হয়ে যায় গহিন বনে। সে খোঁজে। পরিক্রমণ। গোলাপের শীতল অভিমান ভেঙে যে-বাতাস ধাক্কা মারে পাথরের গায়ে; আহা যেন চূর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল কোনো ঋষি। জটাতে তার আগুন চোখেতে তার ধ্যান অথবা কেউ খুন করে এমন; রেখে গ্যেছে হয়তো। পুড়ে পুড়ে হাত অবধি এলে সে কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে তার জীর্ণ পায়ের পাতা। সাদাভ। চারিদিকে ধোঁয়া ওঠা অভিপ্রায় জড়ো হয়। চলে আসি।


দীর্ঘদিনের এসব জটিল প্রতিফলনের ধাঁধা পাখি উড়িয়ে দিয়ে ভাবে কীভাবে যে আলোর মতো মিথ্যে হয়ে ঢুকে পড়ে আয়ুর্বেদ আহারে! মানুষ তো শিকড়ের খেয়াল আলগা করতে চাইছে। চাইছে সে প্রেমের মতো অব্যর্থ নাজুক কিছু। তোমার ওই আলস্যনগরে জেগে ওঠে কামনার বাঁশিওয়ালা ততক্ষণে। ফেরি করে ফিরে যায় প্লাস্টিকের পুতুল। একটা আশ্চর্য চিতা-কে কেউ বাঘ বলে মানতেই চাইছে না। চাইছে না কেউ খুনির সবল স্বীকারোক্তি।


থরে থরে সাজানো কাঠের টুকরো। টুকরো জুড়ে আসবাবের কল্পনা। ও মুসাফির! শরীরময় এই ছায়ার মায়া মাদুলির মতো ভারী হয়ে আসে; বিশ্বাসে মিলেয়ে গেল যেন। দাউ দাউ দাউ দাউ। এই শ্মশানের বৃদ্ধ বটের ছায়ায় জুড়য়ে আসে আগুন এক সময়। মানুষের হাত থেকে কুঠার তবু নামেনি।

Facebook Comments

পছন্দের বই