লেখক নয় , লেখাই মূলধন

পঙ্কজ চক্রবর্তীর কবিতা

অভিশাপ

এড়াতে পারি না এই ঝোপঝাড় সবংশ এসেছে। আমার স্নায়ুর ভিতর পায়চারি করে সন্দেহজনক আলো। কাঁটায় কাঁটায় মানুষের মতো প্রত‍্যাখ‍্যান। অবেলার ছায়া এসে দাঁড়ায় চেয়ারের পাশে। প্রকৃতি বিষয়ে ছোটোখাটো স্মৃতি উৎপাদিত হয় হাড়ের ভিতর। এড়াতে পারি না। শুধু বুঝি হাইরোড পেরিয়ে বাস ধরতে হয়। জানলায় চোখ রেখে দেখা হয় দেয়ালে দেয়ালে উৎসব। চোরাপকেটের কাঁটা সেও বুঝে ফেলে অপর একজন মানুষের চামড়ায় ঢুকে পড়েছি আমি। বয়স তেতাল্লিশ।

একটা বয়সের পর মাছের বাজারের দিকে ছুটে যেতে হয়। কানকোর লাল দেখে মনে পড়ে পাখি বিষয়ে কত অপরাধ দুর্ঘটনাপীড়িত। না আর হ‍্যাঁ, মাঝখানে ঝুলছে সস্তার পুঁইচারা।

ঘরে এসে বুঝি বুকের তাপে ঢাকা আছে ডিমভাত। খাবারে ছিল অভিশাপ, বিধবা রাধুনীর স্বামীর পুণ‍্যস্মৃতি, শরীরে বেল্টের চাকা চাকা দাগ। এর বেশি আর কিছুই করার নেই যখন মাটির পালঙ্কে বসে কাছে টেনে আনি তোমাকে। বয়স তেতাল্লিশ। যখন মুরগির মাংস কিছুটা সস্তায় পাওয়া যায়।

স্বভাবরতি

পাথরের বিরুদ্ধে আরেক পাথরে আজ তোমাকে জাগাব। অস্থায়ী বন্ধুশিবির। তুমি মাতৃলালিত এক ধূসর পালক। নাবিকের সৌন্দর্যে জেগে ওঠো সূর্যাস্ত বন্দরে। পথের ভিতর অন্য এক পথে আমাদের দেখাশোনা পাখির ডানায়। বিবাহবার্ষিকী। কত তুচ্ছ কথায় জড়িয়ে পড়ি। এই যে সবুজ বিকেল, এই যে শান্ত মানুষের পায়চারি, আমার বলার কিছু নেই। শুধু বালিশের গর্ভে রাত দীর্ঘ হয়। ঘুমের ভিতর দুই শালিখের সন্ধানে ছুটে বেড়ায় এক মাঠ ভয়। ভয়ের সন্ধানে এসে মনে হল আঁধারজঠর। আমাদের অসুখীবিদ‍্যা ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্ধকার স্কুল বারান্দায়। পকেটভর্তি এক নুড়ির জীবন নিয়ে সাঁতরে বেড়াই। নিবিড় কাকতাড়ুয়া হেসে ওঠে জ‍্যোৎস্নার মাঠে।

অথচ কত শান্ত ছিল প্রপিতামহ তোমার জীবন। দেরাজ ভর্তি বইয়ের স্তূপে ছিল গোপন আত্মজীবনীর হাড়হিম পাঠ। ‘তোমাকে পাইয়া সুখী হইয়াছি’ মার্জিনে জেগে ওঠে কবিতার চর। আজ একবুক আতঙ্কের ভিতর ছুটে যায় ভোরের বাস। পাথরের গভীর মুখোশ। তুমি তার কেউ নও। মনে পড়ে পাঠশালা ফেরত এক বালকের মেয়ে মেয়ে খেলা। অবলুপ্ত পুরুষের শেষ আত্মরতি। তার উপর হলুদ জামার ছায়া ফেলে দূরে সরে যায় মেয়েদের প্রথম প্রেমিক। সহজ দুপুর। টের পাই ঘাসে ঘাসে জলের অসুখ।

অশ্রুজাতক

স্পর্শ করে বুঝি এই বুক ইস্পাতনির্মিত। লঘু বাতাসের বিকেলের নিঃশ্বাস। শব্দকে সন্দেহ করে আলোর দিকে ঝুঁকে যাওয়া। এইসব প্রত্নবিবাহের রীতি ও পদ্ধতি লুকিয়ে ছিল এতদিন বিছানায় বালিশের এপারে ওপারে। সামান্য ইশারায় দাঁড়িয়ে থাকি খাদের পাশে। জল চাই। স্নেহ চাই। বিবাহের আগের একটি রতিক্লান্ত জামা চেয়ে বসি। এদিকে বটগাছের গোড়ায় বসেছে রাতের হাট। দু-একটা পান বিড়ি চায়ের দোকান। কথায় কথায় এসে পড়ে রাষ্ট্রের বেআক্কেলে কাণ্ড। ঝোপ বুঝে কোপ মারে বাজারসমিতি। আমি খোকন বিশ্বাসের ভাই। প্রমাণের অভাবে রাতের শেষে বাড়ি ফিরে তোর সাথে শুই। তোকে সন্তান দেব না কোনোদিন। যোনিদ্বারে এঁকে দেব ছায়ার পুতুল। যেকোনো অন্ধকার গুহায় পরপুরুষকে পাহারা দেবে আমার অশ্রুজাতক।

এই যে ঘনাইছে ছায়া বনে বনে আমি তার প্রথম সন্তান। পিতামহের দেরাজের সেইসব নথিপত্র ঘেঁটে আমিও প্রমাণ করে দিতে পারি রক্তের অভিমুখে আমার জন্ম হয়নি এখনও। একটি প্রাগৈতিহাসিক অনাথ আশ্রম ঘুমিয়ে আছে আমার মাথার ভিতর। শুধু পুরুষের বুকে আমি টের পাই বিষণ্ণ গানের দেবতা বসে আছেন একা। তাঁর অভিশাপ ‘নির্বংশ হ। নির্বংশ হ’।
তুমি শুনেছ হে অশ্রুজাতক!

অঙ্গ কাঁদে

মনে মনে কথা হয়। যেন রাইসঙ্গ ফিরে আসে। বোবা ফসলের দিকে চোরাটান। কথা হয় সংসার বিষয়ে। আলু বাঁধাকপি বিষয়ে মতামত জড়ো করি। দুপুরের ঘাম অনাহারের রেখা পেরিয়ে দাঁড়ায় তোমার সিংহাসনের কাছাকাছি। তোমার আঁচলের ফোড়নের গন্ধে দু-একজন দাসখত লেখে। রোদ্দুরে শুকোচ্ছে গতরাতের শাড়ি। শুকোচ্ছে সামান্য সংসারের দরজা জানালার দৃষ্টিবাতাস। বিকেলের দিকে একটি ঘুম নগ্ন হেঁটে আসে চোখের পাতায়। সব চ‍রিত্র কাল্পনিক। তবু মনে হয় এইসব ছোটোখাটো যৌনপরিচয়ে বাতাবি-লেবুর ফুল ফুটে আছে একা সন্ধ্যায়। মন্থর মেঘের পায়ে সুতো বেঁধে ফিরে আসে কবেকার এক মলিন হিংস্র সাদা শাড়ি।

আমাদের কথা জানে অক্ষরসমিতি। জানে অঞ্চলপ্রধান,দশটা-পাঁচটার বড়োবাবু,হিসেবরক্ষক। একদিন দোকান বাজার এসে মুছে দেয় স্রোতের বাতাস। ইট পাথরের অন্ধকারে প্রতিটি শিৎকার জেগে ওঠে তুমুল কলরবে।

শুধু আপনি লেখার থেকে ক্রমাগত দূরে সরে গিয়ে হাতে তুলে নেন উজ্জ্বল বাজারের ব‍্যাগ। চরিত্রের পিছুপিছু সংলাপ হাতে ছুটে যেতে হয় হলুদ পাতার দিকে। প্রধান চ‍রিত্র পলাতক। আপনার ঘননির্দেশে মুছে যাচ্ছে অস্পষ্ট প্রান্তর। শুধু সুদূর পানবরজে একটি শরীর জুড়ে সাতটি বন্ধুর লুপ্ত অপচ্ছায়া দেখে ফেলে লোকাল কমিটি।

ধর্মঘট

একটি বাসের পিছুপিছু আমারও অদৃশ্য যাওয়া ছিল। আমি জানি শেষবেলার সূর্যাস্তে মাঠের ফসল সহজ হবে। তোমার একফালি রান্নাঘরে বেজে উঠবে মৃত মানুষের অসমাপ্ত জীবননাটক। ‘আবার দেখা হবে’ এই সন্দেহ তোমার আত্মীয়স্বজন। শুধু মানুষ দেখে ফেলে কথার মূল্য শ্রমিকের ঘামে ভেজা গামছার চেয়ে দামি। বাস চলে যায়। বাস ফিরে আসে। ফিরে আসে পাঁচ নম্বর সিটের রুগ্ন মেয়েটি। হতবাক দু-একটি কাকের সন্দেহ। চাকার আলোয় গড়িয়ে এসেছে বিদ‍্যা। প্রতারক সাবধান বাণী। মালের দায়িত্ব আরোহীর। তোমার পকেটে কাকতাড়ুয়ার চোখ, নিছক কাল্পনিক দুর্ঘটনার থেকেও জোরালো মানুষের জামার বোতাম।
আমরাও দেখেছি একই ছাদের তলায় সস্তার ভাতের হোটেলে বাসি মাছ এখনও সতেজ হয়ে আছে। চোখের জল মুছে প্রতিটি মুহূর্তে স্নেহময়ী অন‍্যের বউ। তিন শিফটের মালকিন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের ছায়ায় বসে আছে ধর্মঘটী খালাসি, চালক। ইউনিয়ন নেতার ভারিক্কি ছেলে। ‘মাস্টারমশাই আশা করছি দু-একদিনের মধ‍্যে সব মিটে যাবে। ডিএম কথা দিয়েছেন ‘বলে চলে যায় ‘পথের সাথী’ বাসের মালিক। এক টুকরো ফরিদপুর চলে যায় লঘু বাথরুমে। উপন্যাস লিখতে এসে আপনি দেখছেন পাঁচ নম্বর সিটের মেয়েটি এখনো নামেনি।

পুনশ্চ বিবাহবাসর

মুখের জটিল ছায়ায় আমার আমন্ত্রণ। আজ কতদিন পর আমি হাসলাম। শুকনো পাতার মতো সীমাহীন চলে যেতে চাই। বহুদূরে অরণ‍্যসমিতি। তুমিও জানো এইসব কবিতার মেরামতি শুয়ে আছে বাসি বিছানায়। কোথাও দাঁড়াতে হবে। নদীর পাশে অবলুপ্ত ভাঙাচোরা চায়ের দোকান। একজন পাঠকের চোখের বিস্ময় অপরাধী করে রাখে সকাল বিকেল। মনে হয় তার শরীরের অবলুপ্ত ঘাম আমার উপমা নিঃসৃত। পাথর ফাটানো এই দুঃখরাতে আমাদের সব কথা পিঁয়াজের মতো প্রতারক। কোথাও যাব না শুধু যুদ্ধ হবে বালিশে বালিশে। অথচ প্রতিটি ভোরে খুঁজে পাই একটি মুখের অতিথি। রক্তের ভিতর ঢুকে পড়ে দু-একটি হাতের আঙুল।

আজ রবিবার । তোমার চুল পাওয়া যাবে ভাতের থালায়। গত রাতের হারিয়ে যাওয়া চোখের জলে ভরে উঠবে ডালের বাটি। আমি দেখি অক্ষরের প্রথম অসুখ তোমার সারা দেহে। এসো এইবার মেলে দিই লুকোনো ডানার হিসেব। শেষ ট্রেনের ফাঁকা কামরায় উঠে যাক বিবাহবাসর। সকালের বিশ্বাসযোগ্য এক ফুলে লেখা হোক পুনশ্চ বিবাহবাসর।হাইস্কুলের নতুন কেমিস্ট্রির মাস্টারমশাইয়ের ছায়া আজ কাঁদতে কাঁদতে ঢুকে পড়তে চাইছে আমাদের নিষিদ্ধ বাথরুমে।

বিকেলের মাঠ

চুলের ভিতর গড়িয়ে নামছে রাত। যেন আশ্রয়। যেন কাঁটাতার পেরিয়ে এসেছে অরণ্য। মানুষের হাতে এই বালির হৃদয়। তোমার উঠোন পেরিয়ে প্রতিবেশী যুবকের লাল সাইকেল ভেসে যায় একা একা দিগন্তের দিকে। মাঝপথে খেলা ভেঙে গেছে। এখন মাঠের পাশে সর্বস্ব বিকেল।শান্ত ঘাসের বিছানায় ঘামে ভিজে যায় অহেতুক শরীর। মাঝে মাঝে ব‍্যবহৃত কনডোম মুখে নিয়ে উড়ে যায় কাক। নাবালক বিস্ময়ের দেশে। বালকের অভিশাপ ম্লান হয়ে আসে।

তারপর শুরু হয় অঙ্কের ক্লাস। অবিবাহিত মাস্টারমশাইয়ের অন্তর্বাসের মতো বিষণ্ণ জ‍্যামিতি। খিদে পায়। শরীর চলে যেতে চায় হলুদ বাথরুমের দিকে। গোপনাঙ্গের ছায়া ভেসে ওঠে। বিকেলের ঘন মেঘে পরীক্ষার ভয়। ভয় বাবার রক্ত জল করা টাকার উপর। ভয় মেয়েটির সাদা ফ্রকের ভিতর লুকিয়ে আছে কতদিন। আজ বালিকা বিদ‍্যালয়ের পাশে অন্ধ এক ছোটোগলিতে মায়ের বেনারসী পড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে হাতেলেখা চিঠির হৃদয়। দু-হাতে দশটা ভয়ের আঙুল। ওগো পথ কোনদিকে দুপুরের ছায়া, উৎপাদন সেই বুকের ধুকপুক ফুটে আছে।

গোপালচরিত

গোপাল সন্দেহবাতিক। গোপাল অতিশয় ধূর্তমানুষ। নিজের স্ত্রীর নাভির নীচে প্রতিটি দাগ সে গুনে রাখে রোজ। বন্ধুদের কাছে যৌনপরামর্শ চায়। মাঝেমাঝে মেঘলা বিকেল হয়ে দেখে ফেলে মেয়েদের বিষণ্ণ বাথরুম। লেডিস হোস্টেলের হলুদ আলোর মাঝখানে হেঁটে যায় আচ্ছন্ন ময়ূরের মতো। স্বপ্নে প্রপিতামহ আদেশ দেন ‘গোপাল! বয়েস অনেক হল, এইবার যোনির দ্বার খুলে প্রবেশ কর।’ নদীর কাছে সে রেখে আসে এইসব চক্রান্ত।ভোরবেলার আখ‍্যান। মনে মনে অভিশাপ দেয় নিজেকে। দেরাজ খুলে মিলিয়ে নেয় বংশপরম্পরা। শুধু একটা নষ্টভ্রূণ শিথিল করে দেয় তার বুকের উষ্ণতা। ভোররাতে ভাঙা ডানা, পালক তুলে দেয় অবলুপ্ত পুরুষের দেবতার হাতে। তারপর নাভির নীচে গুনে রাখে দাগ। আর প্রতীক্ষায় থাকে। নষ্টভ্রূণ বেরিয়ে গেলেই সে প্রবেশ করবে অন্ধ লালার গুহায়।

কে বলে গোপাল সন্দেহবাতিক! দু-একটি পুথির সঙ্গে সে শুধু মিলিয়ে দেখতে চায় জন্মের রহস্য। আর খোঁজে সেই পুরুষের গোপন শরীর যার ছলনায় সে জন্মেছে এক অসমাপ্ত বিকেল হয়ে রেলকলোনির মাঠে।

মাইলস্টোন

ওহে গ্রাম‍্যপথ, তোমার অলংকার চুরি করিয়া আমি বড়ো হইয়াছি। এখন ফিরাইয়া দিব মনস্থ করিলাম। এই নীচু জনপদ, ক্রীড়ারত বালকের দল তাহাদের দিকে সন্তর্পণে রাত্রি নামিয়াছে। উনোনে ধোঁয়ার লালসা। একটি হাঁসের বৈধব‍্য সূর্যাস্তে রঙিন। স্টেশনে নামিয়া দেখিলাম গুমটি ঘরে ইলেকট্রিক আলো জ্বলিয়াছে। সেইহেতু সস্তার চা পাঁচ টাকা। নিকটে বাজার। শুধু মানদাসুন্দরী দেখিবার সুযোগ পাইল না।
এখন ফিরাইয়া দিব সব। নটে শাকের সবুজ পুকুরের সব ঋণ জমা রহিয়াছে। ভাঙা রিক্সা বেচিয়া স্বর্গে গিয়াছে কয়েকটি নিরক্ষর ছোটোলোক। কুলি কামিনের দল ভিনরাজ‍্যে সংসার পাতিয়াছে। আজ তাই শীতলা প্রতিমার কদর নাই। অথচ ঋণ জমিয়াছে তিনদিনব্যাপী সামাজিক যাত্রাপালায়। কিছু অর্থ বন‍্যাত্রাণে গেল। ডাকঘরের লালবাক্সে অন্ধ চড়াই। তাহার পালক উড়িল আর আশ্চর্য ফ‍্যাকাশে হইয়া গেল পোস্টমাস্টারের মুখ। একদিন কমলা খাম আসিল। কলকাতা আসিল নিকটে। প্রাচীন তিনতলা বাড়ি জলের দরে ডুবিয়া গেল। এখন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির নিকটে জাগ্রত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি কুকুর। তাহাদের লেজে ছেঁড়া সহজপাঠের ছায়া পড়িয়াছে। শুধু সুদূর এই রেলপথখানি, তোমাকে কী দিব। তোমার চোখের জলে আমার টিকিটখানি ভিজিয়া গিয়াছে।

ধারাবাহিক

একটা মানুষের কথা বলতে এসে আমাকে পেরোতে হল ছক ভাঙা উপন্যাস— জটিল আখ‍্যানের রীতি ও পদ্ধতি। চরিত্র ছিটকে গেছে লবনাক্ত খাঁড়ির সন্দেহে। শুকনো পাতার তুমি কে হে? মুখের আগুন ভাষাতীত। আলো হাওয়ার দেশে বিকেলের মেঘ। তোমার কুমারী গর্ভে রেখে আসি প্রথমবিষাদ, শিয়াল- কুমীরের গতজন্মের বোঝাপড়া।

একটা মানুষের কথা বলতে এসে পেরোলাম শ‍্যাওলা উঠোন,খোলা বাথরুম। পলিথিনের ফাঁক দিয়ে রোদ্দুর পড়েছে বুকে পিঠে। দেখি খোলা স্তনের অবৈধ ছায়াসঙ্গম। সন্তান বিরহে অর্ধ উন্মাদের মতো বেরিয়ে আসে নপুংসকের তৃতীয় গৃহিনী। মনে মনে আগুনকে অভিশাপ দেয়। নবীন কিশোরের ভিজে গেঞ্জির বুকে এঁকে দেয় মাতৃপ্রবাহ।

সেই নদীটির কথা বলা হল। তার বালির গর্ভে মৃতপ্রায় মানুষের কথা। একদিন ভোরে ভেসে ওঠে লাশ, কচুরিপানা মাখা হলুদ যোনির ফসল। হে সাহিত্যসম্রাট, অপরাজেয় কথাশিল্পী সকল, বঙ্গসাহিত‍্যে উপন্যাসের ধারা, প্রণম‍্য শিল্প উৎপাদক আমার ধারালো শিশ্ন আজও পড়ে আছে অগাধ সমুদ্রের জলে।

বৈঠকখানা

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আগে জেনে নাও কেউ কিছু নিজস্ব দেয়নি তোমাকে। আমরাই জড়ো করি কাঠ ও আগুন। কড়ি ও বরগা গুনে শিখে নিই অন্ধ চড়ুইয়ের ভাষা। মনে মনে সুদূর এক ভঙ্গিমা প্রস্তুত হয়। বানিজ‍্য শেখাতে এসে তারা ঠিক দেখে নেয় জলের নাব‍্যতা। শুকনো পাতার প্রতিমা বলে আমাকে পোড়াও। দেহ পোড়ে। পুড়ে যায় বিগত জীবনের অনিবার্য কবিতার পাতা। ভস্মের উপর জেগে থাকে ঈর্ষা পাজামার ফুল।দিকে দিকে ধ্বনি ওঠে যুগান্তকারী প্রতিভার। আষাঢ় শ্রাবণে ওড়ে গ্রন্থকীট শ্রোতাপুত্তলিকা।চমৎকারিত্বের এই দেশে তোমার জীবন জুড়ে জোঁকের ছায়ার মতো ছলনার আদিগন্ত সেতু। মহৎ কিরাতের জাল। নীচু মাথার ছায়া নিমগাছের আড়ালে। শিকারীর পিছুপিছু ছুটছে শিকার। ধূসর অন্ধকারে নাবালক জীবনের ছোটোখাটো মুগ্ধতা, কথায় কথায় শিহরণ। ছদ্মবেশী পায়ে আজ জুতোর বিদ্রোহ। কবন্ধপ্রতিমার সমস্ত শরীর জুড়ে লক্ষ লক্ষ হাত— কোথাও প্রণামের দৃশ‍্যমানতাটুকু নেই।
কৃতজ্ঞতা জানাতে এসে শুধু দেখা হল মহৎ মানুষের মায়াবী আঙুল, অবদমিত এক লালার বিগ্রহ।

অবদমিত

এই যে ‘দেশ’ পত্রিকা বুঝতে পারছে না আমি কত বড় কবি সে কি আমার দোষ? হলুদ বই পড়ে না দাঁড়ালে তুমি বল শাহরুখ হতে। হবে না থ্রি এক্স, হার্ডকোর চাই। কামধেনু, শাস্ত্রমতে পরিত্রাণ নেই। আমি সেন্টিমেন্টাল বাঙালি পুরুষ। বুকের মধ‍্যে অবলুপ্ত পুরুষের খড়ের বিছানা। তবুও নদীমাতৃক পুরুষের সন্তান এসেছে পৃথিবীতে। সমকামী অক্ষরে লেখা হল শুদ্ধ ছন্দে কাব‍্যনাটিকা। ঘুমের ভিতরে কাথা পালটে টের পাই টনটন উথলে ওঠে দুধ। অগ্রন্থিত কবিতার অভিশাপে ছোটো হয়ে এসেছে শহর। আমি কি যুগান্তকারী কবি নই? আমি কি পিতা নই দুখজাগানিয়া? শালুক ফুলের গর্ভে পৃথিবীতে এসে আমি কি তৃতীয় শ্রেণির গীতিকার? চিঠি লেখ। উত্তর দাও। হোস্টেল ফেরত মেয়েকে বোঝাও বান্ধবীর ভালোবাসা দিদিমণিকে বলা কত অপরাধ। আশ্চর্য এক সাধুর কাছে চলো যাই। গাছে ঢিল বাঁধি। মনস্কামনা পুকুরে স্নান করি লজ্জাহীন। তারপর স্বেচ্ছাবন্দী মানুষটির ছুটি। তোমার উপাসনাগৃহে ঝাড়বাতির ছায়ায় মুখ থুবড়ে শুয়ে থাকব আমি। পরজন্মে যৌনদাসী হব।

Facebook Comments

পছন্দের বই