লেখক নয় , লেখাই মূলধন

প্রীতম বসাকের কবিতা

আমার কবিতা

তিষ্ঠ ক্ষণকাল

তোমার অভিজ্ঞতার পাশে একটা কমলালেবু কতটুকু চোখের জল হয়ে উঠতে পারে। যে-কোনো উপন্যাসের শেষ পাতা পড়ে ফেলা যার অভ্যাস তাকে আর কতটা আহা দিতে পারে পাইন বনের ময়ূর। একবার গল্ফ খেলার বল হাতে নিয়ে তার সহ্যশক্তির পরীক্ষা করে বুঝেছিলাম মানুষকে কিছু নমনীয় হওয়া দরকার। তাহলে হাসিদের সঙ্গে খানিকটা মত বিনিময় করা যায়। এই যে বাবা মানেই পাহাড় হতে চাওয়া এর কোনো সত্যি মিথ্যা নেই। মেঘও হওয়া যায়। দূর থেকে যে গাছকে রাশভারি মনে হয়। গা ছমছম মনে হয়। তার ভেতরও ভেঙে পড়ার মতো অনেক জল ছিল কিনা কে জানে। বালক তাকে কমলালেবু ছাড়াতে দেয়নি কোনদিন!

***

দাঁড়াও পথিকবর

ঘুমের ভেতর এসে দাঁড়ালো মেঘের কাছিম। দেখো বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেওয়া মাত্র মাছেরা কেমন প্রজননের টিকিট কাটছে। কতদিন আগে তুমিও মা হয়েছিলে সেই কথা মনে হয় তোমার! আর কলস খলবল করে ওঠে সহাস্য বেদনায়। এই যে তুমি তোমার পাশে এসে দাঁড়ালে আর কোথাও নড়ে উঠল আনন্দ ! এটুকু পেতে হলে গাছ লাগাতে হয় পঁচিশে বৈশাখের মাঠে। প্রতিটি মুহূর্ত ছোটোগল্পের। ছোটো হাসি ছোটো কান্নার। ক্ষণিক দাঁড়াও। আর তুলে নাও বাটিতে।

***

দুঃখ করো অবধান

রান্না করার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে সংসারে কেউ বড়ো নয়! ওই যে বালক আট লাইন কবিতা মুখস্থ করতে দু’বার উঠে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরল ওটুকুর দরকার আছে। ওখান থেকেই উপনিষদের প্রথম পাঠ শুরু হয়। বাসন মাজতে মাজতে বুঝেছি শ্রম না থাকলে কমে যায় ঘুমিয়ে পড়ার আনন্দ। হাতিশালে হাতি হল ঘোড়াশালে ঘোড়া। তখন কান্নার জন্য পাখি ফেটে যায়। দুঃখ পেতে চেয়ে নদ ও নদী ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় নিজেদের জল।

***

স্মৃতির গন্ধে ঘুম আসে না

পাখি এসেছিল আর পাখি উড়ে গেছে। দুটো দৃশ্যের মাঝে আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র। আশাকর্মীর বেগুনি দুঃখ। গ্রামীণ ডাকঘর থেকে হারিয়ে যাওয়া চিঠি যখন এসে পৌঁছাল তখন সার্কাসের তাঁবু চলে গেছে শহরের হাসপাতালে। তুমি গিয়েছিলে কোনোদিন! তার স্মৃতি হেঁটে যায় কালভার্টের জল অবধি। মানুষের গন্ধ যে কত যুক্তিহীন ভাবে সংক্রমণ ঘটায়! দেখো এই এত রাতে স্নান করছে কার আত্মা! ধুয়ে দিতে চাইছে গাছের কপালে লেগে থাকা পোস্টমর্টেম!

***

অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল

ধরে নাও মাটির ক্ষমতা এক্স। আর তুমি যে বছরে চারবার পেট করে দিচ্ছ তাতে তোমার সন্তান কতটা পুষ্টি পেল দেখাও। আহা স্বচ্ছতোয়া শ্যালোমেশিন তোমার অসীম সারল্য নিয়ে আমি বন্ধুর বাড়িতে নবান্ন রেখে আসি। কিন্তু জানি চালের ভেতর কোথাও মা নেই। দেখো কী মেধাবী গরল, নদীতটে শুয়ে থাকা তরমুজ। আহা লাল যোনি যেন ফুটে আছে জ্যোৎস্নায়। কিংবা কালো মেয়ের ছড়ানো স্তনও ভাবতে পারো। ভাবতে পারো একটা কর্কট ঘুমিয়ে আছে জেগে ওঠার অপেক্ষায়।

Facebook Comments

পছন্দের বই